আসছালামু আলাইকুম? সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোনেরা সবাই কেমন আছেন? আসা করি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। প্রিয় পাঠকবৃন্ধ আজকে আমরা মহরম মাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। সেটা হলো আশুরার রোজা কয়টি ২০২৩-মহরমের/আশুরার রোজার/সিয়ামের ফজিলত - আশুরা বিষয়ক ২ টি বই PDF Download এইসব আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়।
আশুরার রোজা কয়টি
আশুরার রোজা হবে দুটি—মহররমের ১০ তারিখ একটি, আর ৯ তারিখ অথবা ১১ তারিখ আরো একটি।
আশুরার ২ টি রোজা নিয়ে হাদিস
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখো, তবে এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য ১০ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন আরো একটি রোজা রেখে নিয়ো।' (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২১৫৪)
মুসলিম শরিফে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) যখন আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন, তখন সাহাবিরা অবাক হয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, বিধর্মীরা তো এই দিনটিকে বড় দিন মনে করে। এই দিনে তারাও রোজা পালন করে। আমরা যদি এই দিনে রোজা রাখি তাহলে তো এদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হবে। তাদের প্রশ্নের জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন (তারা যেহেতু এদিন একটি রোজা পালন করে), আগত বছর ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখ মিলিয়ে দুই দিন রোজা পালন করব, ইনশাআল্লাহ। (মুসলিম, হাদিস : ১১৩৪)
মহরমের/আশুরার রোজার/সিয়ামের ফজিলত
আশুরার ফজিলত : হিজরি সালের ১২ টি মাসের মধ্যে চারটি হারাম মাস । যিলকদ , যিলহজ্ব , মোহররম ও রজব । শুরু হারাম মাস মোহররম ও শেষ হারাম মাস যিলহজ্ব এবং মধ্যখানে হারাম মাস রজব । আরবরা মোহররম মাসকে “ স্বফরুল আওয়াল ” তথা প্রথম সফর নাম রেখে যুদ্ধকে তাদের ইচ্ছামত হালাল ও হারাম করতো । আল্লাহ তা'য়ালা ইহা বাতিল করে দিয়ে তার ইসলামি নামকরণ করলেন আল - মুহাররাম । তাই গুরুত্বের জন্য মোহররম মাসকে “ শাহরুল্লাাহিল মুহাররাম ” তথা আল্লাহর মোহররম মাস বলা হয়েছে । আশুরার দিন নি : সন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন । এ দিন আমাদেরকে এক ঐতিহাসিক ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় । দ্বীন হেফাজতের উদ্দেশ্যে হিজরত ও হক প্রতিষ্ঠার জন্য এক মহান দিন । আর এ জন্যই দিনটিকে বিশেষ এক ইবাদত রোজার সাথে স্মরণ করা প্রতিটি মুসলিমের উচিত । একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা সুস্পষ্ট যে , মূসা [ আঃ] ও তাঁর জাতি বনি ইসরাঈল ফেরাউনের অন্যায় - অত্যাচার , নিষ্পেষণের জাঁতাকল ও গোলামী থেকে মিশর ছেড়ে সাগর পার হয়ে এ দিনে নাজাত পেয়েছিলেন । তাই আল্লাহর শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞার্থে এ দিনে রোজা রেখেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে বনি ইসরাঈলরাও রোজা রাখত । এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন , যার ফজিলত ও তাৎপর্য অধিক । নিম্নে তার কিছু উল্লেখ করা হলো :
( ক ) এ দিনে মূসা [ ] ও বনি ইসরাঈলের নাজাত ও ফেরাউন ও তার জাতির ধ্বংস : আল্লাহ তা'আলা তাঁর রসুল মূসা [ ]
ও বনি ইসরাঈলকে ফেরাউনের জুলুম থেকে এ দিনে নাজাত দেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে বাহরে কালজুম তথা লহিত সাগরে ডুবিয়ে হালাক - ধ্বংস করেন ।
১. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী : “ আর যখন আমি তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখণ্ডিত করেছি , অতঃপর তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছি এবং ডুবিয়ে দিয়েছি ফেরাউনের লোকদিগকে তোমাদের চোখের সামনে । ” [ সূরা বাকারা : ৫০ ]
২. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী : “ আর আমি বনি ইসরাঈলকে পার করে দিয়েছি সাগর । তারপর তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী , দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশ্যে । এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল , তখন বলল , এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে , কোন মাবুদ নেই তাঁকে ছাড়া যার উপর ঈমান এনেছে বনি ইসরাঈলরা ।
বস্তুত : আমিও তাঁরই অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত । এখন একথা বলছ ! অথচ তুমি ইতিপূর্বে নাফরমানি করছিলে ! এবং পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে । এতএব , আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে । আর নি : সন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না । ” [ সূরা ইউনুস : ৯০-৯২ ]
عن ابن عباس رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قدم المدينة فوجد اليهود صياما يوم عاشوراء فقال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم : « ما هذا اليوم الذي تصومونه ؟ » فقالوا : هذا يوم عظيم ، أنجي الله فيه موسى وقومه ، وغرق فرعون وقومه فصامه موسى شكرا ، فنحن تصومه ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : « فنحن أحق وأولى بموسى منكم » فصامه رسول الله صلى الله عليه وسلم وأمر بصيامه . متفق عليه
৩. ইবনে আব্বাস [ রাঃ] থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ [সাঃ ] যখন মদিনায় আগমন করলেন তখন দেখলেন যে , ইহুদিরা আশুরার রোজা পালন করে । তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন : “ তোমরা এ দিনে কেন রোজা রাখ ? ” তারা বলল : এটা এক মহান দিবস । এ দিনে আল্লাহ মূসা [ আঃ] ও তার জাতিকে নাজাত দেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে হালাক - ধ্বংস করেন । তাই মূসা [ আঃ ] ও তাঁর জাতি এদিনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে রোজা রাখেন এ জন্যে আমরাও রাখি । রসুলুল্লাহ [ সাঃ] বললেন : “ আমরা মূসা [ আঃ ] - এর অনুসরণ করার বেশি হকদার । ” এরপর তিনি আশুরার রোজা রাখেন এবং সাহাবাগণকেও রোজা রাখার জন্য নির্দেশ করেন ।
১. বুখারী হাঃ নং ২০২৪ ও ৩৩৯৭ মুসলিম ১১৩০ ও ১২৮ শব্দ তারই
( খ ) নবী [সাঃ ] এ দিনের রোজা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি অনুসন্ধান করতেন :
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال : « ما رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يتحرى صيام يوم فضله على غيره إلا هذا اليوم يوم عاشوراء وهذا الشهر يعني شهر رمضان » . متفق عليه .
ইবনে আব্বাস [ রাঃ] থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমি রসুলুল্লাহ [সাঃ ] কে যেভাবে আশুরা ও রমজানের রোজার গুরুত্ব সহকারে অনুসন্ধান করতে দেখেছি অনুরূপ অন্য কোন রোজার ব্যাপারে দেখেনি । ” ১
( গ ) এ দিনে ছোট বাচ্চারাও রোজা রাখত :
عن الربيع بنت معوذ قالت : أرسل النبي صلى الله عليه وسلم غداة عاشوراء إلى قرى الأنصار من أصبح مفطرا فليتم بقية يومه ، ومن أصبح صائما فليصم ، قالت : فكنا نصومه بعد
وتصوم صبيائنا ، وتجعل لهم اللعبة من العهن ، فإذا بكى أحدهم على الطعام أعطيناه ذاك حتى يكون عند الإفطار . متفق عليه . وفي رواية لمسلم : وتصنع لهم اللعبة من العهن ، فنذهب به معنا فإذا سألونا الطعام أعطيناهم اللعبة تلهيهم حتى يتموا صومهم .
রুবাইয় ' বিনতে মু'আওব্যে ( রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : নবী [ সাঃ] আশুরার দিন সকালে আনসারী সাহাবাগণের গ্রামগুলোতে দূত পাঠিয়ে ঘোষণা দিতে বলেন : “ যে ব্যক্তি সকালে কিছু খেয়ে ফেলেছে সে যেন বাকি দিন না খেয়ে পূর্ণ করে । আর যে ব্যক্তি না খেয়ে আছে সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে । তিনি ( রুবাইয় ' ) বলেন : এরপর আমরা নিজেরা রোজা রাখতাম এবং আমাদের বাচ্চাদেরকেও রোজা রাখাতাম । আর তাদেরকে তুলা দ্বারা বানানো খেলনা দিতাম । যখন তাদের কেউ খানার জন্য কাঁদত তখন ইফতারি পর্যন্ত ঐ খেলনা দিয়ে রাখতাম । মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে : আমরা বাচ্চাদের জন্য তুলা দ্বারা খেলনা বানাতাম এবং আমাদের সাথে রাখতাম । যখন তারা খানা চাইত তখন তাদেরকে খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম ; যাতে করে তারা তাদের রোজা পূর্ণ করে ।
( ঘ ) এ দিনের রোজা রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে ফরজ ছিল :
عن عائشةرضي الله عنها قالت : كان يوم عاشوراء تصومه رضي قريش في الجاهلية ، وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم ، فلما فرض يصومه ، فلما قدم المدينة صامه وأمر بصيامه ، رمضان ترك يوم عاشوراء ، فمن شاء صامه ومن شاء تركه . متفق عليه .
আয়েশা ( রাযিয়াল্লাহু আনহা ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : জাহেলিয়াতের জামানায় কুরাইশরা আশুরার রোজা রাখত এবং রসুলুল্লাহ [সাঃ ] ও রাখতেন । এরপর যখন তিনি মদিনায় আগমন করলেন তখন তিনি আশুরার রোজা রাখেন এবং রাখার জন্য নির্দেশ করেন । অতঃপর যখন রমজানের রোজা ফরজ হলো তখন তিনি রাসুল [সাঃ- ] আশুরার রোজা ( ফরজ হিসাবে ) রাখেননি । ( সুন্নত হিসাবে রেখেছেন ) এরপর যে চাইত রাখত এবং যে চাইত রাখত না । ”
( ঙ ) এ রোজা আল্লাহর মাস মোহররম মাসে যার স্থান ও মর্যাদা রমজান মাসের পরেই :
عن أبي هرير رضي الله انهو قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : « أفضل الصيام بعد شهر رمضان شهر الله المحرم رواه مسلم .
আবু হুরাইরা [রাঃ- ] থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন : রসুলুল্লাহ [ সাঃ] বলেছেন : “ রমজানের পরে সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মোহররমের রোজা । ”
( চ ) এ দিনের রোজা গত এক বছরের পাপকে মিটিয়ে দেয়ঃ
عن أبي قتادة রাঃ أن رسول الله صلى الله عليه وسلم سئل عن صيام يوم عاشوراء فقال : « صيام يوم عاشوراء أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله » . رواه مسلم .
আবু কাতাদা [ রা] থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ [সাঃ ] কে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন : “ আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট আশা করছি যে , তিনি বিগত এক বছরের ক্ষমা করে দিবেন ।
আশুরার ২ টি বই PDF Download
আশুরা ও কারবালা Pdf Download
Title | আশুরা ও কারবালা |
Page | 64 |
Size | 2 Mb |
আশুরায়ে মুহাররম ও আমাদের করণীয় Pdf Download
Title | আশুরায়ে মুহাররম ও আমাদের করণীয় PDF |
Page | 33 |
Size | 940 kb |
টাগঃআশুরার রোজা কয়টি ২০২৩,মহরমের/আশুরার রোজার/সিয়ামের ফজিলত,আশুরা বিষয়ক ২ টি বই PDF Download
Any business enquiry contact us
Email:-Educationblog24.com@gmail.com
(সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদেরGoogle News,FacebookএবংTelegram পেজ)