মে দিবসের রচনা,অনুচ্ছেদ [ PDF Download ] | শ্রমিক দিবস রচনা

মে দিবসের রচনা,অনুচ্ছেদ [ PDF Download ] | শ্রমিক দিবস রচনা


 আসছালামু আলাইকুম সম্মানিত পাঠকবৃন্দ সবাইকে আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আসা করি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। প্রিয় পাঠক আজকে আমরা তোমাদের মে দিবসের রচনা,অনুচ্ছেদ  ~ শ্রমিক দিবস রচনা শেয়ার করবো। মে দিবসের রচনা পরীক্ষা সহ ভিবিন্ন প্রতিযোগিতায় এসে থাকে। আসা করি যারা মে দিবসের রচনা খুজতেছেন তোমাদের উপকারে আসবে। 


   
       

    মে দিবসের রচনা 

    বন্ধুরা নিচে মে দিবসের রচনা সম্পূর্ণ তুলে ধরা হলো আসা করি তোমাদের উপকারে আসবে:-

    ভূমিকা

     প্রতিবছর মে মাসের প্রথম তারিখে বিশ্বব্যাপী পালিত ঐতিহাসিক দিবসটি 'মে দিবস' নামে পরিচিত। শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দুর্বার আন্দোলনের রক্তস্রোত স্মৃতি বিজড়িত এই মে দিবস। শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শ্রমিকদের প্রতি অবিচারের অবসান ঘটাবার সুতিকাগার বলা হয় মে দিবসকে। প্রায় দেড়শত বছর আগে শ্রমিকদের মহান আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় শ্রমজীবী মানুষের বিজয়ের ধারা। সেই বিজয়ের ধারায় উদ্ভাসিত বর্তমান বিশ্বের সকল প্রান্তের প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষ। এরই ধারাবাহিকতায় সারাবিশ্বে প্রতি বছর উদযাপিত হয়ে আসছে মহান মে দিবস।

    মে দিবসের ইতিহাস

     কর্মঘন্টাকে আট ঘন্টায় নামিয়ে আনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মে দিবসের জন্ম কাহিনী। মূলতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই এই আন্দোলনের সূচনা। গোড়ার দিকে যদিও মজুরি বাড়ানোর দাবীতেই আন্দোলন শুরু হয়। ১৮০৬ সালে ফিলাডেলফিয়াथ জুতা শ্রমিকরা যখন ধর্মঘট করে তখন তাদের কর্মঘন্টা ছিল প্রতিদিন প্রায় ২০ ঘন্টা। ১৮২০ থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত কর্মঘন্টা কমাবার জন্য অসংখ্য ধর্মঘট হয়। ১৮২৭ সালে দৈনিক দশ ঘন্টা কাজের নিয়ম চালু করার দাবীতে মেকানিকদের উদ্যোগে ফিলাডেলফিয়ায় গঠিত হয় বিশ্বের প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন। ১৯৫০ সাল থেকে পরবর্তী সময়ে শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ার উদ্দীপনা বাড়তে থাকে।

    ১৮৬৬ সালে বাল্টিমোরে ষাটটি ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা মিলিত হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম শ্রমিক ফেডারেশন 'ন্যাশনাল লেবার ইউনিয়ন", যা সে বছরই দৈনিক আট ঘন্টা কাজের প্রস্তাবটি গ্রহণ করে। একই বছর ১ ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল এর জেনেভা কংগ্রেসেও প্রস্তাবটি গৃহিত হয়।

    ১৮৮৪ সালে আট ঘন্টা কাজের দাবীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয় আন্দোলন, যার সঙ্গে মে দিবসের জন্ম সরাসরি জড়িত। ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার ১ মে তারিখ থেকে দৈনিক আট ঘন্টা কাজের প্রস্তাবটি গ্রহণ করে আন্দোলন গড়ে তোলে। সে বছর আট ঘন্টা কাজের দাবীতে সকল শ্রমিক ধর্মঘট করে বের হয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। ধর্মঘটের কেন্দ্র ছিল শিকাগো।

    ১৮৮৬ সালের ১ মে তারিখে শিকাগোতে শ্রমিকদের এক বিশাল সমাবেশ হয়। আন্দোলনের ডাকে সকল শ্রমিক কাজ বন্ধ করে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে এর আগে শ্রেণী সংহতি। প্রকাশের এত বলিষ্ঠ প্রকাশ আর দেখা যায় নি। সে দিন আট ঘন্টা আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে।

    ৩ মে শিকাগোর ম্যাককমিক ফসল কাটার কারখানায় ধর্মঘটী শ্রমিকদের সমাবেশের ওপর পুলিশের আক্রমনে নিহত হন চার শ্রমিক। পরদিন হে মার্কেটে এর প্রতিবাদে সমাবেশস্থলে অজ্ঞাতনামা কারও বোমার আঘাতে এক পুলিশ সার্জেন্টের মৃত্যু, এরপর লড়াইয়ে আরও চার শ্রমিক আর সাত পুলিশের মৃত্যুতে উন্মাদ হয়ে ওঠে পুলিশ বাহিনী। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হে মার্কেট চত্তর রক্তে রঞ্জিত করে। এরপর প্রহসনের বিচারে ফাঁসির মঞ্চে নির্বিচারে প্রাণ দেন সংগ্রামী শ্রমিক নেতারা। জন্ম হয় এক মহান বিপ্লবের।

    মে দিবসকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক শ্রেণীর সংহতি দিবস হিসেবে উন্নীত করার পেছনে ২ সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল এর রয়েছে অনন্য অবদান। ১৮৮৯ সালে সংগঠনটির প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। প্যারিসে। ঐ কংগ্রেসেই ১ মে তারিখটিকে বিশেষ দিবস হিসেবে উদযাপনের জন্য চিহ্নিত করা হয়, যা প্রতি বছরই শ্রমজীবী মানুষের একটি মহান দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে।


    আন্তর্জাতিক মে দিবসঃ শ্রমিক নেতাদের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ১৮৮৯ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে মে দিবসকে আর্ন্তজাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর মাধ্যমে প্রথম বারের মতো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করে রক্তঝরা মে দিবস। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৮৯০ সালের ১ asy মে বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক মে দিবস পালন করা হয়। সেই থেকে আজ অবধি মে দিবস সারাবিশ্বে পালিত হয়ে আসছে।

    মে দিবসের প্রস্তাব

     মে দিবস আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর শ্রমিক শ্রেণির মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের উপর এ দিবসের প্রভাব সুদূর প্রসারী। এর প্রভাবে শ্রমিকদের কাজের দৈনিক সময় ১৮ ঘণ্টা থেকে নেমে আসে ৮ ঘণ্টায়। বিশ্বের সব দেশের শ্রমিকরা এর মাধ্যমে তাদের শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা পেতে শুরু করে। নিজেদের অধিকার আদায়ে তারা এগিয়ে যায় সামনে। মেহনতি মানুষ মুক্তি পেতে শুরু করে তাদের শৃঙ্খলিত জীবন থেকে। বিশ্বের ইতিহাসে সংযোজিত হয় সামাজিক পরিবর্তনের আরেকটি নতুন অধ্যায়।

    মে দিবস ও শ্রেণি বৈষম্যের বিলোপ

     মে দিবস হচ্ছে গোটা শ্রমজীবী সমাজের বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচনা করার দিন। শ্রেণিবৈষম্যের বেড়াজালে যখন তাদের জীবন বন্দি ছিল তখন মে দিবসের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে খুলে যায় তাদের শৃঙ্খল। এর ফলে আস্তে আস্তে লোপ পেতে লাগলো সমাজের শ্রেণিবৈষম্য। পুঁজিবাদীদের আগ্রাসী দংশন থেকে রেহাই পেল হাজার হাজার শ্রমিক। বৈষম্য ও শোষণমুক্ত একটি সমাজ গোটা বিশ্বকে উপহার দিল এই মে দিবস। মালিকপক্ষের সাথে শ্রমিকের যে উঁচু-নিচু সম্পর্ক ছিল তা এক সময় সমতলে চলে আসলো একমাত্র মে দিবসের স্বীকৃতির ফলেই।

    মে দিবস ও পুঁজিবাদী দাসত্বমুক্তি

     মে দিবসকে বলা যায় পুঁজিবাদী দাসত্ব থেকে শ্রমিকদের মুক্তি লাভের সনদ। পুঁজিবাদীরা এক সময় শ্রমিকদেরকে নিজেদের দাস হিসেবে ব্যবহার করার হীন প্রবণতা প্রকাশ করতো। শ্রম বিপ্লবের পর মে দিবস যখন প্রতিষ্ঠা লাভ করলো তখন এই দাসপ্রথার বিলুপ্তি ঘটলো। শ্রমজীবীরা এর মাধ্যমে এক নতুন জীবন লাভ করলো, যা তাদেরকে কিছুটা হলেও স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ করে দিল। মে দিবসের প্রতিষ্ঠার ফলে পরবর্তীতে কোনো পুঁজিবাদী যেনো শ্রমিকদের সাথে দাসত্বমূলক আচরণ করার প্রয়াস পায়না।"

    মে দিবসের তাৎপর্য

     বর্তমান শ্রেণি বৈষম্যহীন সভ্য সমাজের বর্তমান শ্রেণি । ভিত্তি গড়ে দিয়েছে মূলত ১৮৮৬ সালের সেই শ্রম আন্দোলন এবং মে দিবসের জন্ম বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে তাই মে দিবসের তাৎপর্য ব্যাপকভাবে সমাদৃত। সারা পৃথিবীজুড়ে শ্রমিক আন্দোলন ও মুক্তির সংগ্রামের মহান ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ মে দিবস। সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী অমানবিকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করার মন্ত্র বিশ্ববাসীকে শিখিয়ে দিয়েছে এই দিবস। মে দিবসের কারণে শ্রমিক শ্রেণির চিন্তা ও চেতনায় বৈপ্লবিক উন্নতির উদয় হয়েছে। তাদের সংগ্রামী চেতনার আলোয় আলোকিত হয়েছে পুরো মানবসমাজ। শ্রমিক শ্রেণির সামনে উন্মোচিত হয়েছে এক নতুন দিগন্ত। শ্রমিক সংহতি ও ঐক্য হয়েছে আরো বেশি দৃঢ় ও মজবুত। মে দিবস সমাজ থেকে দূর করতে সক্ষম হয়েছে কলুষিত ও বিভীষিকাময় অন্ধকার।

    বিশ্বব্যাপী মে দিবস উদযাপন

    ১৮৮৯ সালের প্যারিস সম্মেলনে দেশে মে স্বীকৃতির পর থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মে দিবস উদযাপন শুরু হয়। ১৮৯০ সালে গ্রেট ব্রিটেনের হাউড পার্কে বিশাল সমারোহে উদযাপন করা হয় প্রথম আন্তর্জাতিক মে দিবস। যুক্তরাষ্ট্রেও প্রথম মে দিবস পালন করা হয় একই বছর। ফ্রান্সে দিবসটি পালন করা হয় শ্রমিকদের বিশাল মিছিল ও সমাবেশের মাধ্যমে। রাশিয়ায় প্রথম ১৮৯৬ সালে এবং চীনে ১৯২৪ সালে আন্তর্জাতিক মে দিবস উদযাপন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পরে এই রীতি ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটি মহাদেশে। বর্তমানে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা ও ওশেনিয়া মহাদেশের প্রায় প্রতিটি উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত ছোট বড় সব দেশেই প্রতি বছর পালিত হয় আন্তর্জাতিক মে দিবস।

    বাংলাদেশে মে দিবস

     বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নয়নশীল দেশ। এই দেশে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা অনেক। বর্তমানে মে দিবসের সম্মানার্থে বাংলাদেশেও ১ মে সরকারি ছুটির দিন। এদিন শ্রমিকরা মহা উৎসাহ ও উদ্দীপনায় পালন করে মে দিবস। তারা তাদের পূর্বসূরীদের স্মরণে আয়োজন করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। শ্রমিক সংগঠনগুলো মে দিবসে আয়োজন করে নানা ধরণের সাংস্কৃতিক ও কল্যাণমুখী কর্মসূচীর। বাংলাদেশের শ্রমিকরা এদিন তাদের নিয়মিত কাজ থেকে সাময়িক অব্যহতি পেয়ে থাকে। আনন্দঘন পরিবেশে তারা উদযাপন করে মহান মে দিবস।

    উপসংহার

     ঐতিহাসিক মে দিবসের তাৎপর্যপূর্ণ অবদান আজকের শ্রমিক শ্রেণিকে আগলে রেখেছে। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামী চেতনা এখন শ্রমজীবীদের ভূষণ। ১৮৮৬ সালের রক্তঝরা সেই ১ মে এখন সবার কাছে অবিচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জোর সংগ্রামের শপথ গ্রহণের দিন। সামনে এগিয়ে যাওয়ার মূলমন্ত্র। মে দিবসে সকল শ্রমজীবী মানুষ তাদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করার মাধ্যমে উন্নয়নমুখী পরিবর্তন সূচনার অঙ্গিকারের প্রয়াস পায় ৷


    Tag:মে দিবসের রচনা,অনুচ্ছেদ,শ্রমিক দিবস রচনা

                                   
    Previous Post Next Post


    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com



    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com

    (সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Facebook এবং Telegram পেজ)