শিষ্টাচার রচনা - শিষ্টাচার | Sristachar Rochona

শিষ্টাচার রচনা - শিষ্টাচার, Sristachar Rochona, শিষ্টাচার কি, শিষ্টাচারের গুরুত্ব, শিষ্টাচার অনুচ্ছেদ রচনা, রচনা - শিষ্টাচার, শিষ্টাচার রচনার উক্তি

    শিষ্টাচার রচনা

    ভূমিকা : মানুষ দৈনন্দিন জীবনে কথাবার্তা , চাল - চলন , আহার - বিহার ও সার্বিক আচরণে যে শালীনতা প্রকাশ করে তা - ই শিষ্টাচার । মানুষ সমাজজীবনে বাইরের সৌজন্যবােধকে প্রকাশ করে নিজেকে মার্জিত ও বিনয়ী স্বভাবের ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় । প্রকৃতপক্ষে যারা কেবল কৃত্রিমভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে চায় তারা কপটচারী । পক্ষান্তরে , ভেতরে - বাইরে যে সমান মার্জিত ও বিনয়ী তার মধ্যে প্রকাশ ঘটে শিষ্টাচারের । বলা যায় , মানবের ভেতর সত্তার মার্জিত আচরণের বহিঃপ্রকাশ শিষ্টাচার । শিষ্টাচার মানুষের অন্যতম প্রধান গুণ । 

    শিষ্টাচারের স্বরূপ : শিষ্টাচারকে একক একটি গুণ না বলে একগুচ্ছ ভালাে গুণের সম্মিলন বলা যায় । একজন ব্যক্তি ভদ্র কিংবা অভদ্র , উদ্ধত নাকি শান্ত সবকিছুরই প্রকাশ ঘটে ব্যক্তিআচরণে । উদ্ধত ব্যক্তি নম্র আচরণে । অপারগ । সুতরাং তার পক্ষে শিষ্ট আচরণও সহজ কাজ নয় । মানব আচরণের মধ্য দিয়ে তার যথার্থ ব্যক্তিত্বকে নিরূপণ করা যায় । তাই ব্যক্তির আচরণের মধ্যেই শিষ্টাচারের স্বরূপ বিদ্যমান । মাথার চুল থেকে পায়ের নখ কাটা পর্যন্ত কাজেও শিষ্টতাকে চিনে নেওয়া যায় । ভদ্রোচিত চুল কাটা যেমন শিষ্টতার মধ্যে পড়ে তেমনি দুর্বিনীত আচরণ শিষ্টাচারের অঙ্গ হতে পারে না । সুরুচি , সকথা , পরিষ্কার - পরিচ্ছন্নতা , নম্র স্বরে কথা বলা মধ্যেও শিষ্টাচারের প্রকাশ ঘটে । মােটকথা , ব্যক্তির সর্বোত্তম আচরণই শিষ্টাচার । শিষ্টাচার সকলের মধ্যে বর্তমান থাকা বাঞ্ছনীয় । 

    শিষ্টাচার শিক্ষা : শিষ্টাচার শিক্ষার জন্য পরিবারই প্রথম এবং প্রধান শিক্ষালয় । পরিবারের বড়দের মধ্যে । শিষ্টাচারের অভাব হলে নতুন শিশুর পক্ষে শিষ্টাচার শেখা সম্ভব নয় । শিশুর প্রথম পাঠশালা তার পরিবার । শিষ্টাচার অর্জনের পাঠটি পরিবার থেকেই নেওয়া । শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই অনুকরণপ্রিয় । তাই তাদের চোখের সামনে যত শিষ্ট আচরণ করা যায় ততই তাদের আচরণে শুদ্ধতা আসে । শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিষ্টাচার শিক্ষা । দেওয়া হয় । গুরুজনের সাথে ছাত্রের আচার - ব্যবহার , সমাজের অন্যান্য ব্যক্তির সাথে তার আদব - কায়দা কেমন । হবে তা বিদ্যালয়েও শিক্ষা দেওয়া হয় । শিষ্টাচার শুধু শিক্ষা দেওয়ার বিষয় নয় একে নিজ গুণেও নিজের মধ্যে । ধারণ করতে হয় , তবেই নন্দিত ব্যক্তিত্বের স্ফুরণ ঘটে জীবনে । 

    শিষ্টাচারের গুরুত্ব : মানবজীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব অপরিসীম । শিষ্টাচার আছে এমন মানুষ সহজেই অন্যের মন জয় করতে পারে । ফলে সমাজে তাঁর গ্রহণযােগ্যতা বৃদ্ধি পায় । শিষ্টাচারপ্রবণ মানুষ বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে সবার মাঝে , সবাই তাকে সমাজের নেতৃত্বে দেখতে চায় । ফলে ব্যক্তির পক্ষে মহৎ কাজ করাও সম্ভবপর হয়ে ওঠে । শিষ্টাচারী ব্যক্তি সাধারণ মানুষের জন্য মডেল বা অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন । সমাজের মানুষ তাঁকে উচ অবস্থানে স্থান দেন । ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহম্মদ ( স . ) বিধর্মীদের মন জয় করেছিলেন শিষ্টাচার প্রদর্শনের মাধ্যমে । তাকে হত্যা করতে উদ্ধত হয়ে আসা ব্যক্তি তার শিষ্টাচারে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে— এখানেই শিষ্টাচারের একটি শক্তির পরিচয় মেলে । মানুষ প্রকৃতিগতভাবে অন্যের কাছ থেকে সদাচরণ আশা করে , প্রকাশ না করলেও মনে মনে স্নিগ্ধ ব্যবহার ও সামান্য প্রশংসা প্রত্যাশা করে । তাই ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির শিষ্টাচার সমাজে বয়ে আনে সাম্য ও শান্তি । তাই সামাজিক জীবনে শিষ্টাচারের প্রয়ােজনীয়তা ও গুরুত্ব অত্যধিক । 

    পারিবারিক জীবনে শিষ্টাচার : পারিবারিক জীবনে শিষ্টাচারের ভূমিকা অপরিসীম । যে পরিবারে শিষ্টাচার আছে তারা শান্তিময় জীবনযাপন করে । পরিবারে শিষ্টাচার আছে বলেই তারা একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল । ফলে পরিবারে কোনাে অনভিপ্রেত ঘটনার উদ্ভব হয় না । পক্ষান্তরে , শিষ্টাচারশূন্য পরিবার অশান্তির ঠিকানা । তারা শান্তিপ্রিয় জীবনে আগ্রহী হলেও শান্তি তাদের কাছে থেকে যায় অধরা । কেননা তাদের মধ্যে শিষ্টাচার নেই । ফলে উদ্ধত আচরণ দিয়ে তারা একে অন্যের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয় । পারিবারিক জীবনে যারা শিষ্টাচার চর্চা করে সমাজের অন্যান্য পরিবার তাদের ভালাে মানুষ হিসেবে গণ্য করে । একটি সম্রান্ত পরিবারে কোনাে অবস্থাতেই শিষ্টাচারের মতাে উৎকৃষ্ট গুণের চর্চা না হয়ে পারে না । তাই পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে । আমাদের হতে হবে শিষ্টাচারপ্রিয় । 

    ছাত্রজীবনে শিষ্টাচার : ছাত্রজীবন মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় । ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের মতাে উত্তম আচরণ নিজের স্বভাবধর্মে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে পরিণত জীবনে এর প্রতিফলন ঘটে । ফলে ব্যক্তিগত জীবন হয়ে ওঠে নান্দনিক । একজন শিষ্টাচারী ছাত্র সব শিক্ষক এবং সহপাঠী দ্বারা সমাদৃত হয় এবং বিদ্যালয়ে হয়ে ওঠে প্রিয়পাত্র । অন্যদিকে , অশিষ্টাচারী ছাত্র নিজে যেমন মন্দ অন্যের জন্যেও সে ক্ষতিকারক । সবাই তাকে অভিসম্পাত করে এবং তার জীবন হয় অর্থহীন । 

    শিষ্টাচারহীন জীবনের পরিণাম : শিষ্টাচারহীন জীবন মানে ঔদ্ধত্যপূর্ণ অহংকারী জীবন । সে জীবনে ভদ্রতার কোনাে স্থান নেই । যার মধ্যে শিষ্টাচার নেই , তার জীবনাচরণে মার্জিত কিছু আশা করা বৃথা । শিষ্টাচারবর্জিত । জীবন সমাজ , রাষ্ট্র সবার জন্যই অকল্যাণকর । যে জীবনে শিষ্টাচারের অভাব রয়েছে তাকে সবাই ঘৃণা | দৃষ্টিতে দেখে । সমাজে তার অবস্থান নিচে । অমার্জিত লােকের সাহচর্য কেউ কামনা করে না , এমনকি তার । পরিবারও তাকে এড়িয়ে চলে । যে জীবনের সাহচর্যকে কেউ গ্রহণ করে না তার মতাে দুর্ভাগা আর কে আছে । 

    উপসংহার : শিষ্টাচার অসংখ্য মানবিক গুণের সমষ্টি । এ গুণকে জীবনে ধারণ করতে হবে । শিষ্টাচারপূর্ণ জীবন মানুষকে অনেক উর্ধ্বে উথিত করে । সমাজের সর্বস্তরে মানুষ যদি এ গুণের অধিকারী না হয় তা হলে সত্য । সমাজের মানুষ হিসেবে মানুষের মর্যাদা , হ্রাস পায় । শিষ্টাচারী জীবনের গৌরব ধারণ করতে হলে দৈনন্দিন । জীবনের আচরণে শিষ্টাচারী হওয়া উচিত ।

    শিষ্টাচার রচনার গুরুত্ব


    Sristachar Rochona


    Tag: শিষ্টাচার রচনা - শিষ্টাচার, Sristachar Rochona, শিষ্টাচার কি, শিষ্টাচারের গুরুত্ব, শিষ্টাচার অনুচ্ছেদ রচনা, রচনা - শিষ্টাচার, শিষ্টাচার রচনার উক্তি
                                   
    Previous Post Next Post


    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com



    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com

    (সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Facebook এবং Telegram পেজ)