বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা PDF Download -bishwobidyaloye uccho shikkha PDF

বিশ্বজনীন জ্ঞান আদান - প্রদানের যাবতীয় উদ্ভাবন ও গবেষণা বিকাশের এবং জাতীয় মানবসম্পদ সৃষ্টি প্রক্রিয়ার সর্বোচ্চ প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাপীঠ হলাে বিশ্ববিদ্যালয় । বিশ্ববিদ্যা অন্বেষণে নিযুক্ত শিক্ষক , গবেষক ও শিক্ষার্থীগণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রসারিত করেন স্বদেশের মেধাশক্তি , উন্নয়নের জ্ঞানসূত্র , মানবসমাজ পরিচালনার প্রক্রিয়া , নেতৃত্ব বিকাশের সগ্রাম , সৃজন তৎপরতার বহুব্যাপ্ত শৃঙ্খলা । বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় মেধাবিকাশের মস্তিস্বরূপ । ‘

বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা ' শীর্ষক গ্রন্থে সর্বমােট ছাব্বিশটি নির্বাচিত প্রবন্ধ সংকলিত । শিক্ষাদার্শনিক বাট্রান্ড রাসেল বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখতে চেয়েছেন মানবমেধা বিকাশের মুক্তক্ষেত্র হিসেবে যাতে শিক্ষার্থীর সর্বাত্মক স্বাধীনসত্তার বিকাশ ঘটবে । তার মতে , ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শিল্পপতিগণ কৃষিমূলক শিক্ষার প্রতি আগ্রহী না হয়ে বরং অর্থোপার্জনে ও শিল্পের উন্নয়নে বেশি তৎপর । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে ‘ ইউনিভার্সিটির উদ্ভব ইউরােপে হলেও এর প্রথম প্রতিরূপ দেখা দিয়েছিল ভারতবর্ষের নালন্দা ও বিক্রমশীলার মাধ্যমে । পণ্ডিত শীলভদ্র রাজকীয় ক্ষমতা - প্রতিপত্তি ত্যাগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছিলেন জ্ঞানমাহাত্ম্য প্রসারের মহান লক্ষ্য নিয়ে । বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষার কথা প্রস্তাব করেছেন গুরুত্বসহ । জ্ঞান - বিজ্ঞানের বিকাশে মাতৃভাষার ভূমিকার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি । হুমায়ুন কবির বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির গােড়ার কথা তুলে ধরেছেন । জাতীয় জীবনের জন্য মানবসম্পদ সৃষ্টি আর জ্ঞানবিকাশের লক্ষ্যেই সৃষ্টি হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় । অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘ কেরানী তৈরির কারখানা ’ বলে অভিহিত করলেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানমূলক ভূমিকার জোরালাে সমর্থন করেছেন । অধ্যাপক মােজাফফর আহমদ লিখেছেন এডােয়ার্ড শিলস - এর শিক্ষাভাবনা বিষয়ে । শিক্ষাগবেষক এডােয়ার্ড শিস ইউরােপে বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ইতিহাস , লক্ষ্য - উদ্দেশ্য , প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তির বিকাশ নিয়ে সামগ্রিকভাবে যা লিখেছেন তার সারমর্ম ও যুক্তিজাল তুলে ধরেছেন তিনি ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুদণ্ড ও গন্তব্য নিয়ে লিখেছেন শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী । তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজসম্পৃক্ত ভূমিকার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করেছেন । বিশ্ববিদ্যালয়কে শাসকসম্প্রদায় সকল কালেই নিজেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ারে পরিণত কায় সেখানে জ্ঞানবিকাশের পথ ও স্বায়ত্তশাসনের প্রক্রিয়া বিনষ্ট হয়েছে । উচ্চস্তরে ইতিহাস শিক্ষাপ্রদানের রীতি , কৌশল ও প্রয়ােজনীয়তা নিয়ে লিখেছেন বীরেন্দ্রকুমার গুপ্ত । চিন্তাবিদ অম্লান দত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার ভাষা এবং মানুষ গঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেছেন । ‘ বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা : আমাদের দায় ও কর্তব্য নিয়ে লিখেছেন ইতিহাসবিদ সালাহউদ্দীন আহমদ । তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা ও সংকটের প্রেক্ষাপটে সর্বাত্মক দায়িত্ব - কর্তব্য নির্ণয় করেছেন । উচ্চশিক্ষার প্রচলিত সমস্যা - সংকট নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিকৌণিক বিশ্লেষণ করেছেন শামসুল হক । ভারতে সামগ্রিক উচ্চশিক্ষার পরিস্থিতি নিয়ে লিখেছেন অনিল ভট্টাচার্য । অধ্যাপক নজরুল ইসলাম তথ্যঋদ্ধ ও অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ প্রবন্ধ লিখেছেন উচ্চশিক্ষার চ্যালেঞ্জ নিয়ে । সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্নপূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য - উদ্দেশ্য , গবেষণার গুরুত্ব , উচ্চশিক্ষার মাধ্যম , উচ্চশিক্ষার অর্থায়ন ও ভৌগােলিক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার বৈষম্য নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য প্রকাশ করেছেন তিনি । সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করেছেন এবং এ ব্যাপারে তার পরামর্শ প্রস্তাব তুলে ধরেছেন । একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রাকপর্ব এবং রাজনীতিকরণের পরিসরে তার ব্যাহত ও বিপর্যস্ত পরিণতি নিয়ে লিখেছেন ‘ বিশ্ববিদ্যালয় খুন হয়ে যাচ্ছে ' শীর্ষক প্রবন্ধ । তথ্য - প্রযুক্তির নতুন পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার প্রক্রিয়াকে সুবিন্যস্তকরণে ‘ ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ , প্রক্রিয়া ও প্রয়ােজনীয়তা নিয়ে লিখেছেন মােহাম্মদ কায়কোবাদ । বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসনের অপরিহার্যতা নিয়ে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে শহিদুল ইসলাম লিখেছেন ‘ বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বায়ত্তশাসন ' শীর্ষক প্রবন্ধ । বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছেন বিশ্বজিৎ ঘােষ । বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুমাত্রিক ও দূরদর্শী উচ্চশিক্ষা পরিকল্পনা বিষয়ে অভিজ্ঞতাঋদ্ধ ও তথ্যবহুল বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন অধ্যাপক অনুপম সেন । উচ্চশিক্ষা ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আবদুল খালেক প্রকাশ করেছেন স্বকীয় দৃষ্টিভঙ্গি । এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামাে ও সমকালীন আর্থ - রাজনৈতিক প্রেক্ষিত বিশ্লেষিত । সৈয়দ আনােয়ার হােসেন লিখেছেন শিক্ষামন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রবন্ধ । জাতীয় জীবনের আশা - আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষাপটে ‘ স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় ' সম্পর্কে লিখেছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল । বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন আনােয়ারউল্লাহ চৌধুরী । সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎস ও শিক্ষা - ব্যবস্থার বিকাশ নিয়ে তাথ্যিক বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন রংগলাল সেন । প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যা কিভাবে লয়প্রাপ্ত হচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা বিকাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাসঙ্গিক ভূমিকা কী তা নিয়ে লিখেছেন রতনতনু ঘােষ । বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন মিল্টন বিশ্বাস ।

মমতাজউদ্দিন পাটোয়ারী বৈধ - অবৈধ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্বেষা ও অন্বয় নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেছেন । লেখকগণ স্ব স্ব লেখা গ্রন্থভুক্ত করার অনুমতি দেয়ায় আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি । এছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম - ঠিকানা সংযুক্ত হয়েছে গ্রন্থটিতে । আগ্রহী শিক্ষার্থীরা বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলাের নাম ঠিকানা জেনে সেগুলাের সঙ্গে সংযােগ স্থাপন করতে পারবে অনায়াসে । রচনার উৎস ও লেখক - পরিচিতি দেয়া হয়েছে গ্রন্থশেষে যা গবেষকদের কাজে লাগবে । গ্রন্থটি প্রকাশের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী পুস্তক - প্রকাশক ও অবসর প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী জনাব আলমগীর রহমান সাহেবের সযত্ন - প্রচেষ্টা স্মরণ করছি কৃতজ্ঞতাসহ । ছােট বােন মুক্তাশ্রী ঘােষ বইটির গ্রুপ দেখে সহায়তা করেছে । তার প্রতি আমার আশীর্বাদ রইল বইটি প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত সকলকে ধন্যবাদ । শিক্ষক , শিক্ষার্থী , বিদ্যানুরাগী ও গবেষকদের নিকট গ্রন্থটি সমাদৃত হলে লেখক সম্পাদনাকর্মের সার্থকতা বােধ করবে ।