৯ম/নবম শ্রেণির ১৪তম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ উত্তর/সমাধান চারু ও কারুকলা (এসাইনমেন্ট-৩)
শিরােনাম : ১৯৪৩ সালে জয়নুল আবেদিনের আঁকা দুর্ভিক্ষের ছবি গুলাে বিখ্যাত কেন ?
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের কারনঃ
দুর্ভিক্ষ হল কোন এলাকার ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি । সাধারণত ফসলহানি , যুদ্ধ , সরকারের নীতিগত ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে দুর্ভিক্ষ সংগঠিত হয় । এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ , গবাদিপশুর মড়ক , পােকাড আক্রমণ ইত্যাদি কারণেও দুর্ভিক্ষ সংগঠিত হয় । ১৭৭০ সালে বাংলাদেশে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিযেছিল । সময়টি বাংলা ১১৭৬ সাল হওয়ায় এই দুর্ভিক্ষ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত হয় । অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় সমগ্র দেশজুড়ে চরম অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় । ত্রুটিপূর্ণ ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা ও খাদ্যবাজারে দালাল ফড়িয়া শ্রেনীর দৌরাত্ম্যের ফলে অবস্থা আরাে শােচনীয় হয়ে পড়ে ।
১৯৪৩ সালে বাংলাদেশে একটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় । ১৩৫০ বঙ্গাব্দে ( খ্রি . ১৯৪৩ ) এই দুর্ভিক্ষ হয়েছিল বলে এটি পঞ্চাশের মন্বন্তর নামে পরিচিত । ১৯৩৪ সাল থেকে কৃষি ফসলের উৎপাদন কমতে থাকে । তাছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতাে ঘটনাও এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল । জাপানি সেনাবাহিনীর হাতে বার্মার পতন হলে সেখান থেকে বিপুল পরিমান চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায় । এছাড়া যুদ্ধরত সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য অতিরিক্ত খাদ্যশস্যের চাহিদা , অতিরিক্ত মুনাফাভােগীদের দৌরায় এবং সরকারি অব্যবস্থাপনা এই দুর্ভিক্ষের অন্যতম কারণ । এই দুর্ভিক্ষে ৩.৫ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করে ।
বিপুল সংখ্যক মানুষ কলকাতা শহরে মৃত্যুবরণ করে । উল্লেখ্য যে , এদের মধ্যে সবাই কলকাতা শহরের বাইরের বাসিন্দা ছিল । ১৯৭৪ সালে সদ্য স্বাধীনতাগ্রাপ্ত বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় । এটি ৭৪ - এর দুর্ভিক্ষ নামে পরিচিত । সে সময়ে কয়েক লক্ষ মানুষ অনাহারে অথবা অপুষ্টিজনিত রােগে মারা যায় । ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করে । চাল ও লবনের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায় । বিশেষ করে লবনের সরবরাহ একেবারেই কমে যায় । অনেক কৃষক কযেক মৌসুমের ফসল আগ্রীম বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয় । খাবার ও কাজের খোঁজে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচুর মানুষ ঢাকা শহরে ছুটে আসে । একই বছর ডিসেম্বর মাস থেকে দুর্ভিক্ষের প্রকোপ কমতে থাকে ।
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে সাম্প্রতিক নানা গবেষণা থেকে | জানা যায় , মানুষের সৃষ্ট এই দুর্ভিক্ষ রােধ করা সম্ভব ছিল । সরকারের ঔদাসীন্য , খাদ্যশস্য সরবরাহে ব্যর্থতা , যুদ্ধ , মুনাফালােভীদের খাদ্য মজুদ ও গণতন্ত্রহীনতা ছিল এই দুর্ভিক্ষের | অন্যতম কারণ । বাংলাদেশের মেদিনীপুর , বিক্রমপুরসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের গ্রামের কৃষিজীবী মানুষই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল । | যৎসামান্য খাদ্যের আশায় ও বেঁচে থাকার আর্তি নিয়ে দলে দলে লােক পরিবার - পরিজন নিয়ে চলে এসেছিল বড় বড় শহরে । কঙ্কালসার এই মানুষগুলাে খেতে না পেয়ে মরে থাকত ডাস্টবিনের পাশে ও ফুটপাতে ।
# জয়নুল আবেদিন যখন নবীন যুবা , দারিদ্রদের এই লাঞ্ছনা তাঁকে প্রবলভাবে বিচলিত করেছিল । তিনি ছবি আঁকলেন এবং এই ডুইংগুলাে প্রকাশিত হলাে সংবাদপত্রে । একই সময়ে স্টেটসম্যান এবং বামপন্থী পত্রিকায় সুশীল জানার আলােকচিত্র প্রকাশিত হয়েছিল । জয়নুল , চিত্তপ্রসাদ , সােমনাথ হােরের ড্রইং নাড়া দিলাে মধ্যবিত্তের বিবেককে । এই আলােড়ন থেকেই লঙ্গরখানা খােলা হয়েছিল । এই লঙ্গরখানা খােলার ফলে লাখ লাখ মানুষ বেঁচে গিয়েছিল ।
জয়নুল ১৯৪৩ সালের এই দুর্ভিক্ষ - চিত্রমালা অঙ্কনের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষে খ্যাতিমান শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন । ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ তাঁর শিল্পীসত্তাকে প্রবলভাবে নাড়া দেয় । তিনি দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের বেঁচে থাকার আর্তিকে মােটা তুলিতে যেভাবে রূপায়িত করেছিলেন তার কোনাে তুলনা নেই । এই চিত্রমালা একদিকে মানবিক বিপর্যয়ের আশ্চর্য দলিল হয়ে আছে , অন্যদিকে এই চিত্রমালা অঙ্কনের মধ্য দিযে তিনি হয়ে উঠেছেন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা শিল্পী ।
২০২১ সালের ৯ম/নবম শ্রেণির (১৪তম) সপ্তাহের চারু ও কারুকলা এসাইনমেন্ট সমাধান/উত্তর
Tag: ৯ম/নবম শ্রেণির ১৪তম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ উত্তর/সমাধান চারু ও কারুকলা (এসাইনমেন্ট-৩), ২০২১ সালের ৯ম/নবম শ্রেণির (১৪তম) সপ্তাহের চারু ও কারুকলা এসাইনমেন্ট সমাধান/উত্তর
Any business enquiry contact us
Email:-Educationblog24.com@gmail.com
(সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদেরGoogle News,FacebookএবংTelegram পেজ)