আসছালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক সবাই কেমন আছেন। আসা করি সবাই ভালো আছেন। বন্ধুরা আজকে আমরা এই পোস্টে তোমাদের শবে কদরের নামাজ নিয়ে আলোচনা করবো। শবে কদর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়তে থাকুন।
শবে কদরঃ- পবিত্র মাহে রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় যে কোন এক দিন শবে কদর। তবে সাধারণত ২৭ রমজানের রাতকে শবে কদরের রাত ধরা হয়।
শবে-কদর বা লাইলতুল কদর এর অর্থ কি
লাইলতুল কদর’ আরবি শব্দ। শবে-কদর হলো ‘লাইলাতুল কদর’ -এর ফারসি পরিভাষা। কয়েক শতাব্দী মুঘল শাসন এবং উপমহাদেশে ফারসি রাজকীয় ভাষা থাকার কারণে ধর্ম, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বিচার-আচারের বহু ফারসি শব্দ আমাদের সংস্কৃতির সাথে একাকার হয়ে গেছে। ‘সালাতের’ পরিবর্তে নামাজ, ‘সাওমের’ পরিবর্তে রোজার মতো লাইলাতুল কদর এর ফারসি পরিভাষা শবে কদর সাধারণ মানুষের কাছে তাই বেশি পরিচিত।
‘শব’ অর্থ রাত, আর আরবি ‘লাইলাতুন’ শব্দের অর্থও রাত বা রজনী। কদর অর্থ সম্মানিত, মহিমান্বিত। সুতরাং লাইলাতুল কদরের অর্থ সম্মানিত রজনী বা মহিমান্বিত রজনী।
শবে কদরের গুরুত্ব
শবে কদরের রাতটি রমজানের কোন তারিখে
শবে কদরের ফজিলত
শবে কদরের নামাজ
শবে কদরের নামাজ দু‘রাকাত করে যত বেশী পড়া যায় তত বেশি ছওয়াব। নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা ইখলাছ, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াবের কাজ। এই ভাবে কম্পক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। এর বেশি যত রাকাত আদায় করা যায় ততই ভালো।
কেউ যদি উপরে উল্লেখিত সূরাগুলো না পারেন তাহলে সূরা ফাতিহা পড়ার পর যে সূরাগুলো আপনি পারেন তার মধ্য থেকে প্রতি রাকাতে একটি করে সূরা মিলিয়ে নিতে হবে। এই ভাবে কম্পক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। এর বেশি যত রাকাত আদায় করা যায় ততই ভালো।
প্রতি ৪ রাকাত পর পর কিছু তাসবিহ-তাহলীল আদায় করে মহান আল্লাহর নিকট দোয়া কামনা করা অতি উত্তম। এই ভাবে সারা রাত নামাজ আদায় করা যেতে পারে।
শবে কদরের নামাজের নিয়ত,আরবি,বাংলা উচ্চারন
নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল লাইলাতিল কাদ্রি নফ্লে মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি- আল্লাহু আকবর।
শবে কদরের নামাজের নিয়ত বাংলা
অর্থ: আমি কাবামুখী হয়ে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য শবে কদরের দুই রাকআত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবর।
ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) ও দরুদ আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। কমপক্ষে ১০০ বার ইস্তেগফার ও ১০০ বার দরুদ পড়া যেতে পারে।
শবে কদরে জিকির ও দোয়া
হযরত আয়েশা রা: বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা: কে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ- যদি কোনো প্রকারে আমি জানতে পারি রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে কি দোয়া করব? জবাবে নবী সা: বলেন, এ দোয়া পড়বে- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুব্বুন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।” অর্থাৎ ‘আয় আল্লাহ তুমি বড়ই মাফ করণেওয়ালা এবং বড়ই অনুগ্রহশীল। মাফ করে দেয়াই তুমি পছন্দ কর।
অতএব তুমি আমাদেরা গুনাহগুলো ক্ষমা করে দাও।’
কদরের নামাজের মোনাজাত,দোয়া
>> رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
উচ্চারণ : 'রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।'
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী।' (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১১৮)
>> رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
উচ্চারণ : 'রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।'
অর্থ : 'হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।' (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১০৯)
>> رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ
উচ্চারণ : 'রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি।'
অর্থ : '(হে আমার) প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।' (সুরা কাসাস : আয়াত ১৬)
>> رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ : 'রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।'
অর্থ : হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬)
>> رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
উচ্চারণ : 'রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।'
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো।' (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)
>> رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
উচ্চারণ : 'রাব্বানাগফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।'
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর।' (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)
>> سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ
উচ্চারণ : 'সামিনা ওয়া আত্বানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির।'
অর্থ : ‘আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আল-বাকারাহ : আয়াত ২৮৫)
>> رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنتَ مَوْلاَنَا
উচ্চারণ : 'ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।'
অর্থ : 'হে আমাদের রব! যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের পাপ মোচন করুন। আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। তুমিই আমাদের প্রভু।' (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২৮৬)
>> رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ
উচ্চারণ : 'রাব্বানাগফিরলানা ওয়ালি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি।'
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের আগে যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন।' (সুরা হাশর : আয়াত ১০)
>> رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
উচ্চারণ : 'রাব্বানাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়াংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।'
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে তোমার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪৭)
>> رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
উচ্চারণ : 'রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সায়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফফানা মাআল আবরার।'
অর্থ : 'হে আমাদের প্রভু! সুতরাং আমাদের গোনাহগুলো ক্ষম করুন। আমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৩)
মুমিন মুসলমানের উচিত, সেজদায় গিয়ে তাসবিহ পড়ে কিংবা শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ ও দরূদ পড়ার পর নিজেদের গোনাহ থেকে মুক্তির জন্য কুরআনে বর্ণিত এ দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গোনাহ থেকে ক্ষমা লাভে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো শবে কদরের এ ছোট্ট দোয়াটি বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুন। নামাজের সেজদা ও তাশাহহুদে ক্ষমা লাভের কুরআনি দোয়াগুলো পড়ার তাওফিক দান করুন। প্রত্যেক রোজাদার মুমিন মুসলমানকে লাইলাতুল কদর লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
শবে কদরের নামাজ নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
শবে কদরের নামাজ নফল না সুন্নত
উত্তরঃ শবে কদরের নামাজ নফল।
শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে না পরে
উত্তরঃ-রমজান ছাড়া অন্য সময়ে রাতের শেষ ভাগে বিতর পড়া উত্তম। কিন্তু রমজান মাসে তারাবী শেষে জামাতে বিতর পড়া উত্তম।
এ কারণে তারাবী শেষে জামাতে বিতর না পড়ে আগে নফল নামায পড়ার জন্য বাধ্যবাধকতা করা যাবে না। এমনিতে পড়তে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না।
লাইলাতুল কদরের ফযীলত পাবার আশায় নফল নামায সারা রাতব্যাপীই পড়া যায়। তারাবীর সাথে সাথেই পড়তে হবে এমনটি মনে করার কোন সুযোগ নেই। তাই এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
কদরের নামাজ জামাতে পড়া যাবে কি
উত্তরঃ না, কদরের নামাজ নফল আর নফল নামাজ জামাতে পড়ার নিয়ম নেই।একা একা যত ইচ্ছা পড়তে পারবেন।
Tag:শবে কদর ২০২৪ নামাজ,নিয়ম,নিয়ত,দোয়া, শবে কদরের নামাজের নিয়ম
Any business enquiry contact us
Email:-Educationblog24.com@gmail.com
(সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদেরGoogle News,FacebookএবংTelegram পেজ)