ইতিকাফের করনীয় বর্জনীয় (A To Z) | ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করা যাবে কিনা | এতেকাফ অবস্থায় মসজিদের বাইরে কখন যাওয়া যাবে

ইতিকাফের করনীয় বর্জনীয় (A To Z) | ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করা যাবে কিনা | এতেকাফ অবস্থায় মসজিদের বাইরে কখন যাওয়া যাবে


আসছালামু আলাইকুম? প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা সবাইকে আমাদের Educationblog24.com এ স্বাগতম। আসা করি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা পবিত্র মাহে রমজান মাস চলতেছে। এই মাসের শেষের দশ দিন নবী করিম (সা:) ইতিকাফ করতেন। হাদিস শরীফে এসেছে ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।’ (মুসলিম, হাদিস নম্বর ১১৭১) এ ছাড়া আরো ইতিকাফ সম্পর্কে আরো অসংখ্য হাদিস রয়েছে। রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ। অর্থাৎ ২০ রমজানের সূর্য ডোবার আগ মুহূর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করা। এ ধরনের ইতিকাফকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া বলা হয়। গ্রাম বা মহল্লাবাসীর পক্ষে কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি এই ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে।

   
       

    ইতিকাফের করনীয় বর্জনীয়

    ইতেকাফকারীর জন্য যা কিছু বিধিবদ্ধ

    * ইবাদত আদায়, যেমন সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির ও দুআ ইত্যাদি। কেননা ই'তিকাফের উদ্দেশ্য হল আল্লাহ তা'আলার সমীপে অন্তরের একাগ্রতা নিবেদন করা এবং তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া যা উপরোক্ত ইবাদত আদায় ছাড়া সম্ভব নয়।

    অনুরূপভাবে যেসব ইবাদতের প্রভাব অন্যদের পর্যন্ত পৌঁছায় যেমন সালামের উত্তর দেওয়া, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বারণ, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, পথ দেখানো, ইলম শিক্ষা দেওয়া কুরআন পড়ানো ইত্যাদিও করতে পারবে। কিন্তু শর্ত হল এগুলো যেন এত বেশি না হয় যে ই'তিকাফের মূল উদ্দেশ্যই ছুটে যায়।

    * ইতেকাফকারীর জন্য মুস্তাহাব হল তার ই'তিকাফের স্থানে কোন কিছু দ্বারা পর্দা করে নেয়া। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তুর্কি গম্বুজের ভিতরে ই'তিকাফ করেছেন যার দরজায় ছিল চাটাই।

    * ইতেকাফকারী তার প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র সঙ্গে নেবে যাতে নিজের প্রয়োজনে তাকে বারবার মসজিদের বাইরে যেতে না হয়; আবু সাইদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন:
    . “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে রমজানের মাঝের দশকে ই'তিকাফ করলাম, যখন বিশ তারিখ সকাল হল আমরা আমাদের বিছানা-পত্র সরিয়ে নিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে বললেন : যে ই'তিকাফ করেছে সে তার ই'তিকাফের স্থানে ফিরে যাবে'।
    [বুখারী : ২০৪০ ]

    ইতেকাফকারী যা থেকে বিরত থাকবে

    * ওজর ছাড়া ইতেকাফকারী এমন কোন কাজ করবে না যা ই'তিকাফকে ভঙ্গ করে দেয়, আল্লাহ তাআলা বলেন,  :

    'তোমরা তোমাদের কাজসমূহকে নষ্ট করো না”। {সূরা মুহাম্মদ :

    * ঐ সকল কাজ যা ই'তিকাফের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে, যেমন বেশি কথা বলা, বেশি মেলামেশা করা, অধিক ঘুমানো, ইবাদতের সময়কে কাজে না লাগানো ইত্যাদি।

    ইতেকাফকারী মসজিদে অবস্থানকালে ক্রয়-বিক্রয় করবে না, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে জন্য- করতে নিষেধ করেছেন।
    এমনিভাবে যা ক্রয় বিক্রয়ের কাজ বলে বিবেচিত যেমন বিভিন্ন ধরনের চুক্তিপত্র, ভাড়া, মুদারাবা, মুশারাকা, বন্দক রাখা ইত্যাদি। কিন্তু যদি মসজিদের বাহিরে এমন ক্রয়-বিক্রয় হয় যা ছাড়া ইতেকাফকারীর সংসার চলে না তবে তা বৈধ বলে বিবেচিত হবে। [মুসনাদে আহমদ : ৫৯৯১]

    মসজিদে পারতপক্ষে বায়ু ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসে এসেছে, যখন বেদুইন লোকটি মসজিদে প্রস্রাব করেছিল তখন রাসূল বলেছিলেন

    'মসজিদ প্রস্রাব, ময়লা-আবর্জনার উপযোগী নয়, বরং মসজিদ অবশ্যই আল্লাহর জিকির এবং সালাত ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্য'। [মুসলিম : ২৮৫]

    ইতিকাফ অবস্থায় যৌন স্পর্শ নিষেধ, এ ব্যাপারে সকল আলেমের ঐকমত্য রয়েছে। তবে অধিকাংশ আলেমের মতে বীর্যস্খলনের দ্বারাই কেবল ই'তিকাফ ভঙ্গ হয়।

    এতেকাফ অবস্থায় মসজিদের বাইরে কখন যাওয়া যাবে

    ★ ইতেকাফকারী যদি বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে তার ই'তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

    ★ আর ই'তিকাফের স্থান থেকে যদি মানবীয় প্রয়োজন মিটানোর জন্য বের হয় তাহলে ই'তিকাফ ভঙ্গ হবে না।
    ★ মসজিদে থেকে পবিত্রতা অর্জন সম্ভব না হলে মসজিদ থেকে বের হওয়ার অনুমতি আছে।
    ★ বাহক না থাকার কারণে ইতেকাফকারীকে যদি পানাহারের প্রয়োজনে বাইরে যেতে হয় অথবা মসজিদে খাবার গ্রহণ করতে লজ্জা বোধ হয়, তবে এরূপ প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে।

    ★ যে মসজিদে ইতিকাফে বসেছে সেখানে জুমার নামাজের ব্যবস্থা না থাকলে জুমার সালাত আদায়ের প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া ওয়াজিব। আর এ জন্য আগে ভাগেই রওয়ানা হওয়া মুস্তাহাব।

    ★ ওজরের কারণে ইতেকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারে। ছাফিয়া রাদিয়াল্লাহ আনহা থেকে বর্ণিত হাদীস এর প্রমাণ:- “ছাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহ আনহা আনহা রমজানের শেষ দশকে ই'তিকাফস্থলে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করতে এলেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কতক্ষণ কথা বললেন, অতঃপর যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাকে বিদায় দিতে উঠে দাঁড়ালেন'। (বুখারী ২০০৫)

    ★ কোন নেকির কাজ করার জন্য ইতেকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। যেমন রোগী দেখতে যাওয়া, জানাযায় উপস্থিত হওয়া ইত্যাদি। এ মর্মে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আনহা বলেন:
    'ইতেকাফকারীর জন্য সুন্নত হল, সে রোগী দেখতে যাবে না, জানাযায় উপস্থিত হবে না, স্ত্রীকে স্পর্শ করবে না ও তার সাথে কামাচার থেকে বিরত থাকবে এবং অতি প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হবে না'। [আবূ দাউদ : ২৪৭৩]

    * ই'তিকাফ-বিরুদ্ধ কোন কাজের জন্য ইতেকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়, যেমন ক্রয়-বিক্রয়, স্বামী-স্ত্রীর মিলন ইত্যাদি।

    ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করা যাবে কিনা

    একজন ইতিকাফকারীর ইতিকাফ করার সময় দুনিয়ার অন্যান্য বিষয় থেকে সীমাবদ্ধ হয়ে শুধু আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর ইবাদতে আত্মমগ্ন হওয়ার জন্যই মূল নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

    সুতরাং, শুধু জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ফোন ব্যবহার করা উচিত হবেনা। পাশাপাশি, তার অন্য মুসলিম ভাইদের প্রয়োজন পূরণের জন্যও সে ফোন ব্যবহার করতে পারে।

    জরুরী প্রয়োজনে যেরূপ ইতিকাফের সময় মসজিদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে, তেমনি জরুরী প্রয়োজনেই শুধু ফোন ব্যবহার করার অনুমতি ইতিকাফকারীরা পেতে পারে। আল্লাহই উত্তম জ্ঞানের অধিকারী।

    Tag:ইতিকাফের করনীয় বর্জনীয় (A To Z),ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করা যাবে কিনা,এতেকাফ অবস্থায় মসজিদের বাইরে কখন যাওয়া যাবে

                                   
    Previous Post Next Post


    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com



    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com

    (সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Facebook এবং Telegram পেজ)