আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম রচনা
বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাস পরিক্রমায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস বর্বরতার মুখে ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ শুরু হয় বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম । দীর্ঘ সংগ্রামের সফল পরিণতি ও পূর্ণতা আসে সে বছরেরই ১৬ শে ডিসেম্বর । এ দিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ৯৪ হাজার সৈন্য নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করলে মুক্তিযুদ্ধের অবসান হয় । পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নেয় একটি স্বাধীন দেশ —বাংলাদেশ ।
১৯৭১ - এর ২৫ শে মার্চ রাতে বাংলার ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালি সৈন্য থেকে শুরু করে অগণিত নিরীহ , অসহায় মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি আধুনিক সেনাবাহিনী । ট্যাংক , কামানসহ অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে বাঙালি নিধনযজ্ঞে মেতে উঠেছিল তারা । বাংলার সবুজ শ্যামল মাটি সিক্ত হয়েছিল নিরস্ত্র বাঙালির লাল রক্তে , নদীর স্বচ্ছ জলধারায় মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল রক্তধারা । যেখানে - সেখানে অগ্নিসংযােগ ও লুটপাট করে ধ্বংসপুরীতে পরিণত করতে চেয়েছে তারা এ জনপদকে । এ হিংস্রতা , এ বর্বরতা , এ অন্যায় আগ্রাসন মুখ বুঝে সহ্য করেনি বাংলার মানুষ । যার যা আছে তাই নিয়েই প্রতিরােধ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিনিয়ে এনেছিল । কাঙ্ক্ষিত বিজয় । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনাে ঘটনা নয় ।
১৯৪৭ - এর পর থেকে একের পর এক আন্দোলনের সিড়ি ডিঙিয়ে চূড়ান্ত ফসল হিসেবে এসেছে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় । '৫২ -র ভাষা আন্দোলন , '৫৪ -র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন , '৬২ -র সামরিক আইন ও শিক্ষা কমিশন রিপাের্টবিরােধী আন্দোলন , '৬৬ -র ছয় দফার আন্দোলন , '৬৯ -এর গণঅভ্যুত্থানেরই চূড়ান্ত পরিণতি '৭১ -এর মুক্তিসংগ্রাম । অমর একুশে ফেব্রুয়ারির পথ বেয়েই এসেছিল ১৬ ই ডিসেম্বর । একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ সাধারণ জনগণকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল মুক্তিবাহিনী । পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যেসব বাঙালি সৈন্য ছিল তারা এবং আধা - সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্যরাও তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তিবাহিনীর সাথে সংহতি প্রকাশ করে ।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানি সৈন্যরা ১৬ শে মার্চে গ্রেফতার করে । গ্রেফতারের পূর্বেই বঙ্গবন্ধু ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা ব্যাপক গণহত্যা চালায় ।
রাস্তায় যাকে দেখতে পায় তাকেই গুলি করে । হত্যা করে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলােতে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালায় । পুরােনাে ঢাকার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাসহ বহু আবাসিক এলাকায় আগুন ধরিয়ে দেয় , অসংখ্য মানুষ হত্যা করে , লুটপাট চালায় । ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের একক প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত । বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘােষণা দিয়ে যান । পরবর্তীতে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর নামে মেজর জিয়ার কণ্ঠে প্রচারিত হয় স্বাধীনতার ঘােষণা । সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যুত্থান । বিদ্রোহী বাঙালি ঝাপিয়ে পড়ে স্মরণকালের ইতিহাসের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে । ১৯৭১ সালের ১৭ ই এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে কুষ্টিয়ার মেহেরপুরে আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গঠিত হয় অস্থায়ী মুজিবনগর সরকার ।
এ সময় গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধ চালানাের সুবিধার্থে জেনারেল এম এ জি ওসমানীর তত্ত্বাবধানে সমগ্র দেশকে এগারােটি সেক্টরে বিভক্ত করা হয় । বাঙালিদের সংগ্রামের প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার সরকারের সমর্থন জ্ঞাপন করেন । অত্যাচারিত বাঙালিদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার জন্যে বাংলাদেশ - ভারত সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় । সীমান্তবর্তী ট্রেনিং ক্যাম্পগুলােতে মুক্তিযােদ্ধাদের ট্রেনিংও দেওয়া হতাে । বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করে ।
অন্যদিকে ভারত , সােভিয়েত ইউনিয়ন ও তাদের মিত্র দেশগুলাে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয় । ডিসেম্বরের শুরুতে পাকিস্তান ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে বিমান হামলা চালালে ভারত সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ কমাণ্ড গঠিত হয় । অবশেষে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ কমাণ্ডের কাছে ১৯৭১ - এর ১৬ ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ৯৪ হাজার সৈন্য নিঃশর্ত আত্মসমর্পন করে । এর মধ্য দিয়েই নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়েছে লাখাে শহিদের রক্ত , অগণিত মানুষের চোখের জল আর কোটি মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে । এ যুদ্ধে এক কোটি নিরপরাধ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে , ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহিদ হয়েছে , দুই লক্ষ বাঙালি নারী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছে ।
বাংলাদেশের একশ্রেণির লােক রাজাকার , আলবদর , আল শামস বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানিদের এ নৃশংসতাকে সমর্থন ও মদদ দিয়েছে । এ শ্রেণির সহায়তায় নৃশংসতম ও বর্বরােচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন বাঙালি শিক্ষাবিদ , সাহিত্যিক , বিজ্ঞানী , চিকিৎসক , সাংবাদিক , আইনজীবী , শিল্পী ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ । বাঙালিকে মেধাহীন করার জন্য এভাবেই পরিকল্পিত ও নীল নকশা অনুযায়ী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় ।
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাত থেকে শৰ করে ১৬ ই ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের আগ পর্যন্ত বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ চলে । বাঙালি জাতি উদ্বুদ্ধ হয়েছিল প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস আর গভীর দেশপ্রেমের চেতনায় । ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল । মিথ্যার বিরুদ্ধে শাশ্বত সত্যের এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রামের মূর্ত চিত্র । বিশ্ব ইতিহাসে বাংলাদেশের অভ্যুদয় তাই এক গৌরবােজ্জ্বল অধ্যায়।
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম বা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
Amader Sadinota Songram Rochona
Tag: আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম রচনা - আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, Amader Sadinota Songram Rochona, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম বিষয়াবলি, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম অনুচ্ছেদ রচনা, রচনা - আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম
Any business enquiry contact us
Email:-Educationblog24.com@gmail.com
(সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদেরGoogle News,FacebookএবংTelegram পেজ)