শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু রচনা (শব্দ ৬০০+) | শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু | Sheikh Rasel Amader Bondhu


    শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু রচনা (শব্দ ৬০০+)  

    শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু 


    ভূমিকা  

    ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে অনেক বড় বড় ব্যক্তির নাম কিন্তু বিশ্বসম্মোহনীদের নামের তালিকা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান সর্বাগ্রে । তিনি স্বাধীন বাংলার স্থাপত্য । তিনি মহিমাময় ' রাজনীতির কবি ' । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি নাম , একটি আদর্শ । তাই বাঙালি জাতি তাঁকে ' জাতির জনক ' হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে । তিনি বাংলাদেশ ও বাঙালির জাতির গর্ব ও অহংকারের প্রতীক তেমনি শেখ রাসেল ও আমাদের গর্ব ও অহংকারের প্রতীক । শেখ রাসেল বঙ্গবন্ধু বংশের শুধু প্রদীপ নয় , সে ছিল বাঙালি জাতির প্রদীপ এবং এই বাংলার একটি নক্ষত্র ছিল । 


    শেখ রাসেলের জন্ম  

    তখন হেমন্তকাল , সময়টা ১৮ ই অক্টোবর ১৯৬৪ । নবান্নের নতুন ফসলের উৎসবে আগমন নতুন অতিথির । এযেন বাঙালির আনন্দ , বাংলার আনন্দ । ধানমন্ডি সেই ঐতিহাসিক ও ভয়ানক ৩২ নম্বর রোডের বাসায় ' শেখ হাসিনার ' রুমেই রাত দেড়টার সময় রাসেলের জন্ম হয় । রাসেলের আগমনে পুরো বাড়ি জুড়ে বয়ে যায় আনন্দের জোয়ার । একটু বড়োসড়ো হয়েছিল শিশু রাসেল । জন্মের কিছুক্ষণ পর পরিবারের সবাইকে রাসেলের কথা জানানো হয় । পরে বোন শেখ হাসিনা এসে , তার ওড়না দিয়ে ভেজা মাথা পরিষ্কার করে দেন । 


    রাসেলের নামকরণ  

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের ভক্ত । তাঁর অনেক বই তিনি পড়েছেন । বার্ট্রান্ড রাসেল কেবল মাত্র একজন দার্শনিকই ছিলেন না বিজ্ঞানীও ছিলেন । বার্ট্রান্ড রাসেল ছিলেন পারমাণবিক যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের একজন বড় মাপের বিশ্ব নেতাও । বিশ্ব শান্তি রক্ষার জন্য বার্ট্রান্ড রাসেল গঠন করেছিলেন- " কমিটি অফ হান্ড্রেড " । রাসেলের জন্ম দু'বছর পূর্বেই ১৯৬২ সালে কিউবাকে কেন্দ্র করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডি এবং সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী ক্রুশ্চেফ এর মধ্যে স্নায়ু ও কূটনৈতিক যুদ্ধ চলছিল । যেটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল , ঠিক তখনই বিশ্ব মানবতার প্রতীক হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল । আর তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বঙ্গবন্ধু তার কনিষ্ঠ পুত্রের নামকরণ করেন রাসেল । 


    প্রাথমিক জীবন  

    শেখ রাসেল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা অঞ্চলের ধানমন্ডিতে ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবনে ১৮ ই অক্টোবর , ১৯৬৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন । পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে রাসেল সর্বকনিষ্ঠ । ভাই - বোনের মধ্যে অন্য এক জন হলেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা , ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর অন্যতম সংগঠক শেখ কামাল , বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা শেখ জামাল এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ শেখ রেহানা।শেখ রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও  কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন । 


    হত্যাকাণ্ড 

    ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট প্রত্যুষে একদল তরুণ সেনা কর্মকর্তা ট্যাঙ্ক দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বাসভবন ঘিরে ফেলে শেখ মুজিব , তার পরিবার এবং তার ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সাথে শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়।শেখ মুজিবের নির্দেশে রাসেলকে নিয়ে পালানোর সময় ব্যক্তিগত কর্মচারীসহ রাসেলকে অভ্যুত্থানকারীরা আটক করে । আতঙ্কিত হয়ে শিশু রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন , " আমি মায়ের কাছে যাব " ।পরবর্তীতে মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিলেন " আমাকে হাসু আপার ( শেখ হাসিনা ) কাছে পাঠিয়ে দাও " ।ব্যক্তিগত কর্মচারী এএফএম মহিতুল ইসলামের ভাষ্যমতে , 

    " রাসেল দৌড়ে এসে আমাকে জাপটে ধরে । আমাকে বললো , ভাইয়া আমাকে মারবে না তো ? ওর সে কণ্ঠ শুনে আমার চোখ ফেটে পানি এসেছিল । এক ঘাতক এসে আমাকে রাইফেলের বাট দিয়ে ভীষণ মারলো । আমাকে মারতে দেখে রাসেল আমাকে ছেড়ে দিল । ও ( শেখ রাসেল ) কান্নাকাটি করছিল যে ' আমি মায়ের কাছে যাব , আমি মায়ের কাছে যাব ' । এক ঘাতক এসে ওকে বললো , ' চল তোর মায়ের কাছে দিয়ে আসি । বিশ্বাস করতে পারিনি যে ঘাতকরা এতো নির্মমভাবে ছোট্ট সে শিশুটাকেও হত্যা করবে । রাসেলকে ভিতরে নিয়ে গেল এবং তারপর ব্রাশ ফায়ার । " 


    শেখ রাসেল কেন আমাদের বন্ধু  

    বঙ্গবন্ধুর বাসায় একটি পোষা কুকুর ছিল ' টমি ' নামে । টমির সবার ঙ্গে খুব বন্ধুত্ব ছিল । ছোট রাসেলও টমিকে নিয়ে খেলতো । একদিন খেলতে খেলতে হঠাৎ টমি ঘেউ ঘেউ করে দেকে ওঠে , তখন রাসেল ভয় পেয়ে যায় । কাঁদতে কাঁদতে রেহানার কাছে এসে বলে , টমি আমাকে বকা দিয়েছে । তার কথা শুনে বাসার সবাইতো হেসেই আত্মহারা । টমি আবার কিভাবে বকা দিলো । কিন্তু রাসেল বিষয়টা খুব গভীরভাবে নিয়েছিল । টমি তাকে বকা দিয়েছে এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না , কারণ টমিকে সে খুব ভালোবাসতো । হাতে করে খাবার দিত । নিজের পছন্দ মতো খাবার গুলোর টমিকে ভাগ করে দেবেই , কাজেই সেই টমি বকা দিলে রাসেল দুঃখ তো পাবেই । এরই মধ্যে জন্ম হয় শেখ হাসিনার পুত্র জয়ের । রাসেল জয়কে পেয়ে মহাখুশি । সে তার খেলার নতুন একসঙ্গে পেয়েছে । সারাটা সময় জুড়েই জয়ের সাথে মিশে থাকতো রাসেল । এরই মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় । কিন্তু রাসেল তার নিজেকে নিয়ে চিন্তা নেই , তার সমস্ত চিন্তা জয়কে নিয়ে । কারণ তাদের বাসার ছাদে বাংকারের মেশিন বসানো ছিল । ফলের দিনরাত গোলাগুলিতে প্রচন্ড আওয়াজ হতো আর তাতে শিশু জয় বারবার কেঁপে কেঁপে উঠতো । আর এ ব্যাপারে রাসেল খুবই সচেতন ছিল । যখনই সাই মেঘের মতো আওয়াজ হতো , রাসুল তুলে নিয়ে এসে জয়ের কানে গুজে দিতো । সব সময় পকেটে তুলে রাখত । রাসেলের মাছ ধরার খুব শখ ছিল , কিন্তু সে মাছ ধরে আবার তা পুকুরে ছেড়ে দিত । এতেই সে মজা পেত । আসলেই এটা তার খেলা । বাজত বা আকাশে সুতরাং পরিশেষে বলা যায় যে , তার সকল প্রাণী তথা যার মনের ভাব মানুষ বুঝতে পারা বা না পারা এমন প্রাণীর প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসাই তাকে করেছে আমাদের সকলের বন্ধু।


    উপসংহার

    রাসেল তার বাবাকে কাছে পাবার সুযোগ খুব কমই হয়েছে , তাই বাবাকে যখনই কাছে পেতে সারাক্ষণ তার পাশে ঘোরাঘুরি করতো । খেলার ফাঁকে ফাঁকে বাবাকে এক পলকের জন্য হলেও দেখে আসতো । রাসেলের যদি শিশু বয়সে মৃত্যু না হতো তাহলে বঙ্গবন্ধুর মতো বাঙালি জাতির পিতা হিসেবে রাসেল স্থান পেত । 

    সুতরাং রাসেলের বাল্য জীবন থেকে এই শিক্ষাই পেতে পারি যে , সে আমাদের ছিল প্রকৃত বন্ধু এবং বাঙালি জাতির মহানায়ক ।



    Tag: শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু রচনা (শব্দ ৬০০+),  শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু,  Sheikh Rasel Amader Bondhu

                                   
    Previous Post Next Post


    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com



    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com

    (সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Facebook এবং Telegram পেজ)