প্রত্যাবর্তনের লজ্জা আল মাহমুদ কবিতা
কবিতা প্রত্যাবর্তনের লজ্জা
Kobita Prottabortoner Lojja Al Mahmud
প্রত্যাবর্তনের লজ্জা
আল মাহমুদ
শেষ ট্রেন ধরবাে বলে এক রকম ছুটতে ছুটতে স্টেশনে পৌঁছে দেখি
নীলবর্ণ আলাের সংকেত । হতাশার মতােন হঠাৎ
দারুণ হুইসেল দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে ।
যাদের সাথে , শহরে যাবার কথা ছিল তাদের উল্কণ্ঠিত মুখ
জানালায় উবুড় হয়ে আমাকে দেখছে । হাত নেড়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে ।
আসার সময় আব্বা তাড়া দিয়েছিলেন , গােছাতে গােছাতেই
তাের সময় বয়ে যাবে , তুই আবার গাড়ি পাবি ।
আম্মা বলছিলেন , আজ রাত না হয় বই নিয়েই বসে থাক
কত রাত তাে অমনি থাকিস ।
আমার ঘুম পেলাে । এক নিঃস্বপ্ন নিদ্রায় আমি
নিহত হয়ে থাকলাম ।
অথচ জাহানারা কোনদিন ট্রেন ফেল করে না । ফরহাদ
আধ ঘণ্টা আগেই স্টেশনে পৌঁছে যায় । লাইলী ।
মালপত্র তুলে দিয়ে আগেই চাকরকে টিকিট কিনতে পাঠায় । নাহার
কোথাও যাওয়ার কথা থাকলে আনন্দে ভাত পর্যন্ত খেতে পারে না ।
আর আমি এদের ভাই
সাত মাইল হেঁটে শেষ রাতের গাড়ি হারিয়ে
এক অখ্যাত স্টেশনে কুয়াশায় কাঁপছি ।
কুয়াশার শাদা পর্দা দোলাতে দোলাতে আবার আমি ঘরে ফিরবাে ।
শিশিরে আমার পাজামা ভিজে যাবে । চোখের পাতায়
শীতের বিন্দু জমতে জমতে নির্লজ্জের মতােন হঠাৎ
লাল সূর্য উঠে আসবে । পরাজিতের মতাে আমার মুখের উপর রােদ
নামলে , সামনে দেখবাে পরিচিত নদী । ছড়ানাে ছিটানাে
ঘরবাড়ি , গ্রাম । জলার দিকে বকের ঝাঁক উড়ে যাচ্ছে । তারপর
দারুণ ভয়ের মতাে ভেসে উঠবে আমাদের আটচাল।
কলার ছােট বাগান ।
দীর্ঘ পাতাগুলাে না না করে কাঁপছে । বৈঠকখানা থেকে আব্বা
একবার আমাকে দেখে নিয়ে মুখ নিচু করে পড়তে থাকবেন ,
ফাবি আইয়ে আলা ই - রাব্বিকুমা তুকাত্বিবান ...।
বাসি বাসন হাতে আম্মা আমাকে দেখে হেসে ফেলবেন ।
ভালােই হলাে তাের ফিরে আসা । তুই না থাকলে
ঘরবাড়ি একেবারে কেমন শূন্য হয়ে যায় । হাত মুখ
ধুয়ে আয় । নাস্তা পাঠাই ।
আর আমি মাকে জড়িয়ে ধরে আমার প্রত্যাবর্তনের লজ্জাকে
ঘষে ঘষে তুলে ফেলবাে ।
Tag: প্রত্যাবর্তনের লজ্জা আল মাহমুদ কবিতা, কবিতা প্রত্যাবর্তনের লজ্জা, Kobita Prottabortoner Lojja Al Mahmud