আসছালামু আলাইকুম প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা সবাই কেমন আছেন। আসা করি সবাই ভালো আছেন। বন্ধুরা আজকে আমরা আমাদের তারাবির নামাজের নিয়ম ও নিয়ত বিস্তারিত জেনে নিন। আসা করি তোমাদের উপকার হবে। নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ-
তারাবীহ নামাজঃ-তারাবীহ (تراويح) হল ইসলাম ধর্মের পবিত্র রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ অতিরিক্ত রাতের নামাজ যেটি মুসলিমগণ রমজান মাস ব্যপী প্রতি রাতে এশার ফরজ নামাজের পর পড়ে থাকেন।রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা রমজানের রোজাগুলো ফরজ করেছেন এবং এর রাতে তারাবি নামাজের জন্য দণ্ডায়মান হওয়াকে অশেষ পুণ্যের কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।’ তিনি তার সাহাবীদের নিয়ে তিন রাত্রি তারাবীহ আদায় করেছেন। উম্মতের উপর ফরজ হয়ে যেতে পারে এ আশঙ্কায় পরেরদিন তিনি আর জামাতের সাথে তারাবীহ আদায় করেননি। মুসলমানগন আবু বকর (রা:) এর খেলাফত কাল ও উমর (রা:) এর খেলাফতের প্রথম দিকে এ অবস্থায়ই ছিল। এরপর আমীরুল মুমিনীন উমর (রা:) প্রখ্যাত সাহাবী তামীম আদদারী (রা:) ও উবাই ইবনে কাআব (রা:) এর ইমামতিতে তারাবীর জামাতের ব্যবস্থা করেন। যা আজ পর্যন্ত কায়েম আছে। আলহামদুলিল্লাহ! এ তারাবীর জামাত শুধু রমজান মাসেই সুন্নাত।
তারাবীর গুরুত্ব ও ফযীলত
পবিত্র রমজান মাস খায়ের ও বরকতের বসন্তকাল। রমজানের দিনে রোযা রাখাকে আল্লাহ তাআলা ফরজ করেছেন আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র যবানে রাতের “কিয়াম” যাকে কিয়ামে রমযান বা তারাবী বলে, সুন্নত বানিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
من قام رمضان ايمانا و احتسابا غفرله ماتقدم من ذنبه
অনুবাদ: যে ব্যক্তি ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে পরকালীন প্রতিদান কামনায় রমযান মাসের রাতে কিয়াম করবে(তারাবী পড়বে ইমাম নববী রহ: মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থে লিখেছেন) তার অতীত জীবনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বুখরী শরীফ ও মুসলিম)
তবে বিভিন্ন জনমতের কারণে তারাবীর নামাযকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাই রাখা হয়েছে, ফরজ করা হয়নি, কিন্তু এতে সন্দেহ নেই যে রমযানের উপকারিতা ও খায়ের বরকত পূর্ণরূপে লাভ করতে হলে তারাবী নামায পড়া জরুরী। তারাবী নামায পড়ার দ্বারা রমযান ও কুরআনের হক আদায় হবে, রোযার উদ্দেশ্য তাকওয়া হাসিলে সাহায্য পাওয়া যাবে,আল্লাহ তাআলার বিশেষ রহমত ও মাগফিরাত, সর্বোপরি আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে। তাই আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দাদের জন্য উচিৎ তারাবীর প্রতি উদগ্রীব হয়ে থাকে ।
তারাবীর গুরুত্ব এ থেকে ও সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, সুন্নত ও নফলের সাধারণ নিয়মে জামাআত নিষিদ্ধ, অথচ তারাবী নামাযের জামাআত বিধিবদ্দ হয়েছে। তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে নিয়মতান্ত্রিকভাবে জামাআতের ব্যবস্থা এজন্যই করেননি যে, তা আবার উম্মতের উপর ফরজ হয়ে যায় কি না। এ থেকে বোঝা যায়, তারাবীর মাকাম -মর্যাদা সাধারণ নফল নামায থেকে অনেক উর্দ্ধে। মোট কথা অনেক দলীলের ভিত্তিতে ফকীহগণ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, তারাবীর নামায অন্য সব নফলের মত নয়, বরং এটা না পড়লে গুনাহ হবে। এর বিপক্ষের মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় প্রভাবান্নিত হয়ে নিজেকে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করবেন না। রমযানের রাতগুলোকে মহাসুযোগ মনে করে গুরুত্বের সাথে তারাবীর নামাযে যত্নবান থাকুন এবং শেষ রাতে ” তাহাজ্জুদ নামাযের ব্যপারে (যা সারা বছরের নামায) যত্নবান হওয়ার চেষ্টা করুন।
তারাবির নামাজের নিয়ম
শুধু মাত্র রমজান মাসে এই তারাবীহ্ এর নামাজ পড়তে হয়। এশা’র নামাজের ফরজ ও ২ রাকাত সুন্নত আদায় করার পরে এবং বিতর নামাজ এর আগে ২০ রাকাত তারাবীহ্ এর নামাজ আদায় করতে হয়। যদিও তারাবীহ্ নামাজের নিয়ত, দোয়া ও মোনাজাত অনেকেই জানেন, তার পরেও আরো একবার ভালো ভাবে দেখে নিবেন।
তারাবির নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা, রাকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআলা, (ইক্বতাদাইতু বিহাজাল ইমাম) মুতাওয়াঝঝিহান ইলা ঝিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার। (ইমামের পিছনে নামাজ পড়লে বন্ধনীর অংশটুকুসহ পড়তে হবে)
বাংলায় নিয়ত
তারাবির নামাজের দুই রাকাআত সুন্নাত নামাজ (এ ইমামের সঙ্গে) কিবলামুখী হয়ে আল্লাহ তাআলার জন্য আদায় করার নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার।
Tag: তারাবির নামাজের নিয়ম ও নিয়ত,গুরুত্ব ও ফজিলত বিস্তারিত জেনে নিন, Tarabir Namjer Niyom, তারাবির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত