বিজয় দিবসের ইতিহাস,বক্তব্য,স্লোগান, কবিতা, স্টাটাস,এসএমএস, ছবি || বিজয় দিবসের তাৎপর্য

বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

আসছালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক সবাই কেমন আছেন। আসা করি সবাই ভালো আছেন। বন্ধুরা আসছে মহান বিজয় দিবস। তাই আমাদের মহান বিজয় দিবস সম্পর্কে অনেক কিছু জানার আছে।আজকে আমরা মহান বিজয় দিবস সম্পর্কে এই পোস্টে যা যা আলোচনা করবো একনজরে দেখে নিন।

       
       
     

    ভূমিকা

     ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্য-বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠার চিরস্মরণীয় দিন।

    ৯ মাসের সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে যৌথ বাহিনীর কাছে। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যালোকে উদ্ভাসিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যে দিবসটি সাড়ম্বরে উদযাপন করা হয়।

    এবারের বিজয় দিবস উদযাপিত হবে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক শক্তির ধারক-বাহকদের প্রত্যাখ্যান করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে বিজয়ী করার প্রত্যয়ে উজ্জীবিত জাতি দিবসটি উদযাপন করবে।

    বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তারা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের আত্মত্যাগের কথা, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন সম্ভব হয়।

    আজকের দিনে বিজয়োল্লাসে ভাসবে দেশ, আনন্দে উদ্বেলিত হবে গোটা জাতি। রাজধানী ঢাকা থেকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে বিজয়ের আনন্দ। উৎসবের সমারোহে জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদকে।

    যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপনে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্রত্যুষে ঢাকার তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর এলাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের অনুষ্ঠানমালার সূচনা ঘটবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা জানাবেন। বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে।

    দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সন্ধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন বাহিনীর বাদক দল বাদ্য বাজাবে।

    দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করবে।

    এ ছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা জানানো হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সব শিশু পার্ক ও জাদুঘরগুলো বিনা টিকিটে প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

    বিজয় দিবস উপলক্ষে নৌবাহিনীর নির্ধারিত জাহাজ আজ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দুপুর ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণ এসব জাহাজ পরিদর্শন করতে পারবেন। ঢাকার সদরঘাট. নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও বরিশালে জাহাজ রাখা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। এ বছর ঢাকার জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে না। তবে দেশের সব জেলা ও উপজেলা সদরে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে।

    অন্যান্য রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দল ও সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচির আয়োজন করবে। আওয়ামী লীগের দু'দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশের সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন; সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন; সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন; সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, কবর জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং আগামীকাল সোমবার বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজয় দিবসের আলোচনা সভা। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভায় জাতীয় নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা বক্তব্য দেবেন।

    ১৪ দল আজ থেকে দেশের সব জেলা-উপজেলায় পক্ষকালব্যাপী 'বিজয় মঞ্চ' স্থাপন করে নানা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই 'বিজয় মঞ্চে' স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক আলোচনা সভা, বিজয় র‌্যালি, আলোকচিত্র, ডকুমেন্টারি ও চলচ্চিত্র প্রদর্শন, মুক্তিযুদ্ধের গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার প্রকাশ করা হবে।

    বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সকাল ৯টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। বিএনপির কর্মসূচিতে আরও রয়েছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ জেলা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকালে শেরেবাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন, বিকেল ৩টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয় শোভাযাত্রা এবং সন্ধ্যায় কার্যালয়গুলোতে আলোকসজ্জা।

    এছাড়া জাতীয় পার্টি, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, বাসদ, বিকল্পধারা, এলডিপি, গণফোরাম, বাংলাদেশ জাসদ, জেএসডি, গণতান্ত্রিক বাম জোট, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বাসদ (মার্ক্সবাদী), জাকের পার্টিসহ এসব দলের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ '৭১, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নজরুল একাডেমি, ছায়ানট, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, মহিলা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ এবং গুলশান রানারস সোসাইটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

    বিজয় দিবস (বাংলাদেশ)

    বিজয় দিবস বাংলাদেশে বিশেষ দিন হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের সর্বত্র পালন করা হয়। প্রতি বছর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশে দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়। ২২ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারীভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।[১] ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।[২] এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। এ উপলক্ষে প্রতি বছর বাংলাদেশে দিবসটি যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়। ১৬ই ডিসেম্বর ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা ঘটে। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত সামরিক কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা যোগ দেন। কুচকাওয়াজের অংশ হিসেবে সালাম গ্রহণ করেন দেশটির প্রধান মাননীয় রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী। এই কুচকাওয়াজ দেখার জন্য প্রচুরসংখ্যক মানুষ জড়ো হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে ঢাকার অদূরে সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে থাকেন।

    পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ

    ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী এই দিনে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন ঢাকার কেন্দ্রস্থলে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের পক্ষে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। তিনি যৌথবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক ও ডেপুটি চীফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী উপস্থিত ছিলেন না। আত্মসমর্পণ দলিলের ভাষ্য ছিল নিম্নরূপ:

    পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো। পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনীগুলো যে যেখানে আছে, সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ করবে।

    এই দলিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন হবে। নির্দেশ না মানলে তা আত্মসমর্পণের শর্তের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে এবং তার প্রেক্ষিতে যুদ্ধের স্বীকৃত আইন ও রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আত্মসমর্পণের শর্তাবলীর অর্থ অথবা ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো সংশয় দেখা দিলে, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।

    লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জেনেভা কনভেনশনের বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করছেন এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সামরিক ও আধা-সামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুবিধার অঙ্গীকার করছেন। লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীন বাহিনীগুলোর মাধ্যমে বিদেশি নাগরিক, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও জন্মসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিদের সুরক্ষাও দেওয়া হবে।

    পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিল

    পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পনের দলিলে ডিসেম্বর ১৬ ,১৯৭১ বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.৩১ মিনিটে ঢাকার রমনা রেস কোর্স ময়দানে জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী সই করেন।

    পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিল তিন প্রস্থে প্রস্তুত করা হয়েছিল। একটি প্রস্থ ভারত সরকার এবং দ্বিতীয় প্রস্থ পাকিস্তান সরকারের নিকট সংরক্ষিত আছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রাপ্য দলিলটি বাংলাদেশে নেই।

    যে টেবিলে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছিল তা ঢাকা ক্লাব থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই টেবিলটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ৩৭ সংখ্যক প্রদর্শনী কক্ষে সংরক্ষিত আছে।

    আত্মসমর্পণের দলিলের নাম ছিল "INSTRUMENT OF SURRENDER".

    পরিপ্রেক্ষিত

    ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসিত ভারত বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়। পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় অংশের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা শুরু করে। অতঃপর জনযুদ্ধের আদলে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা ঘটে।

    মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে ক্রমান্বয়ে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে পড়ে যে উপায়ন্তর না দেখে ঘটনা ভিন্ন খাতে পরিচালিত করতে তারা ডিসেম্বরের ৩ তারিখ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এতে ভারতের প্রধান মন্ত্রী বলেন যে “বাংলাদেশে যে যুদ্ধ চলে আসছিল তা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।” ভারতের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে যৌথবাহিনী তৈরি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ৪ঠা ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ভারতীয় স্থলবাহিনীর সম্মুখ অভিযান শুরু হয় চারটি অঞ্চল থেকে: (১) পূর্বে ত্রিপুরা রাজ্য থেকে তিন ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ৪র্থ কোর সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা-নোয়াখালী অভিমুখে; (২) উত্তরাঞ্চল থেকে দু’ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ৩৩তম কোর রংপুর-দিনাজপুর-বগুড়া অভিমুখে; (৩) পশ্চিমাঞ্চল থেকে দু’ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ২য় কোর যশোর-খুলনা-কুষ্টিয়া-ফরিদপুর অভিমুখে; এবং (৪) মেঘালয় রাজ্যের তুরা থেকে ডিভিশন অপেক্ষা কম আর একটি বাহিনী জামালপুর-ময়মনসিংহ অভিমুখে।[৩০] যৌথবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে সারা দেশের সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে পাকিস্তানীরা পিছু হটতে শুরু করে। একের পর এক পাকিস্তানী ঘাঁটির পতন হতে থাকে। পাকিস্তানীরা অল্প কিছু জায়গায় তাদের সামরিক শক্তি জড় করেছিল; যৌথবাহিনী তাদের এড়িয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ঢাকার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। বাংলাদেশের আপামর জনতাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার মাত্র ১৩ দিনের মাথায় যৌথবাহিনী ঢাকার দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ইতোমধ্যে পর্যদুস্ত ও হতোদ্যম পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান ৯৩,০০০ হাজার সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। স্বাক্ষরিত হয় আত্মসমর্পণের দলিল। এরই মাধ্যমে নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অবসান হয়; প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙ্গালী জাতির প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।

    আত্মসমর্পণ দলিলের ভাষ্য

    আত্মসমর্পণ দলিলের লেখা এখন বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারত সরকারের পাবলিক সম্পত্তি এবং এটি দিল্লি জাতীয় যাদুঘর প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে (জানুয়ারি ২০১২ হিসাবে। দলিলের লেখা ইংরেজিতে ছিল এবং তা হল:

    পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো। পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনীগুলো যে যেখানে আছে, সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ করবে।

    এই দলিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন হবে। নির্দেশ না মানলে তা আত্মসমর্পণের শর্তের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে এবং তার প্রেক্ষিতে যুদ্ধের স্বীকৃত আইন ও রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আত্মসমর্পণের শর্তাবলীর অর্থ অথবা ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো সংশয় দেখা দিলে, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।

    লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জেনেভা কনভেনশনের বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করছেন এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সামরিক ও আধা-সামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুবিধার অঙ্গীকার করছেন। লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীন বাহিনীগুলোর মাধ্যমে বিদেশি নাগরিক, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও জন্মসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিদের সুরক্ষাও দেওয়া হবে।

    বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

    বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল ১৯৭১ সালে সংঘটিত তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগ্রাম, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়লে একটি জনযুদ্ধের আদলে গেরিলাযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে। ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ঢাকায় অজস্র সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পুলিশ ও ই.পি.আর.-কে হত্যা করে এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল আওয়ামী লীগ প্রধান বাঙালিদের তৎকালীন জনপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। পার্বত্য চট্টগ্ৰামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ৮ম পূৰ্ব বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-প্ৰধান মেজর জিয়াউর রহমান ও চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা এম. এ. হান্নান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালি জাতির স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।

    পরিকল্পিত গণহত্যার মুখে সারাদেশে শুরু হয়ে যায় প্রতিরোধযুদ্ধ; জীবন বাঁচাতে কয়েক হাজার আওয়ামী লীগের নেতারা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ, সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্য এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ দেশকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর কব্জা থেকে স্বাধীন করতে কয়েক মাসের মধ্যে গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী। গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়ে গেরিলা বাহিনী সারাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে নুন্যতম অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সাহায্য লাভ করে। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে যখন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে, তখন তারা গেরিলা বাহিনীর কাছে পরাজয়ের লজ্জা এড়াবার জন্য এবং স্বাধীনতা যুদ্ধকে আন্তর্জাতিক সংঘর্ষে পরিণত করার উদ্দেশ্যে ৩ ডিসেম্বর ভারতে বিমান হামলার মাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

    অত:পর ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরিভাবে জড়িয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ইতোমধ্যে পর্যদুস্ত ও হতোদ্যম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যুদ্ধ বিরতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান ৯৩,০০০ হাজার সৈন্যসহ আক্শ্মীকভাবে যুদ্ধবিরতির পরিবর্তে আত্মসমর্পণের দলীল সই করে। এসময় পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ থেকে দলীলে সই করেন আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। এরই মাধ্যমে নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের অবসান হয়। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ আর প্ৰায় তিনি মাসেরও অধিক সময় রয়ে যায়। অবশেষে অনেক কূটনৈতিক চাপের মুখে ভারত বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

    পটভূমি

    ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীন হয় এবং ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান এবং হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় ভারত। নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তান দুই হাজার মাইলের ব্যবধানে অবস্থিত দুটি প্রদেশের সমন্বয়ে গঠিত হয় - পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তান। ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে যোজন যোজন ব্যবধানে অবস্থিত এ দুটি অংশের মধ্যে মিল ছিল কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মে। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই এর পূর্ব অংশ পশ্চিম অংশের তুলনায় নানাভাবে বঞ্চিত হতে থাকে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছর ছিল পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস।

    বাংলা ভাষা আন্দোলন

    বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশে) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তদানীন্তন পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবীর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও বস্তুত এর বীজ রোপিত হয়েছিল বহু আগে, অন্যদিকে এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।

    ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান অধিরাজ্য ও ভারত অধিরাজ্য নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। পাকিস্তানের ছিল দু’টি অংশ: পূর্ব বাংলা (১৯৫৫ সালে পুনর্নামাঙ্কিত পূর্ব পাকিস্তান) ও পশ্চিম পাকিস্তান। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটারের অধিক দূরত্বের ব্যবধানে অবস্থিত পাকিস্তানের দুটি অংশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেকগুলো মৌলিক পার্থক্য বিরাজমান ছিল। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান অধিরাজ্য সরকার ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব বাংলায় অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয় ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কার্যতঃ পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি এবং মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ফলস্বরূপ বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

    ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে রফিক, সালাম, এম. এ. ক্লাসের ছাত্র বরকত ও আব্দুল জব্বারসহ আরও অনেকে। এছাড়া ১৭ জন ছাত্র-যুবক আহত হয়। শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব বাংলায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারির ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সাধারণ জনতা পূর্ণ হরতাল পালন করে এবং সভা-শোভাযাত্রাসহকারে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শফিউর রহমান শফিক, রিক্সাচালক আউয়াল এবং এক কিশোর। ২৩ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়িয়ায় ছাত্র-জনতার মিছিলেও পুলিশ অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। এ নির্লজ্জ, পাশবিক , পুলিশি হামলার প্রতিবাদে মুসলিম লীগ সংসদীয় দল থেকে সেদিনই পদত্যাগ করেন। ভাষা আন্দোলনের শহীদ স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গনে রাতারাতি ছাত্রদের দ্বারা গড়ে ওঠে শহীদ মিনার, যা ২৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন শহীদ শফিউর রহমানের পিতা। ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক জনাব আবুল কালাম শামসুদ্দীন।

    ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৪ সালের ৭ই মে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হলে ২১৪ নং অনুচ্ছেদে বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লিখিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা প্রবর্তিত হয়। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন জারি করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন, মানুষের ভাষা এবং কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে যা বৈশ্বিক পর্যায়ে সাংবার্ষিকভাবে গভীর শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদযাপন করা হয়।

    ১৬ই ডিসেম্বর নিয়ে কবিতা | বিজয় দিবস কবিতা

    ঘুম ভাঙ্গে রোজ
    -সাজজাদ হোসাইন খান

    বেগুন ফুলে প্রজাপতির হাসি
    কোথায় আছে এমন মজার বাঁশি
    ভর দুপুরে রাখালিয়া বাজায় হেসে হেসে,
    ধানের ক্ষেতে টিয়া পাখির মেলা
    আসমানে যার নীল ধবলের ভেলা
    হেলে দুলে জমায় পাড়ি, পাহাড় ঘেঁষে ঘেঁষে।

    জোছনা মাখা চাঁদের সাদা ডিম
    রাত নিশীথে ঝরায় কেমন হিম
    সিক্ত করে ফুলপরীদের রঙিন যত পাখা,
    অনেক ভোরে সূর্যমামা হাঁটে
    উদাস করা যোজন যোজন মাঠে
    সাতটি রঙের চেরাগ যেন উপুড় করে রাখা।

    সরষে ফুলে হলদে হিরণ নাচে
    কোন সে দেশের এমন শোভা আছে
    রূপেতে যার হাজার কবি শব্দেরই জাল বোনে,
    মন উড়ে যায় মাছরাঙাদের ভিড়ে
    পাতার ফাঁকে টুনটুনিদের নীড়ে
    ঘুম ভাঙে রোজ মুয়াজ্জিনের দরাজ গলা শুনে।

    স্বাধীনতার ঋণ
    -রওশন মতিন

    বিজয় রথে আসাদের শার্টে উড়িয়ে নিশান,
    দুঃশাসনকে রুখে দিতে প্রতিবাদের ঐক্যতান।
    এদেশটা কার, উত্তাল বাংলা জাগ্রত জনতার,
    বীর ইসা খাঁ, সূর্যসেন, তিতুমির আর অগ্নিবীণার।
    অকুতোভয় বঙ্গবন্ধু মুক্তচিত্ত অটল দীপ্ত,
    বজ্রকণ্ঠে মুক্তির দিশা, স্বাধীনতার জন্য ক্ষিপ্ত।

    যে রোদ্দুরে দস্যি ছেলে তেপান্তরে উড়ায় ঘুড়ি,
    অবাক চোখে তাকিয়ে দ্যাখে, মুক্ত ডানার উড়াউড়ি,
    সে কি জানে লাল-সবুজের এগিয়ে চলার বিজয় গাঁথা,
    তার বুকে কি মেলছে ডানা লাল-সবুজের স্বাধীনতা।

    দিন কি কেবল বদলে যাওয়া দিন বদলের দিন,
    এই আলোতে উদ্ভাসিত বিজয় দীপ্ত স্বাধীনতার ঋণ।

    বিজয় আমার
    -এ কে আজাদ

    বিজয় আমার
    পতাকার রং
    মানচিত্রের রেখা,
    বিজয় আমার
    আনন্দ ঘন
    ভিটে-মাটি ফিরে দেখা।

    বিজয় আমার
    স্মৃতির মিনার
    সৌধ চূড়ার গান,
    বিজয় আমার
    স্বাধীন দেশের
    সুখভরা অফুরান।

    স্বাধীনতা তুমি
    -কাজী আবুল কাসেম রতন

    স্বাধীনতা তুমি
    বাংলা দেশের
    বাংলা মায়ের
    শুভেচ্ছা।

    স্বাধীনতা তুমি
    দাদুর মুখে
    রূপকথারই
    সু-কিচ্ছা
    স্বাধীনতা তুমি
    সূর্যে ভাষা
    রক্তিম হেম।

    স্বাধীনতা তুমি
    মুক্তি সেনার
    মুক্ত প্রেম।

    স্বাধীনতা তুমি
    উড়ে যাওয়া,
    স্বাধীন পাখির
    প্রত্যাশা।

    স্বাধীনতা তুমি
    প্রিয় জনতার
    প্রেম প্রীতি জয়
    ভালবাসা।

    বিজয় দিবস
    -মোস্তফা কামাল সোহাগ

    ডিসেম্বরের ষোল তারিখ
    বিজয় দিবস হয়
    এই বিজয়টা ছিনে আনতে
    লক্ষ প্রাণ ক্ষয়।

    বিজয় দিবস এলে আমরা
    দেশের গান গাই
    রাজপথে বিজয় মিছিল
    দেখে সুখ পাই।

    বিজয় দিবসে বিজয় নিশান
    দেখে মন ভরে
    আনন্দে সব মাতোয়ারা
    বাংলা মায়ের ঘরে।

    যুদ্ধ করে জীবন দিয়ে
    বিজয় আনলো যারা
    সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান
    ইতিহাসে তারা।

    আলো ও আঁধার
    -ফরিদ আহমদ ফরাজী

    আঁধার আলো মিশলেই কালো
    আলো শুধুই আলো
    আঁধারে কে থাকতে চায়?
    আলোর প্রদীপ জ্বালো।
    হালাল হারাম মিললেই হারাম
    হালাল শুধুই হালাল
    হালাল কে পছন্দ করেন
    আল্লাহ জাল্লি-জালাল।

    বিজয় তুমি
    -ফরিদ আহমেদ হৃদয়

    বিজয় তুমি মুক্ত একটি পাখি
    গগন তলে করছ ডাকাডাকি।
    বিজয় তুমি গোলাপ জবা ফুল
    শীতল জলের নদীর দুটি কুল।

    বিজয় তুমি চাষির ফসল মাঠ
    মাঠ জুড়ে ফলে ধান, গম আর পাট।
    বিজয় তুমি লাল-সবুজ পতাকা
    মুক্ত হাওয়ায় উড়ছ আঁকা বাঁকা।

    বিজয় তুমি মায়ের মুখের হাসি
    যেই হাসিকে সবাই ভালবাসি।
    বিজয় তুমি একটি স্বাধীন দেশ
    নামটি হলো সোনার বাংলাদেশ।


    ষোলই ডিসেম্বরে
    -হোসেন মোতালেব

    একটি পাখি বাসার আশে
    করছে উড়াউড়ি
    এ বন থেকে ঐ বনেতে
    করছে ঘুরাঘুরি।

    অবশেষে বাঁধল বাসা
    দীর্ঘ ন’মাস পরে
    সেই পাখিটা তুলল ছানা
    ষোলই ডিসেম্বরে।

    সেই ছানাটি জানান দিল
    বিশ্ববাসী শোন
    বাংগালী এক বীরের জাতি
    নয়তো ভিত কোন।

    লক্ষ ভাইয়ের রক্তে কেনা
    সবুজ বরণ পাখি
    বিশ্ব সভায় সেই পাখিটা
    করছে ডাকাডাকি।

    সেই পাখিটা দেয় পরিচয়
    বাংলাদেশের নামে
    কেনা হল সেই পাখিটা
    লক্ষ প্রাণের দামে।

    মানুষ ওজন
    -মেজু আহমেদ খান

    টাকা ছাড়া হয় না কি ভাই মানুষ ওজন।
    টাকাটা তো ক্ষণস্থায়ী সে-ই কি স্বজন?
    টাকা ছাড়াও মানুষ ওজন হয়
    তাই টাকাটা আমার কাছে সবার আগেই নয়।

    টাকা দিয়ে অনেক কিছুই যায় না কেনা ভাই
    বিদ্যা বুদ্ধি মান ইজ্জত আর কাম্য অনেকটাই।

    মহান বিজয়

    বিজয় তুমি ১৬ই ডিসেম্বর, লাখ শহীদের রক্ত মাখা প্রাণ—
    বিজয় তুমি শাশ্বত বাংলার সোনালী ফসল-সরষে ফুলের ঘ্রাণ।
    বিজয় তুমি সুন্দর বনের চিত্রাহরিণ আর দোয়েল,শ্যামা,টিয়া—
    বিজয় তুমি উত্তাল সমুদ্র ঘেরা, সেন্ট মার্টিন-কুতুবদিয়া।
    বিজয় তুমি শীতের সকালে শিশির ভেজা ঘাস,
    বিজয় তুমি বিশ্বখ্যাত বাংলার সোনালী আঁশ।
    বিজয় তুমি জেমসের সোনার বাংলা-আমি তোমায় ভালবাসি,
    বিজয় তুমি হায়দার হোসেনের গণতন্ত্রের হাসি।
    বিজয় তুমি লাখ শহীদের রক্তভেজা দান,
    বিজয় তুমি লাখ বাঙালীর মুক্তি কামী প্রাণ।
    বিজয় তুমি জর্জ হ্যারিসানের স্বপ্নের বাংলাদেশ—
    বিজয় তুমি লজ্জাবতী পল্লী তরুনীর মেঘবরন কেশ।
    বিজয় তুমি বিশ্ব মানচিত্রে নতুন একটা দেশ—
    বিজয় তুমি ছিনিয়ে এনেছ সোনার বাংলাদেশ।।

    মহান বিজয় দিবস

    - আবু জাফর বিঃ

    মহান বিজয় দিবস ১৬ডিসেম্বর, জাতির অহঙ্কার,
    এ বিজয়কে রাখবো সমুন্নত এই হোক অঙ্গিকার।
    একাত্তরে সাড়ে সাতকোটি বাঙালি হয়েছিল ঐক্যবদ্ধ,
    ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় ৯মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ।
    ত্রিশ লক্ষ শহীদের বুকের তাজা রক্ত, দিয়ে বিসর্জন,
    অবশেষে হানাদার পাকিস্তানবাহিনী করল আত্মসমর্পণ।

    সেদিন তারা বাঙালিদের কাছে করেছিল শীর অবনত,
    বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠালাভ করেছিল, স্বাধীন সার্বভৌমত্ব।
    মুক্তিকামী জনতা প্রায় খালি হাতে, দাঁড়িয়েছিল রুখে,
    জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাষান বেঁধে বুকে।
    যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা,
    ভুলবো না সেই দুঃসাহসী বীরত্বপূর্ণ মুক্তিযোদ্ধাদের কথা।
    জীবন উৎসর্গ করে উপহার দিয়েছে লাল-সবুজের পতাকা,
    এনেছে ৫৬হাজার বর্গ মাইলের স্বাধীন বাংলার সীমারেখা।

    মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ;
    ৪৫বছর পরেও কি করতে পেরেছি তাদের স্বপ্ন পূরণ?
    দুর হয়নি বৈষম্য বিভাজন, আসেনি অর্থনৈতিক মুক্তি,
    রুখতে হবে সকল বঞ্চনা, সৃষ্টি করতে হবে গণশক্তি।
    লাখো শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত আজকের এই বিজয়,
    সকলে মিলে গড়বো দেশ, মানবো না কোনো পরাজয়।

    ★ লাল সবুজের স্মৃতি ঘেড়া নিশান আমার উড়ে।
     কিনেছিলাম রক্ত দিয়ে বিজয় ডিসেম্বরে।
     মাগো তোমার চোখের জলে,
     জয় বাংলা ধ্বনি তুলে,
     হাজার ছেলে প্রাণ দিল ঐ নতুন আশার ভোরে।
     রক্ত দিয়ে কেনা এই বিজয় ডিসেম্বরে।

      মাগো তুমি হায়েনা ভয়ে কাঁদছ দেখে তাই।
     তোমার ছেলে ঘর ছেড়েছে তোমায় দিতে ঠাঁই
     বিশ্বমাঝে উচ্চাসনে,
     পাক বাহিনীর নির্যাতনে,
     আর হবেনা শোষন এবার তোমার আপন ঘরে।
     রক্ত দিয়ে কেনা এই বিজয় ডিসেম্বরে। 

    বিজয় দিবসের উক্তি |১৬ই ডিসেম্বর এর স্টাটাস মেসেজ এসএমএস 

    শর ভাবে, ছুটে চলি, আমি তো স্বাধীন, ধনুকটা একঠাঁই বদ্ধ চিরদিন। ধনু হেসে বলে, শর, জান না সে কথা- আমারি অধীন জেনো তব স্বাধীনতা।

    - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম

    - বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 

    এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উত্খাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।

    - বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

    আমি, মেজর জিয়া, বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির প্রাদেশিক কমাণ্ডার-ইন-চিফ, শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি

    - জিয়াউর রহমান 

    স্বাধীনতা তুমি - রবি ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান

    - শামসুর রাহমান

    স্বাধীনতা তুমি কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা

    - শামসুর রাহমান

    স্বাধীনতা তুমি - শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা

    - শামসুর রাহমান

    স্বাধীনতা তুমি - রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার

    - শামসুর রাহমান 

    স্বাধীনতা তুমি বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর শাণিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ

    - শামসুর রাহমান

    স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন

    - সংগৃহীত

    এই স্বাধীনতা তখনি আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলার কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে

    - বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 

    যখন তুমি কোন একজন মানুষকে ভিন্নভাবে বিচার করো সে কারো কী ক্ষতি করছে তা না দেখে বরং সে শুধু অন্যরকম এজন্যে, তখনই স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন হয়।

    - বারাক ওবামা

    সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন। তাই মাটি ও মানুষকে কেন্দ্র করে গণমানুষের সুখ শান্তি ও স্বপ্ন এবং আশা-আকাঙ্খাকে অবলম্বন করে গড়ে উঠবে বাংলার নিজস্ব সাহিত্য-সংস্কৃতি।

    - বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

    যে মাঠ থেকে এসেছিল স্বাধীনতার ডাক, সেই মাঠে আজ বসে নেশার হাট

    - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

    জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন

    - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

    স্বাধীনতা, সে আমার – স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন – স্বাধীনতা – আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।

    - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

    ধর্ষিতা বোনের শাড়ী ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা

    - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

    এখন যদি কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতা হরণ করতে চায়, তাহলে সে স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্যে মুজিব সর্ব প্রথম তার প্রাণ দেবে।

    - বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

    স্বাধিকার সংগ্রাম থেকেই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা। আজ যদি সেই জাতীয়তাবাদী চেতনা বিসর্জন দিয়ে পশ্চিমি সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ করি তা আমাদের চরম দীনতা ও নৈতিক পরাজয়। আমাদের বিশ্বায়নের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন বাংলায়ন।

    - সৈয়দ আবুল মকসুদ

    তাঁর চোখ বাঁধা হলো। বুটের প্রথম লাথি রক্তাক্ত করলো তার মুখ। থ্যাতলানো ঠোঁটজোড়া লালা-রক্তে একাকার হলো, জিভ নাড়তেই দুটো ভাঙা দাঁত ঝরে পড়লো কংক্রিটে। মা…..মাগো….. চেঁচিয়ে উঠলো সে।

    - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

    পাঁচশো পঞ্চান্ন মার্কা আধ-খাওয়া একটা সিগারেট প্রথমে স্পর্শ করলো তার বুক। পোড়া মাংসের উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো ঘরের বাতাসে। জ্বলন্ত সিগারেটের স্পর্শ তার দেহে টসটসে আঙুরের মতো ফোস্কা তুলতে লাগলো।

    - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

    তাকে চিৎ করা হলো। পেটের ওপর উঠে এলো দু’জোড়া বুট, কালো ও কর্কশ। কারণ সে তার পাকস্থলির কষ্টের কথা বলেছিলো, বলেছিলো অনাহার ও ক্ষুধার কথা।

    - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

    সে তার দেহের বস্ত্রহীনতার কথা বলেছিলো- বুঝি সে-কারণে ফর ফর করে টেনে ছিঁড়ে নেয়া হলো তার শার্ট। প্যান্ট খোলা হলো। সে এখন বিবস্ত্র, বীভৎস।

    - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ 

    তার দুটো হাত- মুষ্টিবদ্ধ যে-হাত মিছিলে পতাকার মতো উড়েছে সক্রোধে, যে-হাতে সে পোস্টার সেঁটেছে, বিলিয়েছে লিফলেট, লোহার হাতুড়ি দিয়ে সেই হাত ভাঙা হলো। সেই জীবন্ত হাত, জীবন্ত মানুষের হাত।

    - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

    তার দশটি আঙুল- যে-আঙুলে ছুঁয়েছে সে মার মুখ, ভায়ের শরীর, প্রেয়সীর চিবুকের তিল। যে-আঙুলে ছুঁয়েছে সে সাম্যমন্ত্রে দীক্ষিত সাথীর হাত, স্বপ্নবান হাতিয়ার, বাটখারা দিয়ে সে-আঙুল পেষা হলো। সেই জীবন্ত আঙুল, মানুষের জীবন্ত উপমা। লোহার সাঁড়াশি দিয়ে, একটি একটি করে উপড়ে নেয়া হলো তার নির্দোষ নখগুলো। কী চমৎকার লাল রক্তের রঙ।

    - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

    সে এখন মৃত। তার শরীর ঘিরে থোকা থোকা কৃষ্ণচূড়ার মতো ছড়িয়ে রয়েছে রক্ত, তাজা লাল রক্ত। তার থ্যাতলানো একখানা হাত পড়ে আছে এদেশের মানচিত্রের ওপর, আর সে হাত থেকে ঝরে পড়ছে রক্তের দুর্বিনীত লাভা-

    - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

    অনেক রক্ত আর ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই স্বাধীনতা। কাজেই এ দায়িত্ব পালনে সেনাবাহিনীর সজাগ ও সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। যাতে এই স্বাধীনতা নিয়ে যেন কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে।

    - প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

    অবিভক্ত ভারতবর্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রামের মানুষের একটি বিপুল ভূমিকা ছিল ঠিক তেমনি বাংলাদেশকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রেও চট্টগ্রামের ভূমিকা কোনো অংশে কম নয়। সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে স্বাধীন বাংলাদেশের বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে।

    - প্রণব মুখার্জি

    কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,’পেয়েছি, পেয়েছি’।

    - হেলাল হাফিজ

    কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে। কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে, বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে।

    - হেলাল হাফিজ

    কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে, সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে।

    - হেলাল হাফিজ 

    এখনতো চারিদিকে রুচির দুর্ভিক্ষ! একটা স্বাধীন দেশে সুচিন্তা আর সুরুচির দুর্ভিক্ষ! এই দুর্ভিক্ষের কোন ছবি হয়না।

    - জয়নুল আবেদিন 

    ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা,আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন।আমি বাংলাদেশের জনগনকে আহবান জানাইতেছি যে,যে যেখানে আছো,যাহার যা কিছু আছে,তাই নিয়ে রুখে দাড়াও,সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো।পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও

    - বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 

    বিজয়ীরা ঘুমিয়ে পড়ে, পরাজিতরা ওৎ পেতে থাকে - নির্ঘুম

    - আব্দুল জব্বার খাঁন

    বিজয় দিবসের তাৎপর্য | ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের তাৎপর্য


    বিজয় দিবসের তাৎপর্য সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার মহান মন্ত্রের উচ্চারণে যেমন ফ্রান্সের রাজনৈতিক আকাশে সূচনা হয়েছিল প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের; সাম্য, স্বাধীনতা ও স্বাচ্ছন্দ্যের অন্বেষণের স্বতঃস্ফূর্ত দাবি যেমন আমেরিকার ব্রিটিশ কলোনিগুলোকে উদ্বুদ্ধ করেছিল স্বাধীনতার সংগ্রামে- তেমনি সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়পরায়ণতার নিশ্চয়তা বিধানের দাবি বাংলাদেশের জনগণকে উদ্দীপ্ত করেছিল। বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে প্রতিষ্ঠার জীবনমরণ সংগ্রামে আত্মনিবেদনে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলে ঘোষিত স্বাধীনতা সনদে তারই অনুরণন পরিস্ফুট হয়ে ওঠে।

    এই জাতির বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। মুক্তিযোদ্ধা তথা সমগ্র জনসমষ্টির সফলতা ও গৌরবের মাস এটি। আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবদীপ্ত অধ্যায় রচিত হয়েছে এ মাসেই। তাই ডিসেম্বরে পা দিয়ে সবাই আমরা অনুভব করি শক্ত মাটির স্পর্শ। লাভ করি এক অনির্বচনীয় আত্মবিশ্বাস। এক অনিন্দ্য সুন্দর আত্মশ্লাঘা।

    একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অর্জন এই জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন। মাত্র কিছুসংখ্যক বিপথগামী ছাড়া সবাই এজন্য সংগ্রাম করেছেন। সহ্য করেছেন সীমাহীন যন্ত্রণা। কিন্তু লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়সঙ্কল্প ছিলেন সবাই। তাই অতি অল্প সময়ের মধ্যে এত বড় অর্জন সম্ভব হয়েছে। বৃহৎ অর্জনের জন্য ঐক্যবদ্ধ জাতীয় উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই।

    এমন বৃহৎ অর্জনের পরেও কিন্তু জাতি সেই ঐক্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। মাত্র চার দশকের মধ্যেই জাতীয় ঐক্য খণ্ডছিন্ন হয়েছে। জাতীয় লক্ষ্যও অস্পষ্ট হয়েছে। জাতীয় সংস্কৃতির প্রাণশক্তি আজ ক্ষয়িষ্ণু। দুর্যোগে অনেকটা ম্রিয়মান। জাতিশক্তির যে অমিত তেজ বিন্ধ্যাচল টলিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল তা অনেকটা চলচ্ছক্তিহীন, নিশ্চল। কিন্তু কেন এমন হলো?

    সাম্প্রতিক কালে কিছু কিছু কথা প্রচলিত হয়েছে। ‘স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি’ তেমনি একটি বাক্যাংশ। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ তেমনি আর একটি। জোরেশোরে প্রচারিত হচ্ছে একটি বিশেষ মহল থেকে। একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে। ডিসেম্বর মাসে এসবের প্রচার যেন আর একটু বেশি। সরকার নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন ইদানীং অনেকেই দেখেন না। যারা মাঝে মধ্যে খোলেন তাদেরও কান ঝালাপালা এই ধরনের অপপ্রচারে। কিন্তু স্বাধীনতার বিপক্ষে তো কোনো শক্তি ছিল না। তখনো ছিল না, এখনো নেই। তখন কিছুসংখ্যক চিহ্নিত ঘৃণ্য নরাধম মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছিল বটে; কিন্তু ‘শক্তি’ বলতে যা বোঝায় তা তখনো তাদের ছিল না।

    ঐসব বিভ্রান্ত, স্বার্থপর, পলায়নপর, কাপুরুষদের ‘স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি’ বলে তখন কেউ তাদের চিহ্নিতও করেননি। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ সম্পর্কেও একই কথা। এত কোনো ব্যক্তির চেতনা নয়, নয় কোনো গোষ্ঠীর চেতনা। নয় কোনো দলের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়েছিল সমগ্র জাতি, ধর্ম-বর্ণ-বিশ্বাস নির্বিশেষে। এই চেতনা আত্মপ্রতিষ্ঠার। আত্মনির্ভরশীলতার। আত্মবিশ্বাসের। মর্যাদাসম্পন্ন জীবনব্যবস্থার। বলিষ্ঠ জীবনবোধের। ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা’ যা ১০ এপ্রিলে ঘোষিত ঐতিহাসিক স্বাধীনতাসনদের মূল কথা, যা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণে উদ্বুদ্ধ করে।

    এখন সেই চেতনা বিকৃতির কবলে পড়েছে। কোনো কোনো প্রচারক বলে থাকেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেই মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যায় না। মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অধিকারী হতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অধিকারী হতে হলে বিশেষ গোষ্ঠী বা বিশেষ দলের সাথে গাঁটছড়া বাঁধতে হবে। এসব কারণে, তাদের মতে, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেননি, কেননা সেই বিশেষ গোষ্ঠী বা দলের অন্তর্ভুক্ত তারা হতে পারেননি।

    ইতিহাস সচেতনতা আমাদের তেমন প্রখর নয়। স্মৃতির ধারণক্ষমতাও তেমন সুদৃঢ় নয়। এসব কারণে মাঝে মধ্যে ভীতসন্ত্রস্ত হই। সিরাজউদ্দৌলা বিদেশী বেনিয়াদের যতটুকু ঘৃণা করতেন, মীর কাশেমের ঘৃণাও ছিল তেমনি। কিন্তু ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভ যে সম্ভব নয়, তা অনুধাবনে দুয়ের মধ্যে পার্থক্য ছিল আকাশ-পাতাল। এজন্য দুইজনকেই পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই নিঃশেষ হতে হয়। কেউ পাননি বিজয়ের আস্বাদ। আমরা কিন্তু ১৬ ডিসেম্বরকে ধরে রাখতে চাই।

    বিজয় দিবসের মূল তাৎপর্য হলো ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভাবনাকে ধারণ করা এবং অগ্রগতির শতপথকে নির্বিঘ্ন করে তোলা যেন কোনো অপরিণামদর্শী চিন্তা বা উচ্চারণ বা কর্ম জাতীয় ঐক্যে ভাঙন ধরাতে সক্ষম না হয়। বিজয় দিবসের তাৎপর্য হলো এই ঐতিহাসিক বিজয়কে দেশের বৃহত্তর জনসমষ্টির নিকট অর্থপূর্ণ করে তোলা। প্রতি মুহূর্তে স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, এই বিজয় সমগ্র জাতির বিজয়। কোনো ব্যক্তি বা কোনো গোষ্ঠী বা কোনো দলের বিজয় নয়। এই সত্যে বিকৃতি ঘটানোর স্পর্ধা যেন কারো না হয়।

    বিজয় দিবসে ভাবতে হবে দেশের কোটি কোটি মানুষের কথা, তাদের চিন্তাভাবনা, তাদের আশা-আকাক্সক্ষার কথা। তাদের দুঃখ-বেদনার কথা। তাদের বঞ্চনার কথা। গত বছরগুলোতে যেভাবে সর্বগ্রাসী ব্যর্থতা আমাদের আড়ষ্ট করে রেখেছিল তার গ্লানি থেকে মুক্ত হওয়ার কথা। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ স্বার্থকভাবে মোকাবেলা করার কথা। দলীয় মানসিকতার নোংরা নর্দমা থেকে মুক্ত হয়ে সমগ্র সমাজব্যাপী বলিষ্ঠ জীবনবোধ প্রতিষ্ঠার কথা।

    একাত্তরের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার প্রকাশ ঘটে এই জাতির সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্ত এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুশাসন ও স্বশাসনের আশীর্বাদ দেশের প্রত্যেকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার দৃঢ়সঙ্কল্পে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হলো সমগ্র জাতি। সমগ্র জাতিই এক দীর্ঘ জীবন-মরণ সংগ্রামে বিজয়ের লাল গোলাপটি ছিনিয়ে এনে ১৬ ডিসেম্বরে এই জাতির জন্য রক্তসিক্ত পতাকা সগৌরবে স্থাপন করেছে। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের ঠিকানা। আমাদের গৌরবময় অর্জনের প্রকৃষ্ট নিদর্শন। কখনো যেন আমরা একথা ভুলে না যাই।

    ১৬ই ডিসেম্বর নিয়ে বক্তব্য | বিজয় দিবসের বক্তব্য 

    বিজয় আমার পতাকার রং
    মানচিত্রের রেখা,
    বিজয় আমার আনন্দ ঘন
    ভিটে-মাটি ফিরে দেখা।

    বিজয় আমার স্মৃতির মিনার
    সৌধ চূড়ার গান,
    বিজয় আমার স্বাধীন দেশের
    সুখভরা অফুরান।
    মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আজকের এই অনুষ্টানে উপস্থিত সম্মানিত সভাপতি, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি এবং সম্মানিত উপস্থিতি সবার প্রতি বিজয়ের শুভেচ্ছা ও সালাম।
    আসসালামু আলাইকুম।
    আজ ১৬ই ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা আর লাল সবুজ পতাকা। বাংলাদেশের এই বিজয় ছিনিয়ে আনতে দীর্ঘ নয় মাস পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তাক্ত যুদ্ধ করেছে এ দেশের দামাল ছেলেরা। এ যুদ্ধ ছিলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের জন্য, পরাধীনতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য, মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য। আজ বাংলাদেশ স্বাধীন।

    আজ আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেসব বীর শহীদদের যারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে আমাদের জন্য স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।

    স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। তাই রক্তার্জিত এ স্বাধীনতা রক্ষায় নিজের জীবনকেও বিষর্জন দেওয়ার শপথ নিয়ে আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য এখানেই ইতি টানছি। ধন্যবাদ সবাইকে

    বিজয় দিবসের ছবি | ১৬ ডিসেম্বর HD picture |১৬ ডিসেম্বর পিকচার

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য

    বিজয় দিবসের ইতিহাস- বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য


    টাগঃ১৬ ডিসেম্বর নিয়ে স্ট্যাটাস,মহান বিজয় দিবসের স্লোগান,১৬ই ডিসেম্বর নিয়ে বক্তব্য,১৬ই ডিসেম্বর নিয়ে কবিতা,বিজয় দিবস কবিতা,১৬ই ডিসেম্বর এর স্টাটাস,মেসেজ এসএমএস, বিজয় দিবসের তাৎপর্য,বিজয় দিবসের ইতিহাস,বক্তব্য-স্লোগান -কবিতা - স্টাটাস- এসএমএস -ছবি -বিজয় দিবসের তাৎপর্য



                                   
    Previous Post Next Post


    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com



    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com

    (সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Facebook এবং Telegram পেজ)