সৃজনশীল প্রশ্ন লেখার পদ্ধতি |সৃজনশীল লেখার সহজ উপায় | সৃজনশীল প্রশ্ন লেখার নমুনা

সৃজনশীল প্রশ্ন লেখার পদ্ধতি |সৃজনশীল লেখার সহজ উপায় | সৃজনশীল প্রশ্ন লেখার নমুনা 

সৃজনশীল প্রশ্ন লেখার পদ্ধতি |সৃজনশীল লেখার সহজ উপায় | সৃজনশীল প্রশ্ন লেখার নমুনা


তোমাদের প্রথম পরীক্ষা বাংলা প্রথমপত্র। পরীক্ষার খাতা মুল্যায়নের ক্ষেত্রে আমরা যে বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি তা হলো : খাতার সৌন্দর্য রক্ষা, বানানের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ, বাক্যগঠনে তত্ত্বভিত্তিক তথ্য উপাস্থাপন, অপ্রয়োজনীয় শব্দ বা ভাষা বর্জন, কাটাকাটি যতদূর সম্ভব না করা, অপ্রাসঙ্গিক বিষয় উপাস্থাপন থেকে বিরত থাকা, প্রশ্নোত্তরে স্বচ্ছতা থাকা বাঞ্চনীয়, প্রয়োজনীয় মার্জিন বা মার্জিনের জায়গা রাখা বাঞ্চনীয়, সৃজনশীলের ক্ষেত্রে উদ্দীপক ও পাঠ্য বইয়ের সমন্বয় সাধন, বহুনির্বাচনির ক্ষেত্রে প্রশ্ন অনুযায়ী ভেবে ভেবে উত্তর করা, সর্বোপরি নির্ভেজাল তথ্যসমেত গঠনমূলক বিশ্লেষণ তোমার আত্মবিশ্বাসে লেখলেই ভালো করা যাবে। এখন, আমরা সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনিতে ভালো করার কিছু কৌশল জানবো :

সৃজনশীল অংশ : প্রশ্ন থাকবে ৯টি উত্তর করতে হবে ৬টি মোট নাম্বার ৬০। একটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরে (১+৫+১২+১৫) সর্বোচ্চ ৩৫

বাক্য উত্তরের ক্ষেত্রে হতে পারে।

ক. জ্ঞানমূক অংশ : প্রদত্ত নাম্বার-১

[পাঠ্য বই হতে এক কথায় বা এক বাক্যে সঠিক উত্তর দিবে; এখানে কোনো বিষয়ভিত্তিক

বিশ্লেষণের দরকার নেই]

খ. অনুধাবনমূলক : প্রদত্ত নাম্বার-২ (১+১) [অংশ দুটি : জ্ঞানমূলকে-১ চিন্তন বিশ্লেষণে-১। [প্রশ্নে যা চাইবে এক কথায় উত্তরের আসলবস্তু জ্ঞান আকারে লেখবে আর দ্বিতীয় প্যারাতে বিশ্লেষণ করে সেটা সর্বোচ্চ ৩-৪ লাইন হলে ভালো হয়। মনে রাখা প্রয়োজন অনুধাবনমূলক প্রশ্নে উত্তরের ক্ষেত্রে সব মিলে ৫বাক্যে শেষ করতে হবে।]

গ. প্রয়োগমূলক অংশ প্রদত্ত নাম্বার-৩ (১+১+১)

[এখানে তোমাকে তিনটি অংশ বা প্যারা করে লিখতে হবে। অংশগুলো হলো : *উত্তরের শুরুতেই মূল উত্তরটুকু অর্থাত্ জ্ঞানমূলক আকারে ১ বাক্যে উত্তর লেখার চেষ্টা করবে। এরপর প্রশ্নে চাওয়া বিষয়ের সাথে মূল পাঠ্যের সম্পর্ক নিরূপণের প্রয়াস পেতে হবে; যাকে ব্যাখ্যেয় অংশ বলা যেতে পারে। প্রয়োগের তৃতীয় অংশ অবশ্যই সম্পর্ক নিরূপণের ক্ষেত্রে প্রকৃত সমস্যার সমাধান করতে হবে। যা উদ্দীপক এবং মূলপাঠ্যকে একটি নিবিড় সম্পর্কের জালে ফেলবে। এটি হলো অর্জিত জ্ঞান এবং অনুধাবন নতুন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার ক্ষমতা। ১ম প্যারা ১বাক্য; ২য় প্যারা-৩/৪বাক্য আর তৃতীয় প্যারা-৭/৮বাক্য হতে পারে। এখানে সর্বোচ্চ ১২ বাক্য লিখতে পারবে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক : প্রদত্ত নাম্বার-৪ (১+১+১+১) [এখানে তোমাকে চারটি অংশ বা প্যারা করে লিখতে হবে। অংশগুলো হলো :

উত্তরের শুরুতেই মূল উত্তরটুকু অর্থাত্ জ্ঞানমূলক আকারে ১বাক্যে উত্তর লেখার চেষ্টা করবে।

*দ্বিতীয় প্যারাতে প্রশ্নমোতাবেক উদ্দীপক ধরে চিন্তন শক্তি ব্যাখ্যা করবে

*তৃতীয় প্যারাতে উদ্দীপক ও মূল পাঠ্যের সম্পর্কগত আলোচনা করবে

*চতুর্থ প্যারাতে সার্বিক বিশ্লেষণ করবে সেক্ষেত্রে উদ্দীপক, মূলপাঠ্য বিষয় ও পারিপার্শ্বিক জীবন ব্যবস্থার সাথে মিল রেখে তোমার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারো। ১ম প্যারা ১বাক্য; ২য় প্যারা-২/৩বাক্য আর তৃতীয় প্যারা-৪/৫বাক্য ৬ষ্ঠ প্যারা-৭/৮বাক্য। হতে পারে। এখানে সর্বোচ্চ ১৫ বাক্য লিখতে পারবে।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন: মোট প্রশ্ন ৪০ মোট নাম্বার ৪০ সময় ৪০মিনিট। তোমাদের তিনটি স্তর পার করে তবেই মোট ৪০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। মূল বই বারবার পড়ে গুরুত্বপূর্ণ লাইনের নিচে দাগ দিয়ে রাখবে। শব্দার্থ ও টীকা বার বার পড়বে। কবিতা, প্রবন্ধ বা গল্পের মূল বিষয়বস্তু অবশ্যই তোমাকে বের করতে হবে। কবি বা লেখকের জন্মস্থান, জন্ম মৃত্যু সাল, তাঁর রচিত গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার বা গ্রন্থের নাম মনে রাখবে।

বর্তমান ক্যাটাগরিতে যে তিনটি স্তর তোমাদের পার করতে হবে তাহলো :

(ক) সাধারণ বহুনির্বাচনি অংশ : এ অংশ জ্ঞানভিত্তিক স্মৃতি নির্ভর। এক্ষেত্রে প্রশ্নগুলো কখনো প্রশ্ন আকারে আবার কখনো অসম্পূর্ণ বাক্য হিসেবে দেওয়া থাকে যা উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। বিকল্প উত্তর ৪টি, যার মাত্র একটি সঠিক। এ বিভাগে জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা এ ৪টি উপবিভাগ বিদ্যমান থাকে।

(খ) বহুপদী সমাপ্তিসূচক প্রশ্ন : এ অংশ জ্ঞানভিত্তিক স্মৃতি নির্ভর নয়। পরীক্ষা ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি আমাদের দেশে নতুন। এ ধরনের প্রশ্নে শুরুতে ৩টি তথ্য ভিত্তিক উপাস্থাপন থাকে। এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরে ৪টি প্রশ্ন তৈরি করা হয়, রোমান বর্ণে বরাদ্ধ এ প্রশ্নে অনেক সময় একাধিক উত্তর থাকে যার উত্তর প্রদত্ত চারটি প্রশ্নে বিদ্যমান। অতি নিখুঁতভাবে ভেবে এখানে উত্তর করতে হবে তোমাদের। এ স্তরে অনুধাবন, প্রয়োগ, উচ্চতর দক্ষতা যাচাই করতে হয়।

(গ) অভিন্ন তথ্যভিত্তিক প্রশ্ন : এখানে একটি উদ্দীপক পাবে, যার মাধ্যমে তোমাকে তথ্য সরবারহ করা হবে। প্রশ্নগলোর সাথে একে অপরের মিল দেখতে পাওয়া যাবে।

আরো একটি উদাহরণ দেখুন

 সামাজিক বিজ্ঞান একটি আবশ্যিক বিষয়। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে একটি সৃজনশীল প্রশ্ন এবং এর নমুনা উত্তর নিচে দেওয়া হলো।
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নের উত্তর দাও।
রাতুল নবম শ্রেণীর ছাত্র। বেতন দিতে না পেরে সে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। তাতে সে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং পাড়ার বখাটে ছেলেদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করে। একদিন সে তার এক সঙ্গীর প্ররোচনায় রাস্তায় এক কিশোরীকে উত্ত্যক্ত করে। ঘটনাটি জেনে এলাকার এক স্কুলশিক্ষক এর প্রতিবাদ করলে রাতুল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পরে একদিন রাস্তায় একা পেয়ে সে ওই শিক্ষককে ছুরিকাহত করে এলাকা থেকে পলায়ন করে।
প্রশ্ন: ক. নৈরাজ্য কী? ১
প্রশ্ন: খ. বাংলাদেশে সাধারণত কেন অপরাধ সংঘটিত হয়? ২
প্রশ্ন: গ. রাতুলের কৃত অপরাধের প্রকৃতি তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করো। ৩
প্রশ্ন: ঘ. সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় এক ব্যক্তির ভূমিকা অপেক্ষা গোষ্ঠীর ভূমিকাই শ্রেয়, অনুচ্ছেদে বর্ণিত ঘটনার আলোকে এর যথার্থতা বিশ্লেষণ করো। ৪
উত্তর: ক. সমাজে শৃঙ্খলার অভাবই হচ্ছে নৈরাজ্য।
উত্তর: খ. বাংলাদেশে সাধারণত দারিদ্র্যের কারণেই অপরাধ সংঘটিত হয়। এ দেশে চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ইভ টিজিং ইত্যাদি অপরাধ ঘটতে দেখা যায়। এসব অপরাধ কিশোর ও যুবক বয়সের ছেলেরাই মূলত করে থাকে। যারা অপরাধ করছে তাদের সম্পর্কে তথ্য নিয়ে জানা যায়, এদের অনেকে আর্থিক অনটনে পড়ে অপরাধে জড়িত হয়। দরিদ্র বলে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে সহজেই এদের অপরাধে যুক্ত করা যায়।
উত্তর: গ. রাতুল নবম শ্রেণীর ছাত্র। বেতন দিতে না পেরে সে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এই দিকটি বিবেচনা করে আমরা বলতে পারি, রাতুলের বয়স ১৬ বছরের বেশি নয়। স্কুলে যেতে না পেরে সে হতাশাগ্রস্ত হয় এবং পাড়ার বখাটে ছেলেদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করে। একপর্যায়ে সে রাস্তায় এক কিশোরীকে উত্ত্যক্ত করে।
আমরা রাতুলের বয়স এবং তার আচরণ বিবেচনা করে বলতে পারি, সে একজন কিশোর অপরাধী। বাংলাদেশে সাধারণত ৭-১৬ বছরের কিশোর-কিশোরীদের কিশোর অপরাধে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই বয়সে কোনো কিশোর বা কিশোরী যদি স্কুল পালায়, শিক্ষক গুরুজনকে অমান্য করে, পথচারী বিশেষ করে মেয়েদের সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করে কিংবা উদ্দেশ্যহীনভাবে এখানে সেখানে ঘোরাফেরা ইত্যাদি করে, তবে তা কিশোর অপরাধ বলে গণ্য হয়।
রাতুলের চরিত্রে ওপরে বর্ণিত কিশোর অপরাধের সব কয়টি দিক পরিলক্ষিত হয় বিধায় আমরা তাকে কিশোর অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি।
উত্তর: ঘ. সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে। একজন ব্যক্তি সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় প্রথমে নিজে সচেতন থাকতে পারে। এরপর ব্যক্তি নিজেকে অপরাধ সংঘটনের কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে। পাশাপাশি একজন ব্যক্তি অন্যকে অপরাধমূলক কাজে অংশগ্রহণের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত এবং সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু যে সমস্যা মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে ব্যক্তির ভূমিকার চেয়ে গোষ্ঠীর ভূমিকা শ্রেয়।
রাতুল দারিদ্র্যের কারণে স্কুলত্যাগী হয়েছে। এটা তাকে হতাশাগ্রস্ত করে এবং পাড়ার বখাটের সঙ্গে মেলামেশা করার দিকে ঠেলে দেয়। সে তার বখাটে সঙ্গীর প্ররোচনায় অপরাধ করে। এই অপরাধ একধরনের সামাজিক ব্যাধি। এর কারণ সমাজের অনেক গভীরে লুকায়িত আছে। তা ছাড়া এ সমস্যা একদিনে সৃষ্টি হয়নি এবং কোনো একক কারণ এর জন্য দায়ী নয়। সামাজিক শ্রেণী-বৈষম্য, অনাচার, অশিক্ষা, বেকারত্ব ইত্যাদি কারণে রাতুলের মতো ছেলেরা অপরাধ করছে। আর এই অপরাধে একজন শিক্ষক এককভাবে প্রতিবাদী হয়ে মোকাবিলা করতে পারেন না। রাতুলের দৃষ্টান্ত থেকে তা বোঝা যায়। শিক্ষক প্রতিবাদ করায় রাতুল ক্ষিপ্ত হয়ে আরও বড় অপরাধ করে বসল।
সুতরাং প্রমাণিত হয়, কোনো সামাজিক সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রে কোনো একজন ব্যক্তির পরিবর্তে যদি সম্মিলিত বা গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে প্রয়াস চালানো যায় তবে সুফল পাওয়া যেতে পারে। এখানে শিক্ষক বিষয়টি সমাজের অন্যদের জানিয়ে সংঘবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করলে রাতুল তার বিরুদ্ধে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।

তথ্য সূত্রঃhttp://archive.prothom-alo.com/detail/news/124870

Tag:সৃজনশীল প্রশ্ন লেখার পদ্ধতি,সৃজনশীল লেখার সহজ উপায়, সৃজনশীল প্রশ্ন লেখার নমুনা, সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করার নিয়ম,সৃজনশীল প্রশ্ন কাঠামো,সৃজনশীল কত পৃষ্ঠা লিখতে হয়,পরীক্ষার খাতায় লেখার স্টাইল,বোর্ড পরীক্ষার খাতা দেখার নিয়ম,
                               
Previous Post Next Post


Any business enquiry contact us

Email:- Educationblog24.com@gmail.com



Any business enquiry contact us

Email:- Educationblog24.com@gmail.com

(সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Facebook এবং Telegram পেজ)