ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ?
১২ই রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)
(১২ রবিউল আউয়াল যে নবীজির জন্মদিবস – এ কথা প্রমাণসিদ্ধ নয়)
নবীজির জন্মদিবস উপলক্ষে আমাদের দেশসহ উপমহাদেশের বহু সংখ্যক মানুষ ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করে থাকেন। এ কাজ ধর্মের নামে চালালেও ধর্মে এমন কোন কাজ স্বীকৃত নয়। কেননা তা ধর্মের মাঝে নব আবিষ্কৃত বিষয়। ইসলামী পরিভাষায় একে বিদআত বলা হয় – যা অবশ্য পরিত্যায্য।
এ ঈদ পালনকারীদের অনেক ভ্রান্ত দাবীর মাঝে একটি দাবী হল যে, এটা নবীজীর (স.) প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন। আসলে কি তাই?
নবীজীকে শ্রদ্ধা করার উপায় হচ্ছে তাঁর আনুগত্য করা, তিনি যেমনটি আদেশ করেছেন, তেমনটি করা আর তিনি যা নিষেধ করেছেন তা পরিত্যাগ করা; বিদাত, কল্পকাহিনী এবং পাপাচারের মাধ্যমে তাঁকে সম্মান করতে বলা হয়নি। মিলাদুন্নবী উদযাপন এরকমই এক দূষণীয় কাজ, কারণ এটা একধরনের পাপাচার। নবীজীকে(স.) যারা সবচেয়ে বেশী শ্রদ্ধা করেছিলেন, তারা ছিলেন সাহাবীগণ। যেমনটি উরওয়াহ ইবনে মাসউদ কুরাঈশদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন:
‘হে লোকসকল! আল্লাহর কসম আমি রাজরাজড়াদের দেখেছি। আমি সিজার, কায়সার এবং নেগাসের দরবারে গিয়েছি, কিন্তু আল্লাহর শপথ, আমি এমন কোন রাজা দেখিনি যার সাথীরা তাকে এতটা সম্মান করে, যতটা গভীরভাবে মুহাম্মাদকে(সঃ) তাঁর সাথীরা শ্রদ্ধা করে। আল্লাহর শপথ তাঁর কোন থুথুও মাটিতে পড়ত না, বরং তাঁর সাথীরা হাত দিয়ে ধরে নিতেন এবং তা তাদের চেহারা ও ত্বকে বুলিয়ে নিতেন। যদি তিনি তাদেরকে কোন আদেশ দেন, তবে তারা সেটা পালন করার জন্য দ্রুতগামী হয়। তাঁর ওযুর সময় তারা ওযুর পানি গ্রহণ করার জন্য প্রায় লড়াই করতে উদ্যত হয়। তিনি কথা বললে তাঁর উপস্থিতিতে তারা তাদের কন্ঠস্বরকে নীচু করে ফেলে। এবং তারা গভীর শ্রদ্ধাবোধের কারণে তাঁর দিকে সরাসরি তাকিয়েও থাকে না।’ (বুখারী)
তাঁর প্রতি এত শ্রদ্ধা থাকা সত্ত্বেও সাহাবারা কখনও মিলাদুন্নবীর দিনকে ঈদ হিসেবে পালন করেননি। যদি ইসলামে একে পালন করার উৎসাহ দেয়া হত, তবে তারা কিছুতেই একে অবহেলা করতেন না।
বড় কথা হল, ১২ রবিউল আউয়াল যে নবীজির জন্মদিবস – এ কথা প্রমাণসিদ্ধ নয়। বরং এ বিষয়ে পূর্বসূরি ওলামায়ে কেরাম যথেষ্ট মতবিরোধ করেছেন। এখন কথা হল, এ দিবস যদি আসলেই পালনীয় কিছু হতো, তাহলে সাহাবায়ে কেরাম থেকে এর কোন না কোন বর্ণনা অবশ্যই পাওয়া যেতো। নিশ্চয়ই সাহাবায়ে কেরাম পরবর্তী যুগের মুসলমানদের চেয়ে নবীজিকে বেশি ভালবাসতেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী কি বেদাত?
রাসূল (ﷺ) এর জন্ম উপলক্ষে অনেকেই ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ পালন করে। কিন্তু শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। অনেকে আবার শ্লোগান দেয়— ‘সকল ঈদের সেরা ঈদ, ঈদে মিলাদুন্নবী।’ কিন্তু ইসলামে ঈদ দুটো তৃতীয় কোন ঈদ নেই। যদি থাকত তাহলে নবিজি (ﷺ) আমাদের জানিয়ে দিতেন।
‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ পালন করা যদি জায়েজ কিংবা সওয়াবের কাজ হতো তাহলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা জানিয়ে দিতেন। তার জীবদ্দশায় সাহাবিদের পালন করার নির্দেশ দিতেন। আমরা কি সাহাবিদের থেকে রাসূল (ﷺ) কে বেশি ভালোবাসতে পারব? যদি না পারি তাহলে যেখানে সাহাবিরা ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করেননি, তাবে-তাবেঈনগন পালন করেননি সেখানে আমরা মনগড়া ইবাদত কিভাবে পালন করি। যার ভিত্তি শরীয়তে নেই।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন — “বলুন, ‘আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দেব তাদের যারা কর্মে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত?’ দুনিয়ার জীবনে যাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে, অথচ তারা মনে করছে যে, তারা ভাল কাজই করছে’!” [সূরা কাহাফ : ১০৩-১০৪]
রাসূল (ﷺ) বলেছেন — “আল্লাহ তায়ালা বিদআতী ব্যক্তির সালাত, সাওম, যাকাত, হাজ্জ, উমরাহ, জিহাদ, সদকাহ, ন্যায় বিচার, তাওবাহ, আমল ইত্যাদি কিছুই কবুল করবেন না। সে ইসলাম থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেভাবে আটার খামির থেকে চুল বের হয়ে যায়।” [ইবনে মাজাহ : ৪৯]
সেদিন নতুন এই কর্ম তৈরি করার জন্য আল্লাহর রাসূল আপনাকে হাউজে কাউসার থেকে তাড়িয়ে দিবেন এবং বলবেন— ‘দূর হও! দূর হও! যারা আমার পরে আমার দ্বীনে বিকৃতি তৈরি করেছ।’ [বুখারী : ৬৫৮৩]
আর শাফায়াত সেটাও মিলবেনা সেদিন। রাসূল (ﷺ) বলেছেন — “আমার উম্মতের জন্য আমার সুপারিশ হালাল। কিন্তু বিদআতীর জন্য আমার সুপারিশ হালাল নয়। [আল বিদাউ, ইবনে উদ্দাহ : ৮৫]
আমল সেটাই যেটা নবী (ﷺ) করেছেন এবং তার উম্মতকে করতে নির্দেশ দিয়েছেন। শরীয়তে যেটা নেই মনগড়া সেই আমল করলে কবূল হওয়া ত দূরে থাক বরং সেটা হবে গুনাহের কাজ!
বেদাত কাকে বলে?
উ:- (১) ইসলামে নতুন কোন আমল বা নিয়ম বা নীতি চালু করা যা নবী থেকে প্রমানিত নয় তা বেদাত হিসেবে গন্য।
(২) কোন বিষয়ের উপর সুন্নত এর প্রমান থাকা অবস্থায় সুন্নতের পরিবর্তে সোয়াবের উদ্যেশে নতুন কোন আমল করা বেদাত।
উ:- কারন তা নবী(স) থেকে প্রমানিত নয়।
নবী(স) বলেন"মান আমিলা আমালা লাইসা আলাইহি ফাহুয়া আমরুনা রদ্দুন"
অর্থঃ কেউ এমন কোন আমল করল যার উপর আমার তরফ থেকে প্রমান নেই তা প্রত্যখ্যাত (সাহিহুল মুসলিম)