এসএসসি বাংলা ২য় পত্র ভাব সম্প্রসারণ সাজেশন ২০২৪ (১০০% কমন ৯ টি) -ভাবসম্প্রসারণ সাজেশন ssc 2024

এসএসসি বাংলা ২য় পত্র ভাব সম্প্রসারণ সাজেশন ২০২৪ (১০০% কমন ৯ টি) -ভাবসম্প্রসারণ সাজেশন ssc 2024


আসছালামু আলাইকুম সম্মানিত এসএসসি পরীক্ষার্থী বন্ধুরা তোমাদের এসএসসি পরীক্ষা ২০২৪ সামনে রেখে আমরা ধারাবাহিক ভাবে এসএসসি পরীক্ষার সাজেশন শেয়ার করবো। আজকে আমরা তোমাদের এসএসসি পরীক্ষার বাংলা ২য় পত্র গুরুত্বপূর্ণ ৯ টি ভাব-সম্প্রসারণ সম্পূর্ণ দেওয়া হলো। আসা করি এই গুলো পড়লে তোমাদের সকল বোর্ডের কমন আসবে। নিচে প্রতিটি ভাব-সম্প্রসারণ উত্তত সহ দেওয়া হয়েছে। সবাই ভালো করে মুখস্ত করে বুঝে নিবেন। 

     মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে

    মূলভাব : দুঃখ বিহীন জীবন অকল্পনীয়। দুঃখে নির্ভয় থাকা উচিত কারণ দুঃখের পরে আছে সুখের ঝর্নাধারা।

    সম্প্রসারিত ভাব : সুখ এবং দুঃখ নিয়েই মানুষের জীবনপ্রবাহ। সুখ-দুঃখ একই মালায় গাঁথা দু’টি ফুল। জীবনে কেবল সুখ কিংবা কেবল দুঃখ দিয়ে মানুষের ভাগ্যলিপি সাজানো নয়। জীবনে কখনো আসে দুঃখের অমানিশা, আবার সেই দুঃখের অমানিশা শেষে মাসে সুখের রাঙা প্রভাত । আবার সেই সুখও চিরস্থায়ী নয়। এভাবে দুঃখ-সুখের আবর্তনে সম্মুখে ধাবিত হচ্ছে মানুষের জীবনধারা। নিরবচ্ছিন্ন সুখ ভোগ করার সৌভাগ্য কারো নেই। তাই দুঃখ দেখে ভয় না পেয়ে দৃঢ়তা ও ধৈর্যের সঙ্গে দুঃখ উত্তরণের চেষ্টা করা উচিত। আলোকিত আকাশও কখনো কখনো মেঘে ছেয়ে যায়। ঘনকৃষ্ণ মেঘ গ্রাস করে উজ্জ্বল সূর্যটাকে। কিন্তু স্থায়ী হয় না সেই মেঘের বিস্তার। মেঘ কেটে গিয়ে একসময় সেখানে হেসে ওঠে সূর্যবৃত্ত। নিবিড় কালো অমানিশা বিলুপ্ত করে দেয় চাঁদের অস্তিত্ব। এ বিলুপ্তি সাময়িক। অন্ধকারের বুক থেকে আবার বেরিয়ে আসে জ্যোৎস্নামণ্ডিত চাঁদ। অনাবিল স্বচ্ছতা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। মানুষের জীবনও একই রকম। তা কখনো ঢাকা পড়ে দুঃখ-দৈন্য ও হতাশার মেঘ কিংবা অমানিশার অন্তরালে। দুঃখের শেষে সুখ আসে। তাই সমস্যা সংকুল জীবনে সুখ একদিন আসবেই।

    মন্তব্য : দুঃখ জীবনকেই মেঘের মতো আড়াল করে দাঁড়ালেও দুঃখ দেখে নির্ভয় থাকতে হবে এবং দুঃখ জয়ের জন্য সচেষ্ট হতে হবে।


    মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে বয়সের মধ্যে নয় 

    ভাব-সম্প্রসারণঃ সময় অনন্ত, জীবন সংক্ষিপ্ত। সংক্ষিপ্ত এ জীবনে মানুষ তার মহৎকর্মের মধ্য দিয়ে এ পৃথিবীতে স্মরণীয় বরণীয় হয়ে থাকে। আবার নিন্দনীয় কর্মের ফলে এই জগতে সে বেঁচেও মরে থাকে। কেননা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তাকে ভালােবাসে না। সমাজ, দেশ ও জাতি তাকে শ্রদ্ধা করে না, স্মরণ করে না। তার মৃত্যুতে কারও কিছু যায় আসে না। 

    মানুষ মাত্রই জন্ম-মৃত্যুর অধীন। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করলে একদিন তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এটা চিরন্তন সত্য। মৃত্যুর মধ্য দিয়েই সে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেয়, কিন্তু পেছনে পড়ে থাকে তার মহকর্মের ফসল। যে-কর্মের জন্যে সে মরে যাওয়ার পরও পৃথিবীতে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকে। কৃতকর্মের জন্যেই কারাে কারাে নাম পায় মহিমা, উত্তর-পুরুষের কাছে হয় স্মরণীয়। মহকর্মের জন্যেই তারা এই পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকেন। এমন ব্যক্তিই মানবসমাজে ধন্য বলে বিবেচিত। মানুষের জীবনকে দীর্ঘ বয়সের সীমারেখা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। জীবনে কেউ যদি কোনাে। ভালােকাজ না করে থাকে তবে সে জীবন অর্থহীন, নিষ্ফল। সেই নিষ্ফল জীবনের অধিকারী মানুষটিকে কেউ মনে রাখে না। নীরব জীবন নীরবেই ঝরে যায়। পক্ষান্তরে, যে-মানুষ জীবনকে কর্মমুখর করে রাখে এবং যার কাজের মাধ্যমে জগৎ ও জীবনের উপকার সাধিত হয় তাকে বিশ্বের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। সেই সার্থক মানুষের কাজের অবদান বিশ্বের বুকে কীর্তিত হয়ে কৃতী লােকের গৌরব প্রচারিত হতে থাকে। কীর্তিমান ব্যক্তির যেমন মৃত্যু নেই, তেমনি শেষও নেই, কারণ এ পৃথিবীতে সে নিজস্ব কীর্তির মহিমায় লাভ করে অমরত্ব। কীর্তিমানের মৃত্যু হলে তার দেহের ধ্বংসসাধন হয় বটে, কিন্তু তার সৎকাজ এবং অম্লান কীর্তি পৃথিবীর মানুষের কাছে তাকে বাঁচিয়ে রাখে। তাঁর মৃত্যুর শত শত বছর পরেও মানুষ তাঁকে স্মরণ করে। তাই সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা কৰ্ম-সাফল্যের ওপর নির্ভরশীল। একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে মানুষ পৃথিবীতে আসে এবং সে সময়সীমা পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে বিদায় নেয় পৃথিবী থেকে। এ নির্দিষ্ট সময়সীমায় সে যদি গৌরবজনক কীর্তির স্বাক্ষরে জীবনকে মহিমান্বিত করে তুলতে সক্ষম হয়, মানবকল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করে, তবে তার নশ্বর দেহের মৃত্যু হলেও তার স্বকীয় সত্তা থাকে মৃত্যুহীন। গৌরবােজ্জ্বল কৃতকর্মই তাকে বাঁচিয়ে রাখে যুগ থেকে যুগান্তরে। পৃথিবীর জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিগণ তাদের গৌরবজনক কীর্তির জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ‘ঠাকুর’ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং ঐ পরিবারের সকলকে ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠেছে তার নাম। তার আসনে অন্য কেউ বসতে পারে নি। তার কৃতকর্মই তাকে মানুষের হৃদয়-কোঠায় স্থান করে দিয়েছে। আবার জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও কর্মের মাধ্যমে চির জাগরূক হয়ে আছেন আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায়। সম্রাট নাসিরুদ্দিন প্রথম জীবনে একজন ক্রীতদাস ছিলেন। জর্জ ওয়াশিংটন একজন সামান্য কৃষকের ঘরে জন্মগ্রহণ করে স্বীয় কর্মবলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। নেপােলিয়ান বােনাপার্ট, শেরশাহ নিতান্তই সাধারণ ঘরের সন্তান ছিলেন। তথাপি নিজ ক্ষমতাবলে নেপােলিয়ান ফ্রান্সের অধিকর্তা হয়েছিলেন। আর শেরশাহের কথা বলাই বাহুল্য। ইতিহাসের পাতায় এরূপ শতসহস্ৰ মহাপুরুষের উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে। যারা তাদের নিজ কর্মগুণে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পেরেছেন। 

    মানুষের দেহ নশ্বর কিন্তু কীর্তি অবিনশ্বর। কেউ যদি মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করে, তবে মৃত্যুর পরেও তার এ কীর্তির মধ্য দিয়ে মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় চিরকাল বেঁচে থাকে।


    বার্ধক্য তাহাই যাহা পুরাতনকে, মিথ্যাকে, মৃতকে আঁকড়িয়া পড়িয়া থাকে ভাবসম্প্রসারণ

    মূলভাব : সাধারণত বয়সের মাপকাঠিতে তারুণ্য ও বার্ধক্যের পরিমাপ করা হলেও বার্ধক্যের প্রকৃত নির্ধারক বয়স নয়। কেবল বয়সের আধিক্যেই মানুষ বৃদ্ধ হয় না।

    সম্প্রসারিত ভাব : এ পৃথিবীতে এমন অনেক তরুণ আছে যারা বয়সে তারুণ্যের অধিকারী হয়েও আচার-আচরণে, অন্ধ-বিশ্বাসে ও কর্মবিমুখতায় বৃদ্ধের সমতুল্য। পক্ষান্তরে, এমন অনেক বৃদ্ধ রয়েছেন যারা মনের দিক থেকে তারুণ্যের তেজোদীপ্ততায় ভরপুর। সুতরাং, যারা গতানুগতিক ভাবধারা ও জরাজীর্ণ পুরাতনকে, কুসংস্কারকে, মিথ্যাকে আঁকড়ে ধরে দিনাতিপাত করে তারা যে বয়সেরই হোক না কেন তারা বৃদ্ধ। এরা জীবনের মোহমায়ায় তারুণ্যের শঙ্কাহীন অভিযানে অংশগ্রহণ করে না। সমাজ ও সংস্কৃতির যুগোপযোগী পরিবর্তনকে এরা স্বাগত জানাতে জানে না। নব সূর্যের সোনালী ঊষা এদের কাম্য নয়। তাই এরা প্রত্যুষেও দ্বার রুদ্ধ করে নিদ্রায় আচ্ছন্ন থাকে, অর্থাৎ নতুন সংস্কারকে এড়িয়ে চলে। নতুনের কেতন উড়িয়ে ভুবন জয়ের পথে পাড়ি জমাতে পারে না। আধুনিকতার সাথেতাল মেলাতে অক্ষম। এরা শতাব্দীর অগ্রযাত্রায় আগুয়ান জনতার কাফেলায় কুচকাওয়াজ করতে জানে না, তারা আলোর পিয়াসী নয় বরং বিভিন্ন কুসংস্কারে বিশ্বাসী। কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে তারা যেতে নারাজ।


    মন্তব্য : তাই তারা সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে উঠে না। সুতরাং বয়স তাদের যাই হোক তারা বাধ্যক্যের কংকালমূর্তি।

    গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন।নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়ােজন

    মূলভাব

    মলাটবদ্ধ নির্জীব বিদ্যা মানুষ আত্মস্থ না করলে তা যেমন অর্থহীন, তদ্রপ সম্পদ নিজের করায়ত্তে না থাকলে তাও নিরর্থক।

    সম্প্রসারিত ভাব

    বিদ্যা ও ধন মানবজীবনের অতি প্রয়ােজনীয় অমূল্য সম্পদ। সাধনা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষকে এগুলাে অর্জন করতে হয়। বিদ্যা মানুষের অজ্ঞানতা দূর করে, শাশ্বত সুন্দরের পথ নির্দেশ করে, ব্যক্তিকে করে তােলে আত্মনির্ভরশীল, সংযমী ও আদর্শবান।। কিন্তু বিদ্যা যদি অর্জিত না হয়ে গ্রন্থের ভেতরেই মলাটবদ্ধ হয়ে নির্জীব পড়ে থাকে, তবে সে বিদ্যা মূলত বিদ্যাই নয়। অনুরূপভাবে নিজের অর্জিত ধন-সম্পদ যদি অন্যের কাছে রক্ষিত থাকে, তাহলে তাও সময় মতাে, প্রয়ােজন মতাে কাজে লাগানাে যায় না।

    গ্রন্থের মধ্যে সঞ্জিত জ্ঞানকে আয়ত্ত করে, নিজের কল্যাণে নিয়ােগ করে জীবনকে সুন্দর ও গতিশীল করার পাশাপাশি সমাজ ও দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করার কাজে ব্যবহার করতে পারাই হচ্ছে বিদ্যাচর্চার সার্থকতা। কেননা কঠিন পরিশ্রম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার দ্বারা ধন-সম্পদ অর্জন করে নিজের কল্যাণ ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কাজে না লাগাতে পারলে সে সম্পদ অর্জনের প্রয়ােজনীয়তাই বা কী? ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, “A bird in hand is worth two in the bush.” তাই গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরের হাতে ধন রেখে তার গৌরবে গৌরবান্বিত হওয়া নিরর্থক। বিদ্যাকে গ্রন্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে মনে না করে বিদ্যানুশীলনের মাধ্যমে আমাদের আত্মমুক্তির পথ খুঁজতে হবে। মানুষের মঙ্গলার্থে অর্জিত বিদ্যা ও ধন-সম্পদের ব্যবহারে সমর্থ হতে হবে।

    মন্তব্য

    গ্রন্থগত বিদ্যা এবং পরের হাতে রক্ষিত ধন অব্যবহৃত থাকে বলেই এগুলাে বিদ্যা বা ধন নয়। এগুলােকে নিজের সম্পদ হিসেবে অর্জন করার মধ্যেই সার্থকতা ও স্বকীয়তা বিদ্যমান।


    ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি 

    মূলভাব : ক্ষুধা - দারিদ্র্য মানুষের সুন্দর অনুভূতি আর সুকুমার চেতনাকে কেড়ে নেয় । অভুক্ত মানুষের কাছে খাদ্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বস্তু আর কিছুই নেই ।

    সম্প্রসারিত ভাব : সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট । অনেক মানুষের জীবনে যখন দুবেলা খাবার জোটে না , তখন কেউ কেউ আবার সম্পদের পাহাড় জমিয়ে তুলেছে । আসলে পৃথিবীতে মানুষ সর্বহারা ও সর্বভোগী এ দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে । পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় ধনী আরও ধনী হয় , আর গরিবের অবস্থা প্রতিনিয়ত হতে থাকে শোচনীয় । ধনী - দরিদ্রের ব্যবধান এবং নানামুখি শোষণ প্রক্রিয়া বিশ্বকে কলুষিত করেছে । মানবতার অবমাননা ঘটছে প্রতিকারবিহীনভাবে । কিন্তু প্রচলিত সমাজব্যবস্থা এক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে নির্বিকার । এ সমাজ কায়েমী স্বার্থান্ধ গোষ্ঠীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । তাই এ সমাজে গরিবের আর্তনাদ কেবলই নিষ্প্রাণ দেওয়ালে মাথা কুটে মরে । অনাহারী বুভুক্ষু মানুষের কান্নাধ্বনি যেন কেবলই নিষ্ফল রোদন হয়ে কান্নার রোলকেই বাড়িয়ে দেয় এখানে । অনেকে প্রাচুর্যের বেসাতি ছড়িয়ে শিল্প - সাহিত্য ও সুরুচির স্তাবক হয়ে বসে আছে । তারা সুন্দরের সাধনা আর কোমল - পেলব অনুভূতির পরিচর্যায় বিভোর । কিন্তু এই সুন্দরের সাধনা কিংবা শিল্পের চর্চা দারিদ্র্যজর্জর মানুষের কাছে কোন মূল্যই পায় না । কবিতার ছন্দ , অলংকারের মোহনীয় কারুকাজ তাদের হতাশাগ্নিকেই বাড়িয়ে দেয় । আকাশের যে রূপালি চাঁদ তাকে নিয়ে কত জনেই না উপমা আর চিত্রকল্পের মায়াজাল বিস্তার করেছে । কিন্তু ক্ষুধার্ত মানুষের চোখে চাঁদের মোহনীয় সৌন্দর্য এতটুকু ধরা পড়ে না । বরং পূর্ণিমার চাঁদ তাদের চোখে ধরা দেয় ঝলসানো রুটি হয়ে । চাঁদ তাই তাদের মনের সুকুমার চেতনাকে আলোড়িত করে না , বরং ক্ষুৎপিপাসার যন্ত্রণাদহনকেই করে তোলে তীব্রতর । আসলে ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবীটা বড়ই নির্দয় - নিষ্ঠুর , বড়ই বেসুরো ও গদ্যময় । তাই এ সমাজ পরিবর্তন করে ক্ষুধার্ত ও নিরন্ন মানুষের অন্নবস্ত্রের নিশ্চয়তা দিতে হবে ।

    মন্তব্য : প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য মানুষকে স্বর্গীয় তৃপ্তি দান করে । কিন্তু সীমাহীন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কাছে এই সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায় । মানুষের খাদ্যের অভাব দূর করতে পারে না ।

    অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা তারে তৃণ সম দহে ভাবসম্প্রসারণ

    মূলভাব : অন্যায়কারী এবং অন্যায় সহ্যকারী উভয়েই সম অপরাধে অপরাধী। সময়ের ব্যবধানে তাদের ধ্বংস অনিবার্য।

    সম্প্রসারিত ভাব : ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, মানুষের আচরণগত বিপরীতধর্মী দুটি দিক। কেউ কেউ ব্যক্তি বা সমাজ জীবনের বৃহত্তর কল্যাণ ও সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ভালাে ও ন্যায় কাজ করে, আবার কেউ কেউ বিপরীতমুখী হয়। বস্তুত আমাদের সমাজে অন্যায়প্রবণ মানুষ সংখ্যায় কম হলেও তারা বৃহত্তর সুশীল সমাজকে জিম্মি করে রাখে। তারা অন্যকে অহেতুক উৎপীড়ন করে, অন্যের অধিকারে অন্যায় হস্তক্ষেপ করে, উচ্ছঙ্খল আচরণে সামাজিক শৃঙ্খলা নস্যাৎ করে। এরা সমাজের চোখে অন্যায়কারী এবং আইনের চোখে অপরাধী। এদের অপরাধ অবশ্যই দন্ডনীয়। কিন্তু মানুষ বিবেকবান হিসেবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকারী হলেও অনেক সময় নানা কারণে দিনের পর দিন অন্যায় সহ্য করে যায়। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সৎসাহস তাদের থাকে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের এ প্রতিবাদহীন নির্লিপ্ততা প্রকারান্তরে অন্যায়কারীকে আরও বেপরােয়া করে তােলে। দিন দিন বাড়ে তার শক্তি-সাহস। সাধারণ মানুষ মেরুদণ্ডহীনের মতাে মুখ বুজে থাকতে বাধ্য হয়। জগতের শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ বিধাতার প্রতিনিধিরূপে ন্যায়-অন্যায় মূল্যায়নের মাধ্যমে অন্যায় কাজ ও অন্যায়। চিন্তা থেকে বিরত থাকবে। ক্ষমাশীলতা মানুষের একটি মহৎ গুণ। কিন্তু ক্ষমারও একটা বিশেষ সীমা থাকা প্রয়ােজন। অন্যায়কারীকে ক্ষমা করার মাঝে কোনাে মহত্ত্ব নেই। নেই কোনাে কৃতিত্ব। যারা এদের ক্রমাগত ক্ষমা করে প্রশ্রয় দেয় তাদের অপ্রাধও কম নয়। কেননা অন্যায়কারীর মতােই অন্যায়কে প্রশ্রয়দানকারী সমান অপরাধে অপরাধী। মনীষী গ্যাটে বলেন,

    “যখন তােমার পাশে কোনাে অন্যায় অবিচার সংঘটিত হয়, তুমি যদি সেই অন্যায়ের বিরােধিতা না কর, তাহলে তুমি তােমার কর্তব্যের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে।”

    মন্তব্য: অন্যায়কে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে হবে। ক্ষমা যেখানে দুর্বলতা সেখানে অত্যন্ত কঠিন হতে হবে।


    দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য ভাবসম্প্রসারণ


    মূলভাবঃ বিদ্যা এবং চরিত্র এ দুটি মানবজীবনে মূল্যবান সম্পদ। বিদ্বানের সঙ্গ কল্যাণকর কিন্তু বিদ্বান অথচ চরিত্রহীন এমন ব্যক্তির সঙ্গ কখনাে মঙ্গলজনক নয়, এদের সঙ্গ সর্বদাই পরিত্যাজ্য। এ ধরনের বিদ্বান ব্যক্তিরা তাদের অসৎ চরিত্রের মাধ্যমে সজ্ঞানে দেশ, জাতি ও সমাজের ভয়ানক ক্ষতি করেন।

    সম্প্রসারিত ভাব: বিদ্বান ব্যক্তি পৃথিবীর সর্বত্রই সম্মানিত। বিদ্বান ব্যক্তির জ্ঞান-আলাের সংস্পর্শে এলে সকলেরই মন আলােকিত হয়। তদুপরি যদি তিনি সৎ চরিত্রবান হন তবে তার চরিত্র মাধুর্য সকলকেই মুগ্ধ করে, তিনি সকলের ভক্তি ও শ্রদ্ধার পাত্র হন। আর যদি বিদ্বান ব্যক্তি চরিত্রহীন হন, তখন তিনি অশ্রদ্ধার পাত্র হন। কেউ সহজে তার সঙ্গে মিশতে চায় না, কথাবার্তা এমনকি চলাফেরাও করতে চায় না। সকলেই তার কাছ থেকে দূরে থাকে। কারণ চরিত্রহীন ব্যক্তি তার অসৎ উদ্দেশ্য ও হীনস্বার্থ হাসিলে তৎপর থাকেন। তিনি তখন দুর্জন ব্যক্তির মতাে ভয়ংকর রূপ নেন। যেকোনাে অন্যায় কাজ করতে তিনি দ্বিধা করেন না। এ ধরনের ব্যক্তির সাহচর্য পেলে নিজ চরিত্রও কলুষিত হতে পারে। তাই চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তির সাহচর্য আমাদের কারাে কাম্য নয়। বিষধর সাপের মাথায় মহামূল্যবান মণি থাকে, তাই বলে মণি লাভের নিমিত্তে বিষধর সাপের কাছে গেলে মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে। তেমনি বিদ্বান অথচ চরিত্রহীন ব্যক্তির সাহচর্যে গিয়ে বিদ্যা লাভ করলে বিপদও হতে পারে । সমাজে ঘৃণিত ও নিন্দনীয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সাধনা করে অর্জন করা বিদ্যাও অর্থহীন হয়ে পড়তে পারে। তাই চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তিকে সবসময় এড়িয়ে চলা উচিত।

    জীবনকে সুন্দর করতে হলে দুর্জনকে পরিহার করতে হবে। দুর্জন ব্যক্তি যতই বিদ্বান হােক না কেন সে সবসময় নিন্দনীয় ও ঘৃণিত। তাকে সবসময় পরিহার করা উচিত।


    ভাবসম্প্রসারণ: ভােগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ / ভােগে নয়, ত্যাগেই মনুষ্যত্বের বিকাশ


    মূলভাব: ভােগ ও ত্যাগ মানবজীবনের সাথে জড়িত। দুটিই পরস্পরবিরােধী পথ। তবে ভােগ মানুষকে ইন্দ্রিয়পরায়ণ করে আর ত্যাগ মানুষের জীবনকে অর্থবহ করে। ভােগপ্রবণতা কখনাে মানুষকে সুখী করে না আর মনুষ্যত্বেরও বিকাশ ঘটায় না। ত্যাগের মাধ্যমে পাওয়া যায় প্রকৃত সুখ।

    ভাবসম্প্রসারণ: ভােগবাদিতা মানবজীবনের আদর্শ নয় । পরার্থে আত্মত্যাগই মনুষ্যত্বের আদর্শ। পৃথিবীর মানুষ প্রবৃত্তির দাস। প্রবৃত্তি মানুষকে ভােগপ্রবণ করে। আর প্রবৃত্তির হাত থেকে মুক্তির মাধ্যমে মানুষের আত্মমুক্তি ঘটে। আর এ। মুক্তির মাধ্যমে মহৎ জীবনের আস্বাদ পাওয়া যায়। ভােগের কারণে মানুষ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। ফলে ভােগ করতে হয় সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশা। ভােগপ্রবণতা মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর করে তােলে। ভােগের বশবর্তী মানুষের দ্বারা পৃথিবীতে কোনাে মহৎ কাজ করা সম্ভব হয় না। স্বার্থপর ভােগী মানুষকে জগৎ মনে রাখে না। অপরের জন্যে নিজের সুখ বিসর্জন দেওয়ার মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। আর ত্যাগী মানুষ তার মহৎ গুণের জন্যে স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে থাকে। ত্যাগের মাধ্যমে তারা পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করে। দৈহিকভাবে উপস্থিত না থেকেও তাদের ত্যাগের কারণে মনুষ্যত্বের জন্যে সদাই তাদের উপস্থিতি অনুভব করা যায়।যুগে যুগে জ্ঞানী-গুণী ও পণ্ডিত ব্যক্তিরা ত্যাগের মাধ্যমেই মানবকল্যাণ সাধনে ব্রতী হয়েছেন। মাদার তেরেসা, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল প্রমুখ মানবজাতির কল্যাণের জন্যে বহু ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন। তাই ত্যাগই আমাদের চরিত্রের আদর্শ হওয়া উচিত। তবে ত্যাগ মানে নিজেকে সর্বস্বান্ত করা নয়, নিজের জীবন ও পরিবারকে বিসর্জন নয়। অন্যের কল্যাণের জন্যে ত্যাগই হচ্ছে যথার্থ। এর মাধ্যমে প্রকৃত সুখ লাভ করা যায় এবং যথার্থ মনুষ্যত্বের পরিচয় ঘটে।

    জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করতে হলে স্বার্থ ত্যাগ করা উচিত। ভােগী মানুষ বাঁচে তার পরিবার-পরিজনের পরিধির মধ্যে আর ত্যাগী মানুষ বাঁচে কালের অনন্ত প্রবাহে।

    প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয় কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না ভাবসম্প্রসারণ

    মূলভাব: মানুষকে বলা হয় সৃষ্টির সেরা জীব। কেননা তারা নিজগুণে অন্যান্য প্রাণী হতে অনেক আলাদা। মানুষের সাথে অন্য প্রাণীর পার্থক্য এখানে যে মানুষের একটি সুন্দর মন আছে। এ মনই মানুষকে মনুষ্যত্বে বলীয়ান করেছে। দিয়েছে পৃথিবীজুড়ে শ্রেষ্ঠত্ব। সেই কারণে বলা হয় পৃথিবীতে যাদের প্রাণ আছে তারা সকলেই প্রাণী, কিন্তু মানুষের মতাে সুন্দর মন আর কারাে নেই বলে কেউ মানুষের মতাে নয়।


    ভাবসম্প্রসারণঃ মানুষকে বলা হয় দ্বিজ অর্থাৎ দুবার জন্মগ্রহণকারী। এ দ্বিতীয় জন্ম বলতে মানবিক গুণাবলি অর্জন করে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠাকে বােঝায়। একটি শিশু যখন জন্ম নেয়, তখন সে অন্যান্য প্রাণীর মতােই অসহায় থাকে। অন্যান্য প্রাণীর সাথে তার তখন খুব একটা পার্থক্য থাকে না। পরবর্তীকালে শিক্ষাদীক্ষার মাধ্যমে মানুষ অর্জন করে মানবিক গুণাবলি। তখন তার আত্মশক্তির বিকাশ ঘটে। সে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে এবং নিজেকে নতুন করে উপলব্ধি করতে শেখে। অপরদিকে, মনুষ্যত্ব বিবর্জিত মানুষ বাহ্যিকভাবে মানুষের মতাে হলেও অন্যান্য প্রাণী ও তার মধ্যে কোনাে পার্থক্য থাকে না। আমরা জানি, সকল প্রাণীরই জীবনধারণের বৃত্তি আছে। কিন্তু মানুষের এ বৃত্তির পাশাপাশি আছে মনুষ্যত্ব, বিবেক ও মানবিক গুণাবলি ! এসব গুণই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে পৃথক করেছে। মানুষের মন আছে বলেই সে হৃদয়বৃত্তির বিকাশের সুযােগ পেয়েছে। যে ব্যক্তি ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় বিবেচনা করতে পারে সেই যথার্থ মানুষ । আর যে কখনাে মন্দ কাজ করতে দ্বিধা বােধ করে না, নিজের জন্যে সে যা শ্রেয় মনে করে, অন্যের ক্ষতি হলেও সে তা-ই করে, সে কখনাে প্রকৃত ও পূর্ণাঙ্গ মানুষ বলে গণ্য হতে পারে না। প্রাণ কখনাে মানুষকে মানুষ হিসেবে পরিচিত করে না। একমাত্র বিবেকতাড়িত মনই মানুষকে মানুষ হিসেবে পরিচিত করে । মন আছে বলেই মানুষ পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী । প্রাণ নয়, মনই মানুষকে স্বমহিমায় পরিচিত করে তােলে।

    Tag:এসএসসি বাংলা ২য় পত্র ভাব সম্প্রসারণ সাজেশন ২০২৪ (১০০% কমন ৯ টি) -ভাবসম্প্রসারণ সাজেশন ssc 2024

                                   
    Previous Post Next Post


    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com



    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com

    (সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Facebook এবং Telegram পেজ)