এইচএসসি এসাইনমেন্ট ২০২১ উত্তর /সমাধান ইতিহাস ১ম পত্র (এসাইনমেন্ট ১) | ২০২১ সালের এইচএসসি ইতিহাস এসাইনমেন্ট সমাধান (১ম পত্র)



    ২০২১ সালের এইচএসসি ইতিহাস এসাইনমেন্ট সমাধান (১ম পত্র)


    খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের প্রকৃতি এবং ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য 

    খিলাফত আন্দোলনের প্রকৃতি ব্যাখ্যাঃ

    মুসলিম জাহানে খােলাফায়ে রাশেদীন ’ থেকে খিলাফত নামের উৎপত্তি অর্থাৎ খলিফার শাসন সম্পর্কীয় ক্ষমতার বিস্তৃতিই খিলাফত । 

    শুধু তাই নয় , মুসলমানরা বিশ্বাস করত খলিফা মুসলিম জাহানের ধর্মীয় গুরু ও পথপ্রদর্শক । কাজেই খিলাফত মুসলমানদের নিকট একটি পবিত্র প্রতিষ্ঠান এবং উক্ত পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিই মুসলিম জাহানের একজন খলিফা ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব । তুরস্কের সুলতান খলিফা পদ লাভ করায় তুরস্কের প্রতি ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের শ্রদ্ধাশীল থাকা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল । ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তুরস্ক ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জার্মানির পক্ষে যােগদান করে । 

    অপরদিকে , ভারতীয় মুসলমানগণ স্বীয় রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্রিটিশ সরকারের প্রতি অনুগত থেকে জার্মানি ও তুরস্কের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে । কিন্তু তুরস্কের প্রতি ব্রিটিশ শাসনের অনমনীয় মনােভাব লক্ষ করে ভারতীয় মুসলমানরা পরে ভিন্নমত পােষণ করে । এতে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় মুসলমানদের সহযােগিতা ও আনুগত্যের প্রতি সন্দেহপ্রবণ হয়ে মওলানা মুহম্মদ আলী , মওলানা শওকত আলী , মওলানা আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্য মুসলিম নেতৃবৃন্দকে কারারুদ্ধ করেন । 

    ব্রিটিশ সরকারের এরূপ দমননীতির ফলে ভারতীয় মুসলমানরা অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে এবং তারা ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারতীয় উপমহাদেশে তীব্র আন্দোলন গড়ে তােলে । ভারতীয় মুসলমানদের ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলনের প্রচণ্ডতা লক্ষ্য করে এবং তুরস্কের খিলাফতের প্রতি মুসলমানদের তীব্র আকর্ষণ ও শ্রদ্ধা উপলব্ধি করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ আশ্বাস প্রদান করেন যে , যুদ্ধের পর তুরস্ক সাম্রাজ্য এবং খিলাফত অক্ষুন্ন রাখা হবে । উপরন্তু যুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসনের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসও প্রদান করেন । 

    ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় । কিন্তু যুদ্ধের পর মুসলমানরা গভীর ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করেন যে , ১৯২০ সালের সেভার্সের সন্ধি দ্বারা ব্রিটিশ সরকার তুরস্ক সাম্রাজ্যের ওপর প্রচণ্ড আঘাত হানে । তুরস্ককে অপমানজনক চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করে ব্রিটিশ সরকার তুরস্ক সাম্রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা ইউরোপীয় শক্তিবর্গের মধ্যে ভাগ করে দেয় । এতে মুসলমানরা অত্যধিক মর্মাহত হয় এবং গােটা মুসলিম বিশ্ব ব্রিটিশ সরকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে । ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানরাও ব্রিটিশ সরকারের এরূপ হঠকারিতামূলক আচরণে বিক্ষুব্ধ হয় এবং তারা সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে । 

    এরূপ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১৯ সালে মওলানা মুহম্মদ আলী , মওলানা শওকত আলী ও মওলানা আবুল কালাম আজাদ জেল থেকে বের হয়ে আসেন এবং এ আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন । তাদের নেতৃত্বে সমগ্র উপমহাদেশে এ আন্দোলন এক গণআন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করে । 
    ১৯২০ সালে মুসলিম জাহানের ‘ খিলাফত ' এর মর্যাদা রক্ষার জন্য এ আন্দোলন শুরু হয় বলে এটি ' খিলাফত আন্দোলন ' নামে পরিচিত। 

    অসহযোগ আন্দোলনের প্রকৃতি ব্যাখ্যাঃ 

    অসহযােগ আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ : 
    খিলাফত আন্দোলনকারীরা তুরস্ক সাম্রাজ্যের অখণ্ডতা এবং ধর্মীয় পবিত্র স্থানসমূহ রক্ষার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয় । তারা ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতার জন্যও মজা করে যেতে থাকে । এ সময় গান্ধীজীর নেতৃত্বে কংগ্রেস ভারতীয় উপমহাদেশে স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে । কিন্তু তাদের দাবি আদায় না হওয়ায় কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারের প্রতি দারুণ অসন্তুষ্ট হয় । এ সময় রাওলাট আইন পাস এবং জালিয়ানওয়ালাবাগের সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ফলে ভারতীয়দের অসন্তোষ প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে । 

    ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে গান্ধীজীর নেতৃত্বে অসহযােগ আন্দোলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে । অতঃপর ১৯২০ সালের মার্চ মাসে গান্ধীজী অহিংস অসহযােগ আন্দোলনের এক কর্মসূচি গ্রহণ করে ১৯ মার্চ শােক দিবস পালন করেন । এ সময় কেন্দ্রীয় খিলাফত কমিটি মুসলমানদের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে ব্রিটিশ সরকারের সাথে অসহযােগিতার নীতি ঘােষণা করে । ঘােষণায় সরকারি খেতাব ও অবৈতনিক পদ বর্জন করা ; সরকারের বেসরকারি পদগুলাে থেকে পদত্যাগ করা , পুলিশ ও সেনাবাহিনী হতে পদত্যাগ করা এবং খাজনা বন্ধ করার কথা বলা হয় । 

    খিলাফতের ঘােষিত নীতিমালার প্রেক্ষিতে ১৯২০ সালের জুলাই মাসে সিন্ধু প্রদেশে অনুষ্ঠিত খিলাফত সম্মেলনে গান্ধীজী যােগদান করে ৭ কোটি মুসলমানের সাহায্যে ভারতের ২৩ কোটি হিন্দু জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান । সিন্ধুর সম্মেলনে গান্ধীজী ঘােষণা করেন যে , ১ আগস্ট অনশন এবং প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে অহিংস অসহযােগ আন্দোলন শুরু করা হবে । একই বছর কলকাতায় কংগ্রেস অধিবেশনে গান্ধীজী , অহিংস অসহযােগ আন্দোলনের প্রস্তাব উত্থাপন করে সমবেত সদস্যবৃন্দকে প্রতিশ্রুতি দেন যে , ভারতবাসী তার পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিচালিত হলে এক বছরের মধ্যেই ভারতের স্বরাজ লাভ করা সম্ভব । মুহম্মদ আলী জিন্নাহসহ কয়েকজন নেতা এ প্রস্তাবের বিরােধিতা করা সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে গান্ধীজীর প্রস্তাব গৃহীত হয় । 

    মুসলিম লীগের সভাপতি হিসেবে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ গান্ধীজীর প্রতি ভিন্নমত পােষণ করলেও ব্রিটিশের বিরুদ্ধে তাঁর অহিংস অসহযোগ নীতির যথার্থতা স্বীকার করেছিলেন । কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে গান্ধীজীর অহিংস আন্দোলনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় । 

    অসহযােগ আন্দোলনের তিনটি মূল লক্ষ্যের প্রতি কংগ্রেস ও খিলাফত কমিটি একমত হয় । যথা : 
    ১.পাঞ্জাবের অভিযােগের সন্তুষ্টি বিধান , 
    ২.খিলাফতের  প্রতি ব্রিটিশ সরকারের অন্যায়ের অবসান এবং
    ৩. ভারতবাসীকে স্বরাজ দান । 

    এ সময় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ স্ব - স্ব আন্দোলনের সমর্থনে পরস্পরের সাহায্য ও সহযােগিতার প্রয়ােজন অনুভব করেন । অতঃপর উভয় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ অমৃতসরে এক সম্মেলনে । মিলিত হয়ে গান্ধীজীর নেতৃত্বে যৌথভাবে আন্দোলন পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । উভয় আন্দোলনের যৌথ নেতৃত্ব গ্রহণ করে গান্ধীজী ১৯২০ সালের ১ আগস্ট ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের নীতিমালা ঘােষণা করেন ।

    খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের ফলাফল বিশ্লেষণঃ

    আন্দোলনের কর্মসূচি : 
    গান্ধীজী কর্তৃক পরিচালিত অসহযােগ আন্দোলনের কর্মসূচি ছিল গঠন ও বর্জনমূলক । গঠনমূলক কর্মসূচির মধ্যে ছিল স্বদেশী পণ্যের প্রসার যেমন - দেশি চরকা ও খদ্দরের ব্যাপক প্রচলন , অস্পৃশ্যতা পরিহার , হিন্দু - মুসলমান সম্প্রীতি বৃদ্ধিকরণ । আদালতের পরিবর্তে জনগণের সালিসি বাের্ড গঠন , জাতীয় স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা , হস্তচালিত তাঁত শিল্পের প্রসার এবং গ্রাম উন্নয়ন ইত্যাদি । বর্জনমূলক কর্মসূচির মধ্যে ছিল যেমন - বিলেতি পণ্যসামগ্রী বর্জন , মাদকতা বর্জন , সরকারি খেতাব বর্জন , সরকারি অনুষ্ঠান ও স্কুল - কলেজ বর্জন , আইনসভা ও আদালত বর্জন ইত্যাদি । 

    আন্দোলনের তীব্রতা : 
    গান্ধীজীর নেতৃত্বে খিলাফত ও অসহযােগ আন্দোলন যুক্তভাবে পরিচালিত হওয়ায় এটি শীঘ্রই এক দুর্বার আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করে । হিন্দু ও মুসলমান সকলেই এ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যােগদান করে । গান্ধীজীর আহ্বানে মতিলাল নেহেরু , চিত্তরঞ্জন দাশ , রাজেন্দ্র প্রসাদ , রাজা গােপালাচারী প্রমুখ প্রখ্যাত আইনজীবিগণ তাদের আইন ব্যবসায় পরিত্যাগ করেন । ছাত্রছাত্রীরা স্কুল - কলেজ ত্যাগ করে । বিলেতি দ্রব্য বর্জন ও পােড়ানাে হয় এবং শ্রমিকরা কলকারখানা ত্যাগ করে । ফলে সর্বত্র দেশীয় দ্রব্যসামগ্রী ব্যবহারের হিড়িক পড়ে । ড . জাকির হুসেনের নেতৃত্বে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ' নামে নতুন এক শিক্ষা সংস্থার প্রতিষ্ঠা করে । জওহর লাল নেহেরু ও সুভাষ চন্দ্র বসু এ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যােগদান করেন । অসহযােগ আন্দোলন শীঘ্রই ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং জনগণের মধ্যে এক অভূতপূর্ব উদ্দীপনা দেখা দেয় । ১৯২১ সালে প্রিন্স অব ওয়েলস ভারত সফরে আগমন করলে দেশব্যাপী হরতাল পালন এবং বিক্ষোভ আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতবাসী তাকে অভ্যর্থনা জানায় । 

    সরকারের দমননীতি : 
    অসহযােগ আন্দোলনের ব্যাপকতা লক্ষ্য করে সরকার কঠোর হস্তে এা দমন করতে বদ্ধপরিকর হন । ফলে নিরস্ত্র ভারতবাসীর ওপর সরকারের অকথ্য নির্যাতন এবং গান্ধীজী ব্যতীত কংগ্রেস ও খিলাফতের সকল নেতাকেই কারারুদ্ধ করা হয় । সরকারের এ দমননীতির বিরুদ্ধে কংগ্রেস আইন অমান্য করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । গান্ধীজী গভর্নর জেনারেলকে জানান যে , সাত দিনের মধ্যে যদি বন্দী সত্যাগ্রহীদের মুক্ত করা না হয় তা হলে দেশবাসীকে রাজস্ব না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে । 

    চৌরিচৌরার ঘটনা ও আন্দোলন প্রত্যাহার : গােরখপুরের চৌরিচৌরা নামক স্থানে উত্তেজিত জনতা চৌরিচৌরা থানায় অগ্নিসংযােগ করে একজন দারােগাসহ ২৩ জন পুলিশের মৃত্যু ঘটায় । গান্ধীজী সম্পূর্ণ অহিংসভাবেই সংগ্রাম চালাবার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও চৌরিচৌরার ঘটনায় তিনি মর্মাহত হন এবং ঘটনার তাৎক্ষণিক গুরুত্ব অনুধাবন করে তিনি আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘােষণা দেন । তার এ ঘােষণার প্রেক্ষিতে মতিলাল নেহেরু এবং লালা লাজপত রায় মন্তব্য করেন যে , “ একটি স্থানের একটি জনতার । পাপের জন্য গান্ধীজী সমগ্র দেশকে দণ্ডিত করেন । ব্রিটিশ সরকার ও আন্দোলনকারীদের ওপর অমানসিক নির্যাতন ও নিপীড়ন শুরু করেন । ফলে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে । ১৯২৪ সালে তুর্কি নেতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক খিলাফত ভেঙে দিয়ে তুরস্ককে আধুনিক প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে ঘোষনা করেন। ফলে ১৯২৪ সালে খিলাফত আন্দোলন সম্পূর্ণরুপে থেমে যায়। 

    লাহোর প্রস্তাবের প্রেক্ষাপট ও বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যাঃ

    লাহাের প্রস্তাব , ১৯৪০ 
    কংগ্রেস নিখিল ভারতীয় সকল সম্প্রদায়ের জন্য নিজেকে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করলেও মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হয় । ফলে ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য একটি পৃথক রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে । জওহরলাল নেহেরু মুসলিম লীগকে কংগ্রেসের সমমর্যাদা দিতে না চাইলে শীঘ্রই ভারতীয় কংগ্রেসের গণবিরােধী কার্যকলাপে ভারতীয় মুসলমানগণ ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়ে । 

    ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন অনুযায়ী ১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেস ৭ টি প্রদেশে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে । ৭ টি প্রদেশে কংগ্রেস মুসলিম লীগের সাথে কোনাে আলাপ আলােচনা না করেই এককভাবে মন্ত্রিসভা গঠন করে । অন্যদিকে , মুসলিম লীগ বাংলা ও পাঞ্জাবে অন্য দলগুলাের সাথে কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠন করে । কংগ্রেসের একগুঁয়েমি মনােভাবের জন্য কয়েকটি প্রদেশের মন্ত্রিসভা গঠন এবং মুসলমান প্রতিনিধিত্বের প্রশ্ন নিয়ে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হয় । এ সময় কংগ্রেস শাসিত প্রাদেশিক সরকারসমূহ সাম্প্রদায়িক মনােভাব নিয়ে শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকে । 

    কংগ্রেস শাসিত ভারতে সাতটি প্রদেশের আইন আদালত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে কংগ্রেসী পতাকা উত্তোলনসহ হিন্দুধর্মের প্রাধান্য বিস্তারে সচেষ্ট হয়ে ওঠে এবং বন্দেমাতরমকে জাতীয় সংগীত হিসেবে চালু করে । ফলে উপমহাদেশে হিন্দু - মুসলিম জনগণের সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উভয়ের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত করে তােলে । হিন্দু - মুসলিম জনগণের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে ১৯৪০ সালে পাঞ্জাবের রাজধানী লাহােরে মুসলিম লীগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় । এ অধিবেশনে মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্ব উদ্যাপন করেন । তাঁর মতে , ভারতে হিন্দু - মুসলমান দুটি পৃথক জাতি । 

    জাতির যেকোনাে সংজ্ঞা অনুযায়ী মুসলমান একটি জাতি । সুতরাং মুসলমানদের ভাষা , সাহিত্য ও সংস্কৃতি এবং সুন্দর জীবনযাপনের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র থাকা প্রয়ােজন । তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এ . কে . ফজলুল হক মুসলিম লীগের এ অধিবেশনে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে যে প্রস্তাব উত্থাপন করেন তাই বিখ্যাত ঐতিহাসিক লাহাের প্রস্তাব ' নামে খ্যাত ।

    মুসলিম লীগ তার সুচিন্তিত অভিমত ব্যক্ত করে যে , ভবিষ্যৎ ভারতে কোনাে সাংবিধানিক পরিকল্পনা কার্যকরী করতে হলে তা নিম্নবর্ণিত মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে রচিত হতে হবে । ভৌগােলিকভাবে সংলগ্ন বা সন্নিহিত ইউনিট বা প্রদেশগুলাের সীমানা নির্ধারণ করে সেগুলো নিয়ে একাধিক অঞ্চল গঠন করতে হবে ; যেন ভারতের উত্তর - পশ্চিম অঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল গােষ্ঠীবদ্ধ হয়ে ‘ স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ ' গঠন করতে পারে , যেখানে অঙ্গীভূত ইউনিট বা প্রদেশসমূহ হবে স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম । " 

    লাহাের প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য 

    ১। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে পরিহার করে ভৌগােলিক অবস্থান অনুযায়ী পাশাপাশি এলাকাসমূহকে পৃথক ‘ অঞ্চল ' হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে । 

    । ভারতের উত্তর - পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলােকে নিয়ে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে । 

    ৩। এ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য বা প্রদেশগুলাে হবে সম্পূর্ণরূপে স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম । 

    । সংখ্যালঘুদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সংবিধানে কার্যকর ও বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা থাকতে হবে । 

    ঐতিহাসিক লাহাের প্রস্তাব উপমহাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর - পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের ভৌগােলিক দূরত্ব ভাষাগত পার্থক্য ও কৃষ্টির পার্থক্যহেতু দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল । কিন্তু ১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জিন্নাহ ও গান্ধীর মধ্যে যে পত্রালাপ হয় সেখানে জিন্নাহ একাধিক রাষ্ট্রের কথা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলাে নিয়ে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের কথা উল্লেখ করেন ।

    রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি অনেক বাদানুবাদ হওয়া সত্ত্বেও মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৬ সালের ৯ এপ্রিল দিল্লিতে আইনসভার মুসলিম লীগ সদস্যদের একটি বিশেষ সভায় মিলিত হয়ে একাধিক রাষ্ট্রে একাধিক পরিবর্তে একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করে । ফলে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট মূল প্রস্তাবে উল্লেখ না । থাকলেও পাকিস্তান নামে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র জন্মলাভ করে । ইতিহাসে এ প্রস্তাব এতিহাসিক লাহাের প্রস্তাব নামে খ্যাত ।


    এইচএসসি এসাইনমেন্ট ২০২১ উত্তর /সমাধান ইতিহাস ১ম পত্র (এসাইনমেন্ট ১)



    Tag: এইচএসসি এসাইনমেন্ট ২০২১ উত্তর /সমাধান ইতিহাস ১ম পত্র (এসাইনমেন্ট ১),  ২০২১ সালের এইচএসসি ইতিহাস এসাইনমেন্ট সমাধান (১ম পত্র)
                                   
    Previous Post Next Post


    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com

     



    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com

    (সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Facebook এবং Telegram পেজ)