নারীশিক্ষা রচনা
সূচনা : নারী জাতি মানবসমাজের প্রায় অর্ধেক । কোনাে বিশেষ দেশ বা জাতির উন্নতি চাইলে সে দেশ বা জাতির উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন সে সমাজের মানুষ সম্পদে রূপান্তরিত হয় । তাই মানুষকে সম্পদে পরিণত করতে হলে নারীকেও এ সম্পদের আওতায় আনতে হবে । বিপুল সংখ্যক নারীকে শুধু গৃহলক্ষ্মী করে তাদের গৃহস্য কর্মের প্রশংসা করলে চলবে না , তাদের জন্য চাই উপযুক্ত শিক্ষা ।
নারীশিক্ষার অতীত : আমাদের দেশের নারীশিক্ষার অতীত খুব সহজ - স্বাভাবিক অতীত নয় । অন্তঃপুরবাসিনী বঙ্গনারী গৃহকোণেই গড়েছিল তার নিরাপদ আবাস । ধর্মীয় উচ্চমূল্যবােধ বলতে ঘরের বাইরে না আসাকেই বুঝত তারা । পুরুষের পক্ষপাতদুষ্টতার জন্য নারীসমাজ মুক্তির পথ দেখেনি বরং শাসন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে দুর্ভাগ্যকেই বরণ করতে হয়েছিল তাদের । কট্টরপন্থি ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্মের শাসনদণ্ড দেখিয়ে গৃহবাসকেই নারীর একমাত্র আবাস বলে চিনিয়ে দিতে পেরেছিল । নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে নারীসমাজ শিক্ষার আহ্বানে ক্রমশ সাড়া দিতে শুরু করেছিল অতি ধীরে । মুসলমান নারীদের জন্য একমাত্র বেগম রােকেয়া কিছুটা আলাে ছড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং তিনি নিজে ঘর থেকে বের হয়ে মুসলিম নারীদের সচেতন করার প্রয়াস চালিয়েছিলেন ।
নারীশিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা : শিক্ষাই জাতির উন্নতির মূল হাতিয়ার । এ হাতিয়ার পূর্ণাঙ্গ শক্তির হতে হলে প্রয়ােজন দেশের বিপুল পরিমাণ নারীকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করা । জাতীয় জীবনে পুরুষের মতােই নারীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ । নারীদের উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে রাখলে সুদক্ষ জনশক্তি হিসেবে তারা নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবে না , ফলে জাতীয় উন্নয়ন ব্যাহত হবে । একজন নারী একজন মাও বটে । শিক্ষিত মা সন্তানের জন্য বড় প্রাপ্তি । মা যদি উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হন তাহলে তার সন্তানদেরও উপযুক্ত রূপে গড়ে তুলতে পারেন ।
নারীর আত্মনির্ভরশীলতায় শিক্ষা : আত্মমর্যাদা বােধসম্পন্ন মানুষ মাত্রই আত্মনির্ভরশীল হতে চাইবে । নারী যদি তার আত্মসম্মানবােধকে অক্ষুন্ন রাখতে চায় তাহলে তার পক্ষে আত্মনির্ভরশীল হওয়া জরুরি । আর শিক্ষাই পারে একজন নারীকে আত্মনির্ভরশীল করতে । নারী উপার্জনক্ষম হতে পারলে তাকে অন্যের গলগ্রহ হতে হয় না । নারী শিক্ষা গ্রহণ করে পুরুষের সমকক্ষতা প্রমাণ করতে পারে । নিজ যােগ্যতার প্রমাণ রেখেই সে সম্মানজনক কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে , পরিবারে অর্থনৈতিক ভূমিকা পালন করতে পারে তাই নারীর আত্মনির্ভরশীলতায় শিক্ষা অন্যতম সহায়ক ।
নারী শিক্ষায় গৃহীত ব্যবস্থা : বিশ্বজুড়েই এখন নারী প্রগতির সম্প্রসারণ চলছে । আমাদের দেশের নারী এখনও বিশ্বের অন্যান্য দেশের নারীদের মতাে জাতীয় ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারছে না । উল্লেখ করার মতাে দু - একটি ক্ষেত্র বাদ দিলে এখনও নারীরা পিছিয়ে আছে বলেই প্রতীয়মান হয় । তাই নারীশিক্ষাকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করার জন্য , তাদের স্বাচ্ছন্দ্যময় পাঠ গ্রহণের জন্য স্বতন্ত্র নারীশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে । পাশাপাশি পুরুষদের সাথে নারীরাও যেন সমমর্যাদায় শিক্ষা লাভের সুযােগ পায় সেজন্য সহশিক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে । গ্রামীণ এলাকায় মেয়েদের শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলন করা হয়েছে । পাশাপাশি উপবৃত্তি প্রদানের মাধ্যমেও নারীর শিক্ষাগ্রহণকে সহজতর করা হয়েছে । ফলে নারীশিক্ষার হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
নারীশিক্ষা উন্নয়নে বেসরকারি উদ্যোগ : সরকার কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থার বাইরেও অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান , এনজিওসহ বিভিন্ন সংস্থা নারীশিক্ষার বিস্তারে পৃষ্ঠপােষকতা দিয়ে যাচ্ছে । অনেক এনজিও তৃণমূল পর্যায়ের মেয়ে শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।
নারীশিক্ষা ও জাতীয় উন্নয়ন : একটি দেশের জাতীয় উন্নয়নের সাথে নারীশিক্ষা ওতপ্রােতভাবে জড়িত । জাতীয় উন্নয়ন বলতে একটি জাতির সামাজিক উন্নয়নকে বােঝায় , আর নারীরা এ সামগ্রিকতার বাইরে থাকতে পারে । নারীশিক্ষা যত বেশি বিস্তৃত হবে নারীরা তত বেশি আত্মনির্ভরশীল হবে এবং জাতীয় উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখতে পারবে ।
উপসংহার : জাতির অগ্রগতির জন্য চাই স্বচ্ছন্দ গতি । আর এ গতি জাতির অর্ধেক জনসমষ্টি নারীকে অচল রেখে সম্ভব নয় । তাদের সচল হতে হবে , হতে হবে পুরুষদের সহযাত্রী । তবেই সম্ভব হবে জাতীয় উন্নয়ন আর । | এর পূর্ব শর্তই হচ্ছে নারীশিক্ষার উন্নতি ।
নারীশিক্ষার গুরুত্ব
Narishikkha Rochona
Tag: নারীশিক্ষা রচনা - নারীশিক্ষা, Narishikkha Rochona, নারীশিক্ষার গুরুত্ব, নারীশিক্ষা কি, নারীশিক্ষা অনুচ্ছেদ রচনা, রচনা - নারীশিক্ষা
Any business enquiry contact us
Email:-Educationblog24.com@gmail.com
(সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদেরGoogle News,FacebookএবংTelegram পেজ)