নিত্যপণ্যে উৎস কর অর্ধেক করার প্রস্তাব
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর উৎস কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, ভুট্টা, ভোজ্যতেল, লবণ এবং চিনির সরবরাহকারীরা ঋণপত্রের ওপর দুই শতাংশ উৎস কর দেন। প্রস্তাবিত বাজেটে এ হার এক শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে, যা গ্রাহকদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনতে পারে।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ
আগামী অর্থবছরে সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিচ্ছে। নাগরিকরা আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়েই তাদের অঘোষিত সম্পদ বৈধ করতে পারবেন। প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, করদাতারা ফ্ল্যাট, জমি, নগদ অর্থসহ স্থাবর সম্পত্তির জন্য ১৫ শতাংশ কর দিলে কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন তুলবে না। এছাড়া, শেয়ার বাজারে কালো টাকা বিনিয়োগেরও সুযোগ থাকবে।
করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্রস্তাব করেছেন যে করমুক্ত আয়কর সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকাই থাকছে। প্রস্তাবিত বাজেটে, আয়ের প্রথম সাড়ে ৩ লাখ টাকার ওপর কোনো কর দিতে হবে না। পরবর্তী ১ লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৩ লাখ টাকায় ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকায় ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার ওপর ২০ শতাংশ ও বাকি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ আয়কর দিতে হবে।
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ছে
প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ৮.১ শতাংশ বাড়িয়ে ৪১,৪০৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৩৮,০৫১ কোটি টাকা।
বরাদ্দ কমছে যেসব খাতে
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি
প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ প্রায় ১৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। এবার এই খাতে ৩০,৩১৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরে ছিল ৩৪,৮১৯ কোটি টাকা।
শিক্ষা খাত
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি অনুপাতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১.৬৯ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের ১.৭৬ শতাংশ থেকে কম।
যোগাযোগ খাত
যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমেছে। বাজেটে সড়ক, রেল, নৌ ও বিমান পরিবহন উন্নয়নে বরাদ্দ ৮০,৪৯৮ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের ৮৫,১৯১ কোটি টাকার চেয়ে কম।
গাড়ি আমদানিতে শুল্ক দিতে হবে এমপিদেরও
সংসদ সদস্যদের (এমপি) গাড়ি আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি কমিয়ে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রভিশনাল হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার এপ্রিল পর্যন্ত ৮.৪ শতাংশ ছিল।
বাজেট ঘাটতি
আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২,৫৬,০০০ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ৯০,৭০০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১,৬০,৯০০ কোটি টাকা সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ব্যাংক থেকে ঋণ
আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ১,৩৭,৫০০ কোটি টাকা এবং নন-ব্যাংকিং খাত থেকে ২৩,৪০০ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ১৫,৪০০ কোটি টাকা।
প্রভিডেন্ট ফান্ডে কর বাড়ানোর প্রস্তাব
প্রভিডেন্ট, গ্র্যাচুইটি, সুপারঅ্যানুয়েশন ও পেনশন তহবিল থেকে অর্জিত আয়ের ওপর কর হার ২৭.৫ শতাংশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে এই করের হার ১৫ শতাংশ।
আইসিটি খাতে ক্যাশলেস শর্তে ৩ বছরের করছাড়
আইসিটি খাতে ১৯ ধরনের ব্যবসায় ক্যাশলেস শর্তে তিন বছরের জন্য কর ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যবসাগুলোর মধ্যে রয়েছে—এআই বেজড সল্যুশন, ব্লকচেইন, রোবোটিক্স প্রসেস আউটসোর্সিং, সফটওয়্যার সেবা, সাইবার নিরাপত্তা সেবা, ডিজিটাল ডেটা বিশ্লেষণ ও ডেটা সায়েন্স, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও কাস্টমাইজেশন, সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব, ওয়েব লিস্টিং এবং ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, আইটি সহায়তা এবং সফটওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণ, জিআইএস, ডিজিটাল অ্যানিমেশন, ডিজিটাল গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল ডেটা এন্ট্রি এবং প্রক্রিয়াকরণ, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম এবং ই-পাবলিকেশন, আইটি ফ্রিল্যান্সিং, কল সেন্টার এবং ডকুমেন্ট রূপান্তর, ইমেজিং ও ডিজিটাল আর্কাইভিং।
মোবাইল যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা বাড়ানোর সুপারিশ
মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আসবেন সরকারি চাকরিজীবীরা
আগামী অর্থবছর থেকে নিয়োগ পাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের অবসর পরবর্তী পেনশন সুবিধার পরিবর্তে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের মধ্যে অর্থমন্ত্রী এ ঘোষণা দিয়েছেন।