You can easily download all types of PDF from our website for free.Only we share all types of updated PDF. If there is any problem to download our PDF file, you can easily contact us and solve it. So without delay download your desired PDF file immediately.
আরো দেখুন
- বাংলাদেশের ৬৪ জেলার রমজানের ক্যালেন্ডার ২০২৪
- সেহরি ও ইফতারের দোয়া
- যাকাত দেওয়ার নিয়ম ২০২৪
- ১ ভরি স্বর্ণের যাকাত কত টাকা ২০২৪
- ১ লাখ টাকার যাকাত কত টাকা ২০২৪
- ফিতরা কত টাকা ২০২৪
- জন্ম নিবন্ধন সনদ ডাউনলোড করার নিয়ম
- ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করার নিয়ম
- অনলাইনে আইডি কার্ড বের করার নিয়ম
- পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ
- পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম
- পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজপত্র লাগে
একুশের চেতনা রচনা
ভূমিকা : বাঙালি জাতির অন্যতম প্রধান সৃষ্টি মহান একুশ । একুশ একটি চেতনা , একটি বৈশ্বিক প্রতীক , একটি মহাবিস্ফোরণ । ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে বাঙালির জীবনােৎসর্গের ঘটনা । গড়েছে এক অনন্য ইতিহাস । বাঙালি জাতিকে স্বতন্ত্র মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অমর একুশের রয়েছে । সীমাহীন অবদান । একুশের চেতনায় উজ্জীবিত আজ সারাবিশ্ব । একুশ আর কেবল বাঙালির জাতীয় ইতিহাস । নয় বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তা ভাষার মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে । একুশের এ বিশ্বজয় সমগ্র বাঙালি । জাতির গর্বের বিষয় ।
একুশের পটভূমি : একুশের রয়েছে গৌরবদীপ্ত ইতিহাস । বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতার ফসল আমাদের স্বাধীনতা । ১৪ আগস্ট , ১৯৪৭ - এ পাকিস্তান সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই বাঙালি জাতির চেতনায় বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের তরঙ্গ প্রবাহিত । পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এর রাষ্ট্রভাষা নিয়ে অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির অবতারণায় একুশে ফেব্রুয়ারির মতাে , কালজয়ী দিবসের জন্ম । তদানীন্তন পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী । ১৯৪৮ সালের ২১ শে মার্চ পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বলে ঘােষণা দেন । প্রতিবাদে ফেটে পড়ে পূর্ববাংলার ছাত্রসমাজ । ১৯৪৯ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ভাষার দাবি জোরালাে হয়ে ওঠে । ১৯৫২ সালের ২৬ শে জানুয়ারি তদানীন্তন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন জিন্নাহর ঘােষণার পুনরাবৃত্তি করলে সরকার ও ছাত্রসমাজের মধ্যে তুমুল লড়াই হয় । মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় পূর্ববাংলার মানুষ । '৫২ -র ২১ শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস ’ পালন ও সাধারণ ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয় । আন্দোলন দমন করার জন্য পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে জনসভা , মিছিল বন্ধ করে দেয় । ছাত্ররা সংগঠিতভাবে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল বের করে । এ মিছিলে নির্বিচারে গুলি , চালায় পুলিশ । শহিদ হন সালাম , বরকত , রফিক , শফিক , জব্বারসহ নাম না জানা অনেকে । শহিদের এ আত্মত্যাগ আন্দোলনকে আরও বেগবান করে । মাতৃভাষার দাবিতে রক্তাক্ত একুশের স্মৃতিকে ভাস্বর করার জন্য গড়া হয় শহিদ মিনার । যা আমাদের জাতীয় জীবনের গৌরবােজ্জ্বল ঐতিহ্য ।
একুশের চেতনায় স্বাধীনতার বীজমন্ত্র : মাতৃভাষার বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে বাঙালির প্রথম ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের বহিঃপ্রকাশ ঘটে বায়ান্নর ২১ শে ফেব্রুয়ারি । একুশের চেতনা আমাদের শেখায় আত্মত্যাগের মন্ত্র । এ চেতনায় উজ্জীবিত বাঙালি নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় । সেদিনের ভাষা আন্দোলন সময়ের দাবিতে ক্রমে রূপ নিয়েছিল স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে । ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম আসলে একুশের চেতনারই পরিণত রূপ ।
একুশের তাৎপর্য ; একুশ আমাদের কাছে কেবল ঐতিহাসিক দিন নয় , এর তাৎপর্য অনেক গভীর ও ব্যাপক । একুশ বাঙালির মন - মনন , চিন্তা - চেতনাকে স্বচ্ছতা , জাতীয় জীবনের দুর্দিন ও সংকটে যথার্থ পথ নির্ধারণের শিক্ষা দিয়েছে । পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর অত্যাচার , শােষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাতীয় চেতনায় সংগঠিত হতে একুশ আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছে । সর্বোপরি আমাদের সংস্কৃতি , ঐতিহ্য , মূল্যবােধ , জাতীয় স্বাতন্ত্র ও স্বাধীনতা নিয়ে বীরদর্পে বাচতে শিখিয়েছে ।
সাংস্কৃতিক বিকাশের চেতনা : বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশে একুশের রয়েছে অমূল্য অবদান । একুশ মূলত সাংস্কৃতিক আন্দোলন । আর আন্দোলনের সুর বাজিয়ে একুশ জাতীয় চেতনার মানসপটে নতুন । সংস্কৃতির জন্ম দেয় । নবচেতনা আর উদ্দীপনায় সৃষ্টি হয় শিল্প - সাহিত্য - সংস্কৃতি । আবদুল গাফফার চৌধুরীর কালজয়ী গান , ' আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাে একুশে ফেব্রুয়ারি , আমি কি ভুলিতে পারি'– একুশেরই ফসল । একুশের সংগ্রামী চেতনার মাধ্যমেই আমরা অর্জন করেছি আরও অনেক ঐতিহ্যসমৃদ্ধ গান । একুশের চেতনা আমাদের সাহিত্য অঙ্গনে ফেলেছে সুদূরপ্রসারী প্রভাব । একুশের প্রথম কবিতা মাহবুব উল আলম চৌধুরীর কাঁদতে আসিনি , ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি ' । একুশের অনবদ্য দলিল হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ' একুশে ফেব্রুয়ারি ' সংকলন । একুশের চেতনায় সৃষ্ট আরও অনেক সাহিত্যে ভরে আছে আমাদের অজান । প্রতি বছর একুশ উদযাপন উপলক্ষে প্রকাশিত হচ্ছে অজস্র সাহিত্য সংকলন ।
একুশের চেতনা ও বাংলা একাডেমি : একুশের সাংস্কৃতিক চেতনার অসামান্য ফসল ১৯৫৫ সালে বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠা । এরপর থেকে বাংলা একাডেমি প্রতিবছর অমর একুশে বইমেলা অনুষ্ঠানমালার আয়ােজন করে আসছে , যা আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে । বাংলা ভাষা , সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা , গবেষণা ও বিকাশে আমাদের জাতীয় জীবনে এ প্রতিষ্ঠানের অবদান অসামান্য ।
একুশের চেতনা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য : একুশের স্মৃতিকে ভাস্বর করার জন্য এবং ভাষা শহিদদের প্রতি সম্মান । প্রদর্শনের জন্য ১৯৫২ সালে নির্মিত হয় শহিদ মিনার । ১৯৫৩ সালে শহিদ দিবস উদ্যাপন করতে গিয়ে তখনকার প্রগতিশীল কর্মীরা কালাে পতাকা উত্তোলন , নগ্ন পায়ে প্রভাতফেরি ও সমবেত কণ্ঠে একুশের গান , শহিদদের কবর । ও শহিদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করেন । সেই থেকে এসব কর্মসূচি বাঙালির জাতীয় চেতনার নবজাগরণের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে । এখন এসব আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অজা ।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মােকাবিলায় একুশের চেতনা : বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ বাঙালি নস্যাৎ করেছিল পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর সকল চক্রান্ত । কিন্তু বায়ান্নর পরেও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিরুদ্ধে নয়া ঔপনিবেশিক শাসক - শােষকদের চক্রান্ত থেমে যায়নি । সে জঘন্য তৎপরতা উপলব্ধি করেই বেদনার্ত হৃদয়ে কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন :
এখন তােমাকে নিয়ে খেরার নােংরামি , এখন তােমাকে ঘিরে খিস্তি খেউড়ের পৌষমাস ! তােমার মুখের দিকে আজ আর যায় না তাকানাে , বর্ণমালা , আমার দুঃখিনী বর্ণমালা ।
এসব অপচেষ্টার মধ্যে ছিল বাংলা ও উর্দু মিলে একটা ভাষা তৈরি করা , বাংলা বর্ণমালা তুলে রােমান হরফে বাংলা প্রবর্তন করা , রবীন্দ্রনাথকে বর্জনের চক্রান্ত , রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধকরণ , নজরুল সাহিত্যকে খণ্ডিতকরণের । চেষ্টা , বাংলা সাহিত্যে জোরপূর্বক পাকিস্তানিকরণ প্রচেষ্টা ইত্যাদি । কিন্তু একুশের চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে সকল হীনচক্রান্তকে প্রতিহত করেছে আমাদের সাধারণ মানুষ ও প্রগতিশীল ছাত্র - শিক্ষক , বুদ্ধিজীবী , শিল্পী , সাহিত্যিকের বলিষ্ঠ প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ।
উপসংহার : একুশ আমাদের জাতীয় জীবনের যেকোনাে শুভ প্রয়াসের মূর্ত প্রতীক । সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশে একুশ আমাদের গৌরবােজ্জ্বল বীরত্বগাথা ও প্রেরণার উৎস । বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ একুশের চেতনা ও প্রেরণায় উজ্জীবিত এবং যেকোনাে জাতীয় সংকট ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সর্বতােভাবে ঐক্যবদ্ধ । একুশ আমাদের জাতীয় জীবনের অসাম্প্রদায়িক , গণতান্ত্রিক , প্রগতিশীল ও জাতীয় চেতনামূলক আন্দোলনের চালিকাকেন্দ্র । একুশের চেতনায় আমরা বারংবার উজ্জীবিত হয়েছি , পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ । তাই একুশের চেতনা হােক আমাদের অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দিক - নির্দেশক আলােকবর্তিকা ।
একুশের চেতনার গুরুত্ব
Ekusher Chetona Rochona
Tag: একুশের চেতনা রচনা - একুশের চেতনা, Ekusher Chetona Rochona, একুশের চেতনার গুরুত্ব, একুশের চেতনা কি, রচনা - একুশের চেতনা