কি কি কারণে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে | স্বামী কখন তালাক দিতে পারে | স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নিয়ম

কি কি কারণে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে | স্বামী কখন তালাক দিতে পারে | স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নিয়ম


আসছালামু আলাইকুম সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আসা করি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আমরা ও আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসায় ভালো আছি। প্রিয় পাঠক আজকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিক নিয়ে আলোচনা করবো সেটা হলো কি কি কারণে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে | স্বামী কখন তালাক দিতে পারে | স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নিয়ম ইসলামিক দৃষ্টিকে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

প্রিয় দ্বীনি ভাইয়েরা তালাক  ইসলামের এবং মানব জীবনের সবচেয়ে নিকৃষ্ঠতম হালাল কাজ। আল্লাহর কাছে সব চেয়ে অপ্রিয় হালাল হচ্ছে তালাক। এই তালাক সম্পর্কে আমরা নানা ভূল ভ্রান্তিতে এখন আছি। অনেক মাসআলা না জানার কারনে অনেক ভূল করে আসতেছি। সংসারে নানান সমস্যা হয় এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমরা তালাক দিয়ে থাকি। অনেকে আছেন যারা  কি কি কারণে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে?  স্বামী কখন তালাক দিতে পারে | স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নিয়ম জানে না। তাই আজকের আমাদের এই আর্টিকেল।

তালাক প্রদানের উদ্দেশ্য হল অন্যায়, জুলুম ও নিদারুন কষ্ট, জ্বালাতন ও উৎপীড়ন ইত্যাদি অশান্তি হতে মুক্তি লাভ করা। প্রকৃতপক্ষে ইসলামে তালাক প্রদানের যে উদ্দেশ্য তা হল স্বামী স্ত্রী উভয়ের মধ্যে যে সকল অশান্তি সৃষ্টিকারী কারণ সমুহ রয়েছে তা হতে সংশোধনের চেষ্টা করা বা দুর করা।

   
       

    কি কি কারণে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে?

    প্রিয় দ্বীনি ভাইয়েরা তালাক আপনি চাইলে যখন তখন দিতে পারবেন না। তালাকের অধিকার আছে বলেই তালাক দিতে হবে এমন কোনো কথা ইসলামের কোথাও নেই। তালাক নিয়ে তালবাহানাকারী সম্পর্কে- 

    عن شهر بن حوشب قال، قال رسول الله صلي الله عليه وسلم ৃৃ إنَّ اللَّهَ لاَ يُحِبُّ كُلَّ ذَوَّاقٍ مِنَ الرِّجَالِ وَلاَ كُلَّ ذَوَّاقَةٍ مِنَ النِّسَاءِ

    তরজমা : (একটি দীর্ঘ হাদিসের শেষাংশ) হজরত শাহর ইবনে হাওশাব বর্ণনা করেন, হজরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- বহুনারীর স্বাদ আস্বাদনকারী পুরুষ এবং বহুপুরুষের স্বাদ আস্বাদনকারিনী মহিলাকে নিঃসন্দেহে আল্লাহ পছন্দ করেন না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা : হাদীস নং ১৯৫৩৫) তোমার মন চাইলেই তুমি তালাক দিতে পারবে না। তালাক দেবার নিদির্ষ্ট কারণ থাকতে হবে। যদি অধিক নারী ভোগের জন্যই তালাক দাও তাহলে তুমি জাহান্নামের জন্য প্রস্তুত হও। 

    স্বামী কখন তালাক দিতে পারে

    মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ “হে নবী! তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও তখন তাদেরকে তালাক দাও তাদের ‘ইদ্দাতের প্রতি লক্ষ্য রেখে, আর ‘ইদ্দাতের হিসাব সঠিকভাবে গণনা করবে।” (সূরাহ আত্‌-ত্বলাক ৬৫/১)

    হালাল জিনিসের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট জিনিস হচ্ছে ত্বলাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ। যদিও এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত তবুও স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রাখতে না পারলে ইসলামে এ ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের বিচ্ছেদ ঘটানোর সুযোগ করে দেয়া হয়েছে ত্বলাকের মাধ্যমে। এখানে ত্বলাক সংক্রান্ত কয়েকটি নিয়ম উধৃত করা হলো।
    ১। কোন স্ত্রীর মধ্যে স্বামীর প্রতি অবাধ্যতার লক্ষন দেখা দিলে স্ত্রীকে সদুপদেশ দিতে হবে। প্রয়োজনে তার শয্যা ত্যাগ করতে হবে, শিক্ষামূলক প্রহার করতে হবে। (এ মর্মে সূরা আন-নিসাঃ ৩৪ আয়াত দেখুন)
    ২। যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদের আশঙ্কা দেখা দেয় তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন ও স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত করতে হবে। “তারা দু'জন সংশোধনের ইচ্ছে করলে আল্লাহ্‌ তাদের উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য করে দেবেন।” (সূরা আন-নিসাঃ ৩৫)
    ৩। যদি তালাক দেয়া একান্তই অপরিহার্য হয়, তাহলে নারী যে সময়ে ঋতুমুক্তা ও পরিচ্ছন্না হবে, সে সময় যৌন মিলনের পূর্বেই স্বামী তাকে এক তালাক দিবে আর স্ত্রী তালাকের ইদ্দত তথা তিন ঋতু বা ঋতুমুক্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করবে- বাকারাঃ ২৮। এ ইদ্দতের মধ্যে যাতে পুনর্মিলন ও সন্ধির সুযোগ থেকে যায় সে জন্য স্বামী স্ত্রীকে তার গৃহ থেকে বহিষ্কৃত করবে না, আর স্ত্রীও গৃহ থেকে বের হয়ে যাবে না। অবশ্য স্ত্রী যদি খোলাখুলি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে স্বতন্ত্র কথা। (সূরা আত-ত্বলাক-১)

    প্রিয় দ্বীনি ভাইয়ের উপরে উল্লেখিত কোরআনের আয়াত অনুযায়ী সব সব গুলো দেখার পর যদি মনে হয় যে এই গুলোতে কাজ হচ্ছে না তখন গিয়ে আপনি স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন।

    তালাক প্রদানের পূর্বে করনীয়

    দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রী'র মধ্যে বিবাধ-বিরোধ মনোমালিন্য দেখা দিতেই পারে। স্বামী স্ত্রীর মাঝে এ ধরনের বিরোধ দেখা দিলে তাদের জন্য নসীহত রয়েছে যে আর তাহলে প্রত্যেকেই যেন অপরের ব্যাপারে নিজের মধ্যে ধৈর্য ও সহ্য শক্তি রক্ষা করে অপরের কোন কিছু অপছন্দনীয় হলে তা ঘৃনা হলেও সে যেন দাম্পত্য জীবন রক্ষার সার্থে তা অকপটে বরদাশত করতে চেষ্টা করে। এর পরেও যদি দাম্পত্য জীবন সংরক্ষন করতে ব্যার্থ হয় তবে সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন "তোমরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন বিরোধ মনোমালিন্য হয়েছে বলে ভয় কর তাহলে তোমরা স্বামীর পরিবারের থেকে একজন বিচারক এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন বিচারক পাঠাও। তারা দু'জন যদি বাস্তবিকই অবস্থার সংশোধন করতে চায় তাহলে আল্লাহ তাদের সেজন্য তওফীক দান করবেন এবং তার সংশোধন করে স্বমী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে মিল মিশ করার চেষ্টা করবেন। আর যদি মিলমিশ অসম্ভব বলে মনে করেন তবে তাদের মধ্যেবিচ্ছেদের ব্যবস্থা করবেন।

    মুসলিম পারিবারিক আইনে বিরোধ মিমাংসার জন্য এবং স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আপোস করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চেয়ারম্যান বা সালিসী পরিষদের উপর। তিনি উভয় পক্ষকে নটিশের মাধ্যমে উপস্তিত করার জন্য বলবেন। কোন পক্ষ যদি হাজির না হয় তবে তাকে হাজির করার ক্ষমতা তার নেই। স্বামী-স্ত্রী উভয় পক্ষের মধ্যে আপোস মীমাংসা করার চেষ্টা করা ছাড়া চেয়ারম্যানের আর কোন দ্বায়িত্ব নেই। তালাক কার্যকর অথবা অকার্যকর কোনটাই করার এখতিয়ার চেয়ারম্যানের নেই।

    স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নিয়ম

    তালাক একটি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর নর-নারীর দাম্পত্য জীবনকে সুখময় ও শান্তিময় করে তোলার জন্য এবং একটি পারিবারিক জীবনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে প্রয়োজনে তালাকের পথ গ্রহণ করা যায়।
    তালাককে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে :
    (ক) তালাকে আহসান,
    (খ) তালাকে হাসান বা ভালো তালাক
    এবং তালাকে বিদ’আত।
    এক তালাক প্রধান করে মুদ্দত অতিক্রান্ত করাকে আহসান তালাক বলে। তিন তুহূরের মধ্যে তিন তালাক প্রধান করাকে তালাকে বিদ’আত বলে। তিন তালাকে সীমাবদ্ধ থাকলে স্ত্রীকে পুনরায় বিনা আকদে গ্রহণ করা যায়। তবে ‘বায়েন’ বললে নতুন আকদের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
    বায়েন তালাক
    যদি এক বা দুই তালাক বায়েন ছাড়া বলে, তাহলে ইচ্ছা করলে স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ না করেই গ্রহণ করা যায়। আর যদি বায়েনসহ তালাক বলে, তাহলে পুনরায় বিবাহ করে স্ত্রীকে গ্রহণ করতে হয়। বায়েনসহ তালাক দিলে পুনরায় বিবাহ করে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক স্থাপন করার সুযোগ থাকায় এই তালাককে মুখাফ্ফাফ বায়েন বা হালকা বায়েন বলে।

    মুগাল্লাযা বায়েন তালাক

    একসাথে তিন তালাক দেয়াকে মুগাল্লাযা বায়েন তালাক বলে। একসাথে তিন তালাকের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে নিয়ে আর পুনরায় ঘর করা যাবে না। আর সেই তালাক সাথে সাথেই পূর্ণ হয়ে গেল। পুনরায় বিবাহ করে ঘর-সংসার করার আর কোন সুযোগ থাকলো না। তবে যদি ভবিষ্যতে উক্ত মহিলার অন্যের সাথে বিবাহের পর পুনরায় সে যদি তালাকপ্রাপ্ত হয় বা তার স্বামী মারা যায়, তাহলে সে প্রথম স্বামীর সাথে ইচ্ছা করলে বিবাহ বসতে পারবে বা উক্ত পুরুষ তাকে ইচ্ছা থাকলে বিবাহ করে ঘর করতে পারবে।

    রিজয়ী তালাক

    ‘রিজয়ী’ শব্দের অর্থ প্রত্যাবর্তনযোগ্য। এটা এমনি ধরনের তালাক যা প্রয়োগ করলে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনা যায়। বায়েন ছাড়া এক বা দু’তালাককে রিজয়ী তালাক বলে। ইদ্দতের মধ্যে উভয়ে একমত হলে পুনরায় স্বামী-স্ত্রীরূপে গ্রহণ করে ঘর-সংসার করতে পারবে, পুনরায় আর কোন বিবাহের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু ইদ্দত পুরা হয়ে গেলে এই তালাক বায়েক তালাকে পরিণ হয়ে যায়। তখন স্ত্রীকে গ্রহণ করতে চাইলে বিবাহের প্রয়োজন হবে। বিনা বিবাহে গ্রহণ করা যাবে না। আর পুনরায় না আনার ইচ্ছা করলে স্ত্রী অন্য পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
    যদি এক তালাক দিয়ে স্ত্রীকে ইদ্দতের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনে তারপর আবার তাকে আরেক তালাক দিল, এং ফিরিয়ে আনলো। তারপরও আবার আরেক তালাক দিল। এবার তাকে আর বিনা বিবাহে তো দূরের কথা, বিবাহ করেও আনা জায়েজ হবে না।

    তালাকের শব্দ

    তালাকে দু’ধরনের শব্দ ব্যবহার করা যায়। প্রথমত, অর্থবোধক প্রকাশ্য শব্দ যাতে প্রকাশ্যে তালাক বোঝা যায়। যথা : কেউ বলল, আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিলাম।
    দ্বিতীয়ত, এমনি শব্দ যার একাধিক অর্থ হতে পারে। উক্ত শব্দ দ্বারা তালাক নির্ভর করে তালাকদাতার নিয়্যতের উপর।
    যথা : কেউ বলল, “আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার বাপের বাড়ি চলে যাও বা তুমি আমার বাড়ি থেকে চলে যাও” ইত্যাদি।

    আরো অনেক প্রকার শব্দ হতে পারে। এ সব শব্দ দ্বারা তালাক নির্ভর করে তালাকদাতার নিয়্যতের উপর।
    আর প্রকাশ্য শব্দ দ্বারা তালাক দিলে এবং উক্ত শব্দগুলো যতবার বলবে, ততবার তালাক হবে। যথা : কেউ যদি তার স্ত্রীকে লক্ষ্য করে বলে, “তোমাকে তালাক দিলাম”, “তোমাকে তালাক দিলাম”, তারপর যদি বলে তোমাকে “তোমাকে তালাক দিলাম”। তাহলে সর্বমোট তিনবার তালাক বলায় তিন তালাক হয়ে যাবে। প্রকাশ্য শব্দগুলো যদি হাসতে হাসতে স্ত্রীকে লক্ষ্য করে বলে এবং মনে নিয়্যত না থাকে তবুও তালাক হয়ে যাবে।

    Tag:কি কি কারণে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে, স্বামী কখন তালাক দিতে পারে, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নিয়ম

                                   
    Previous Post Next Post


    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com



    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com

    (সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Facebook এবং Telegram পেজ)