এইচএসসি এসাইনমেন্ট ২০২১ উত্তর /সমাধান ইতিহাস ২য় পত্র (এসাইনমেন্ট ১) | ২০২১ সালের এইচএসসি ইতিহাস এসাইনমেন্ট সমাধান (২য় পত্র)


    ২০২১ সালের এইচএসসি ইতিহাস এসাইনমেন্ট সমাধান (২য় পত্র)


    ফরাসি বিপ্লব পরবর্তী ফ্রান্স পুনর্গঠনে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের গণমুখী সংস্কার মূল্যায়ন 

    প্রাক - বিপ্লব ফ্রান্সের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা বর্ণনা

    প্রাক - বিপ্লব : ফ্রান্স 

    ফরাসি বিপ্লব কোনাে আকস্মিক ঘটনা ছিল না । ফরাসি পুরাতন সমাজ ব্যবস্থার মধ্যেই এর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল । পুরাতন সমাজব্যবস্থা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনে উন্নতির কোনাে স্বাদ এনে দিতে ব্যর্থ হয় । শােষণ , নির্যাতন , বঞ্চনা ও হতাশায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নিমজ্জিত ছিল । সামন্ত সমাজের পক্ষে জনগণকে শােষণ ও দারিদ্র ছাড়া আর কিছুই দেওয়ার ছিল না । ফলে অর্থনীতি পঙ্গু হতে থাকে । সেই অবস্থায় পরিবর্তনের পক্ষে দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবী লেখক সাহিত্যিকগণ জনগণকে সচেতন করার জন্যে তাদের লেখনী চালিয়ে যান । ফ্রান্সে গির্জাকে জনকল্যাণে ব্যবহারের দীর্ঘ দিনের চেষ্টা ব্যর্থ হতে থাকে । এ সবই পুরাতন রাজনীতি , সমাজ ও দৃষ্টিভঙ্গি । ফরাসি বিপ্লব এ সবই পরিবর্তন করেছে । কীভাবে করছে - তা জানা দরকার । সে সম্পর্কে জানতে হলে পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজ , অর্থনীতি , রাজনীতি এবং নতুন চিন্তার উন্মেষ কীভাবে ঘটেছিল তা জানা অপরিহার্য । 


    ( ক ) সামাজিক অবস্থা 

    ফ্রান্সসহ ইউরােপের তত্ত্বালীন সমাজ ব্যবস্থাকে পূর্বতন সমাজ ’ বলা হয়ে থাকে । বিপ্লব এই পুরাতন ব্যবস্থাকে ভেঙে নতুন সমাজ সৃষ্টিতে অবদান রেখেছিল । পুরাতন ফরাসি সমাজ তিনটি প্রধান সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল । পুরাতন বাবস্থায় যাজকদেরকে প্রথম সম্প্রদায় , ( First Estate ) অভিজাতদের দ্বিতীয় সম্প্রদায় ( Second Estate ) এবং কৃষক , বুর্জোয়া , বণিক , শিক্ষক , শ্রমিকসহ সমাজের অপর গােষ্ঠীসমূহকে তৃতীয় সম্প্রদায় ( Third Estate ) বলা হতাে । 


    ফ্রান্সের জনসংখ্যার ৯৬ শতাংশই ছিল তৃতীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত । বাকি মাত্র ৪ শতাংশ ছিল যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায়ভুক্ত । অবে দেশের সিংহভাগ সুযােগ - সুবিধা ভােগ করত যাজক ও অভিজাতরা । তারা সকলেই ছিল প্রায় সকল ধরনের কর প্রদান থেকে মুক্ত । গুরুত্বপূর্ণ পদ , সামরিক অফিসারসহ রাষ্ট্রের প্রশাসনিক , বিচার বিভাগীয় এবং রাজস্ব ব্যবস্থার সাথে অভিজাত সম্প্রদায় গভীরভাবে জড়িত ছিল । এদেরকে অধিকার প্রাপ্ত ( Privileged ) এবং তৃতীয় সম্প্রদায়কে অধিকারহীন ( Non - privileged ) বলে অভিহিত করা হতাে । 


    ফ্রান্সে বিপ্লবের আগে যাজকের সংখ্যা ছিল এক লাখ ত্রিশ হাজার এবং অভিজাত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল তিন লাখ পঞ্চাশ হাজারের মতাে । ধর্মযাজকদের মধ্যেও কিছু স্তর এবং প্রকারভেদ ছিল । কালাে ও “ সাদা পােশাকধারী প্রধান এ দুই ভাগে এদেরকে বিভক্ত করা হতাে । পুরাতন ব্যবস্থার শেষের দিকে কালাে পােশাকধারী যাজকের সংখ্যা ৬০ হাজারে নেমে আসে । এ কারণে যে , এদের ওপর প্রভাবশালী অভিজাতদের খবরদারিত্ব বেড়ে যায় । উর্ধ্বতন যাজকরা অভিজাতদের মতই অতিরিক্ত সুযােগ - সুবিধা ভােগ করতেন । বিশপ , মঠাধ্যক্ষ এবং ক্যাননের সংখ্যাও ছিল প্রায় ১০ হাজারের মতাে । দেশের সর্বোচ্চ যাজকদের বিশপ বলা হতাে বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে ১৩৯ জন বিশপ ছিলেন । নিম্নতর যাজকদের মধ্যে , যেমন কুরে ও ভিকার নামে যারা পরিচিত ছিলেন তারা তৃতীয় সম্প্রদায়ের মতােই অধিকারহীন ছিলেন । 


    অভিজাতদেরকে গােত্র , সামরিক , নৌ এবং আমলা ইত্যাদি অভিধায় বিভক্ত করা হয়েছিল । গােত্রভুক্ত অভিজতের সংখ্যা ছিল এক লাখ দশ হাজারের মতাে । অপরাপর অভিলাতের সংখ্যা ছিল আড়াই লাখ । পূর্বতন ব্যবস্থায় কৃষকদের অবস্থা এক রকম ছিল না । তাদের মধ্যেও ছিল নানা স্তরভেদ । কেউ স্বাধীন কৃষক , কেউ সামান্য সমমির মালিক , কেউ প্রজা , ক্ষেতমজুর বা পচিাষি ছিল । 


    তবে ফ্রালের পূর্বাঞ্চলে এবং কিছুটা উত্তরাঞ্চলে প্রায় ১০ লাখের মতাে কুমক মেনমটাবো ( কৃষক মারা গেলে জমিও জরান ) প্রথার কারণে উত্তরাধিকারীদের হাতে জমির ২৪ ফরাসি বিপ্লব মালিকানা হস্তান্তর করতে পারত না । বিভিন্ন প্রদেশে জমির মালিকানায় তারতম্য ছিল । কোথাও ২০ শতাংশ , কোথাওবা ৭০ শতাংশ জমি কৃষকের হাতে ছিল । গড়ে দেশের ৩৫ শতাংশ জমির মালিক ছিল কৃষক । তবে কৃষকদেরকেই সব ধরনের করের বােঝা বহন করতে হতাে । এ কারণে ফ্রান্সের পুরাতন সমাজ ব্যবস্থায় একটি নির্দয় ও জটিল কর ব্যবস্থা গড়ে ওঠে । তৃতীয় সম্প্রদায়ই ' এই কর প্রদান করত । 


     ( খ ) অথনৈতিক ব্যবস্থা

    আঠারাে শতকে ফ্রান্স ছিল মূলত একটি কৃষিপ্রধান দেশ । ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের পূর্বমুহূর্তে ফ্রান্সের মােট জনসংখ্যা ছিল দুই কোটি পঞ্চাশ লাখ । এর মধ্যে দুই কোটি দশ লাখ যুক্ত ছিল কৃষি কাজের সাথে । তবে সেই সময়ে ফ্রান্সে কয়েকটি শহর বেশ দ্রুত শিল্প উৎপাদন ও বাণিজ্যের সম্প্রসারণের ফলে ব্যাপক জনবসতিতে ভরে ওঠে । বিপ্লবের প্রাক্কালে প্যারিতে ছয় লাখ , লিওতে এক লাখ পয়ত্রিশ হাজার এবং মার্সেলে নব্বই হাজার ফরাসি নাগরিক বসবাস করত । ফ্রান্সের জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পের চেয়ে কৃষির অবদানই ছিল বেশি । ১৭৮৯ - এ ফ্রালের জাতীয় আয় কৃষি থেকে লাভ করেছে ১,৮২৬ মিলিয়ন লিভ্রা এবং শিল্প থেকে মাত্র ৫২৫ মিলিয়ন লিস্রা । বিপ্লব - পূর্ব ফ্লাপে দুই পদ্ধতির কর ব্যবস্থা চালু ছিল—  

    ১ ) প্রত্যক্ষ কর ও 

    ( ২ ) পরােক্ষ কর । 

    প্রত্যক্ষ করসমূহ হচ্ছে- 

    ( ১ ) তেই ( Taille ) - মােটি আয়ের দেয় কর । 

    ( ২ ) কাপিলাশি ( Capitation ) - মাথাপিছু নয় বরং উৎপাদনভিত্তিক দেয় কর । 

    ( ৩ ) ভাতিয়্যাম ( Vingtieme ) - স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ওপর প্রদেয় আয়কর । 

    পনেরতম লুই ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে এই করটি প্রবর্তন করেন । অভিজাতদের একটি অংশ আংশিকভাবে এই কর প্রদান করলেও যাজক সম্প্রদায় এ কর দেওয়া থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থেকে যায় । পরােক্ষ করসমূহ ছিল মূলত নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রীর ওপর ; যেমন , 

    ( ১ ) গ্যাবেল ( Gabelle ) - লবণকর - ভয়াবহ এই কর কৃষকদেরকে প্রায় নিঃস্ব করে ফেলে । ফ্রান্সে আইন করা হয়েছিল যে , দুধের শিশু থেকে মৃত্যু পথযাত্রীকেও নির্দিষ্ট মূল্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ লবণ ক্রয় করতেই হবে , তবে স্থানভেদে তাতেও তারতম্য ছিল ; 

    ( ২ ) কর্ভি ( Corvee ) - বিনা পারিশ্রমিকে বাধ্যতামূলক শ্রমদান । সামন্ত প্রভুদের ব্যক্তিগত জমিতে সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনে কৃষকদেরকে বিনা পারিশ্রমিকে বাধ্যতামূলকভাবে এ ধরনের শ্রম প্রদান করতে হতাে ; 

    ( ৩ ) এ্যাদি ( Aide ) - ভােগ্যবস্তুর ওপর কৃষকদেরকে কর দানে বাধ্য করা ; 

    ( ৪ ) বানালিতে ( Banalite ) - সামন্ত প্রভুর কৃষিজ যন্ত্রপাতি বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার করা এবং এর বিনিময়ে উৎপাদিত ফসলের এক - দশমাংশ চার্জ দিতে বাধ্য থাকা । 


    ফ্রান্সে ১৭২৫ - এ প্রত্যক্ষ কর থেকে খাজনা আদায় হয়েছিল ৮৭.৫ মিলিয়ন লিভ্রা । ফলে দেখা যাচ্ছে ফ্রান্সে পরােক্ষ করের আয়া প্রত্যক্ষ থেকে ক্রমেই বেড়ে চলছিল । 


    ( গ ) রাজনৈতিক অবস্থা 

    পুরাতন ব্যবস্থায় ফ্রান্সের রাজতন্ত্র স্বৈরতান্ত্রিক রূপ ধারণ করে । রাজতন্ত্র ধর্মযাজক ও অভিজাত সম্প্রদায়কে হাতে রেখে দেশের শতকরা ৯৬ জন মানুষকে নির্মমভাবে শশাষণ করতে থাকে । ধর্ম যাজকরা রাজাকে দেবতার প্রতিনিধি বলে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুযােগ - সুবিধা লাভ করত । এর ফলে রাজার একচ্ছত্র ক্ষমতা রাষ্ট্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় । বিশেষত চতুর্দশ লুই ( ১৬৪৩-১৭১৫ খ্রি . ) রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ফ্রান্সে সুসংগঠিত করতে সক্ষম হন । 

    তিনি ছিলেন চরম স্বৈরাচারী এবং দর্প করে বলতেন , “ আমিই রাষ্ট্র " ( I am the state ) । দেশের আইন প্রণয়ন , প্রশাসন পরিচালনা ও বিচার কার্যে রাজার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয় । সেনাবাহিনীর সর্বময় ক্ষমতা রাজার হাতে থাকায় যুদ্ধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা রাজার ইচ্ছা - অনিচ্ছার বিষয় হয়ে পড়ে । পনেরতম লুই ( ১৭১৫-১৭৭৪ খ্রি . ) এবং ষােড়শ লুই ( ১৭৭৪-১৭৮৯ খ্রি . ) ফ্রান্সের রাজতন্ত্রকে আরাে নিরঙ্কুশ করার ধারা অব্যাহত রাখেন । তবে ষােড়শ লুই শেষ দিকে ফরাসি রাজতন্ত্রে গভীর আর্থ - সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হতে থাকে । 


    রাজতন্ত্রের সীমাহীন ক্ষমতার কারণেই ১৬১৪ সাল থেকে ফ্রান্সের স্টেটস - জেনারেল নামক সর্বোচ্চ প্রতিনিধি পরিষদ অকার্যকর হয়েছিল । মাঝে মাঝে ধনীদের নিয়ে রাজাগণ বসতেন , সভা করতেন । অধিকাংশ প্রদেশেই স্থানীয় প্রতিনিধিদের তেমন কোনাে গুরুত্ব দেওয়া হতাে না । প্যারির পার্লামেন্ট এবং রাজকীয় বিচারালয়গুলাে স্বৈরাচারী ব্যবস্থার কারণে কোনাে স্বাধীন মতামত প্রদান করতে পারত না । রাজার হাতে কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা ন্যস্ত থাকায় দেশের স্থানীয় শাসন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে পড়ে । কেন্দ্রীয় শাসনে 

    ( ১ ) রাজ পরিষদ , এবং 

    ( ২ ) ছয় জনের একটি মন্ত্রিসভা কার্যকর ছিল । সর্বত্রই ব্যক্তিস্বার্থ , স্বেচ্ছাচার , দুর্নীতি ও অমিতব্যয়িতার বিস্তার ঘটার ফলে পুরাতন ব্যবস্থা মানুষের কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে । ফ্রান্সে অর্থনৈতিক সংকট তীব্রতর হতে থাকে । ১৭৭০ - এর পর থেকে এই অবনতি আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। 

    জাতীয় ঋণ ১৭৭৪ - এ দেড় বিলিয়ন থেকে ১৭৮৮ - এ সাড়ে চার বিলিয়ন লিভ্রায় উন্নীত হয় । ১৭৭৪ সালে বাজেট ঘাটতি ছিল ২৮ মিলিয়ন লিভ্রা , ১৭৮৮ সালে তা বেড়ে ১২৬ মিলিয়ন লিভ্রায় দাঁড়ায় ( ব্যয় ছিল ৬২৯ মিলিয়ন লিভ্রা , আয় ছিল ৫০৩ মিলিয়ন লিভ্রা ) । রাজ পরিবারের ব্যয়ও বেড়ে যায় । রাজার জন্য ছিল ১৮৫৭ টি ঘােড়া , ১৪০০ জন চাকর - চাকরানি । বিভিন্ন প্রদেশে আরও ১২০০ টি ঘােড়া রাজার শিকারের জন্য প্রস্তুত রাখা হতাে । রাজার মৃগয়া গমনের জানা ছিল ২১৭ টি গাড়ির বহর । বােলতম লুইয়ের স্ত্রী রাণি মরিয়া আতোয়াত প্রায়ই নতুন নতুন প্রাসাদ তৈরির বায়না ধরতেন ।


    এদিকে ১৭৮৮ সালে ফ্রান্সে ব্যাপক শস্যহানি ঘটে । প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ফ্রান্সের সাধারণ মানুষ গভীর অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত হয় । কৃষি উৎপাদন হ্রাস পায় , পশুর মড়ক লেগে কৃষকের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যায় । শহরগুলােতে কাজের সন্ধানে বেকারদের ভিড় জমতে থাকে । ১৭৮৮ - এর তুলনায় ১৭৮৯ - তে বিক্ষোভ পাঁচ গুণ বেড়ে যায় । এসব বিদ্রোহ নির্মমভাবে দমন করা হয় । ফ্রান্স কার্যতই একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের মুখােমুখি এসে দাঁড়ায় । পরিবর্তনের বস্তুগত সকল উপাদানই তখন সমাজ ও রাষ্ট্রে তৈরি হয়েছিল । এর সাথে বিপ্লবের জন্য যে ব্যাপক চেতনাগত প্রস্তুতির দরকার তাও ফ্রান্সে তৈরি হয়েছিল । ফ্রান্সের দার্শনিক , কবি সাহিত্যিকসহ বুদ্ধিজীবী সমাজ পরিবর্তন তথা বিপ্লবের নতুন চেতনা তৈরিতে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা রাখেন ।


    বিপ্লবের ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনা


    বিপ্লবের ঘটনাপ্রবাহ

    অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য রাজার প্রয়ােজন হয়ে পড়ে বিপুল পরিমাণ অর্থের । সেই অর্থ পেতে হলে । কর ধার্য করা ব্যতীত রাজার কাছে অন্য কোনাে পথ খােলা ছিল না । অর্থ সচিব নেকার রাজাকে স্টেটস - জেনারেলের অধিবেশন ডেকে কর আদায়ের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন । সুযােগ বুঝে তৃতীয় সম্প্রদায় তাদের সদস্য সংখ্যা যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে সমান করার দাবি জানালে ১৭৮৮ - এর ডিসেম্বরে রাজা তা মেনে নিতে বাধ্য হন । 


    ১৭৮৯ - এর ৫ মে স্টেটস - জেনারেলের অধিবেশন ডাকা হয় । ১৭৫ বছর পর ফ্রান্সে এই সংসদ ভার্সাই নগরীতে নতুন করে শুরু করার ঘােষণা দেয়া হয় । এতে যাজক সম্প্রদায়ের ৩০০ , অভিজাতদের ৩০০ এবং তৃতীয় সম্প্রদায়ের একা ৬০০ প্রতিনিধি থাকার বিধান স্বীকৃত হয় । এপ্রিলের শেষ দিকে স্টেটস - জেনারেলের নির্বাচনে যাজকদের জন্য নির্ধারিত ৩০০ জনের মধ্যে ২৯১ জন , অভিজাতদের ৩০০ জনের মধ্যে ২৭০ জন এবং তৃতীয় সম্প্রদায়ের ৬০০ জনের মধ্যে ৫৭৮ জন সদস্য নির্বাচিত হলে মােট ১১৩৯ জন সদস্য উক্ত অধিবেশনে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয় । মৃত্যুবরণ , দাঙ্গাহাঙ্গামা ও অন্যান্য কারণে বাকি ৬১ টি আসনের প্রতিনিধি উক্ত সময়ে নির্বাচিত হতে পারেননি । রাজা এবং অর্থসচিব নেকার উভয়েই স্টেটস - জেনারেলের কাছে কর আদায়ের প্রস্তাব রাখেন । 


    সংসদে তৃতীয় সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও রাজা শুধু ধর্ম যাজক এবং অভিজাত প্রতিনিধিদের সাথেই মিলিত হলে তৃতীয় সম্প্রদায় অপমানিত বােধ করেন । ১৭ জুন তাঁরা নিজেদেরকে ‘ সমগ্র জনগণের প্রতিনিধি এবং স্টেটস - জেনারেলকে ‘ জাতীয় সভা ' বলে ঘােষণা করে । এ নিয়ে রাজা এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে বিরােধ বাড়তে থাকে । ২০ জুন প্রতিনিধিরা সভাকক্ষে ঢুকতে না পেরে ‘ টেনিস কোর্টে সমবেত হয়ে একটি শপথ গ্রহণ করেন । উক্ত শপথে বলা ছিল যে , যতদিন টেনিস কোর্ট একটি সংবিধান রচিত না হবে ততদিন তৃতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা একত্রে থাকবে । এ শপথকে টেনিস কোর্টের শপথ ” বলা হয়ে থাকে । ইতােমধ্যে যাজক ও অভিজাত প্রতিনিধিদের একটি অংশ নৈতিকভাবে তৃতীয় সম্প্রদায়ের শপথকে সমর্থন প্রদান করেন । রাজা অবস্থা বেগতিক দেখে কিছু কিছু শর্ত মেনে নিলেও যড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে থাকেন । ১২ জুলাই রাজা অর্থসচিব নেকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন । 


    এতে প্যারিতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় । ইতোমধ্যে প্যারিতে পৌরসভা ( কমিউন ) এবং জাতীয় রক্ষিবাহিনী তথা National Guard তৈরি করা হয় । প্যারির মেয়র নিযুক্ত হলেন বেইলি ( Baily ) এবং রক্ষীবাহিনীর অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হলেন লাফায়েত । রাজা বাধ্য হলেন এসব নিযুক্তি মেনে নিতে । ফলে প্যারির প্রশাসনিক দায়িত্ব বুর্জোয়া তথা তৃতীয় সম্প্রদায়ের হাতে চলে যায় । প্যারিতে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে রাজা বিদেশি সৈন্যবাহিনীর সহায়তায় প্যারির ওপর নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করতে যাচ্ছেন । ১৪ জুলাই তাই উত্তেজিত জনতা সকাল বেলা বাস্তিল দুর্গ অভিমুখে যাত্রা করে । শহরের কতগুলাে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখলের সশস্ত্রভাবে জন বাস্তিল দুর্গ চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে । বিকেল চারটায় বাস্তিল দুর্গের পতন হয় । রাজাকে প্যারি এ 0 0 . বাস্তিল দুর্গ । ঘটনাবলি এবং বাস্তিল দুর্গ বিপ্লবীদের হস্তগত হওয়ার সংবাদ অবগত করা হলে তিনি স্বগত উচ্চারণ করেন “ এটা বােধ হয় হাঙ্গামা " । 


    পাশেই দণ্ডায়মান সভাসদ বললেন , " Mais , C'est une revolt ! Non . Sire , Cest une evolution ” “ না , রাজা মহাশয় , এ বিদ্রোহ নয় , মহাশয় এ হচ্ছে বিপ্লব । ”

     

    প্রকৃতপক্ষে , ফ্রান্সে বাস্তিল দুর্গ পতনের পর থেকে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল , তা দ্রুতই সমাজ , রাজনীতি , অর্থনীতি , ধর্ম , শিক্ষা - সংস্কৃতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে শুরু করে । ফ্রান্সে ৪ আগস্টের 


    ‘ কৃষি বিপ্লবের পর থেকে সামন্ত ব্যবস্থার জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ সাধন , ২৬ আগস্ট ১৭৮১৯ - এ গৃহীত মানবাধিকার ঘােষণাপত্র ( Declaration of the Rights of Man and of the citizen ) - এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান এবং ১৭৮৯ থেকে ১৭৯১ পর্যন্ত সময় জাতীয় সংবিধান পরিষদের কার্যাবলি রাজতন্ত্রের একচ্ছত্র কর্তৃত্বকে দুর্বল করতে থাকে । ফ্রান্স এভাবেই বিপ্লবের এক নতুন পথ রচনা করে । ১৭৮৯ থেকে ১৭৯৫ সাল পর্যন্ত সময়ে ফরাসি বিপ্লব যেসব কার্য সাধন ও বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে চলছিল নি । তা সংক্ষেপে আলােচনা করা হলাে। 


    ফরাসি বিপ্লবের ফলাফল মূল্যায়ন


    ফরাসি বিপ্লবের ফলাফল 

    ফরাসি বিপ্লব ফ্রান্সের সমাজ ব্যবস্থা , রাষ্ট্র পরিচালনা , শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করে । বিপ্লবের আগে ফ্রান্স ছিল একটি সামন্ততান্ত্রিক দেশ । বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তা পুঁজিবাদী ধারায় বিকশিত হতে থাকে । ফ্রান্সে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র , অভিজাততন্ত্র ও ধর্মযাজকগােষ্ঠীর প্রভাব দুর্বল হতে থাকে । ফ্রান্স কার্যত একটি বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হওয়ার সুযােগ লাভ করে বিপ্লবের মাধ্যমে । ফরাসি বিপ্লব ফ্রান্সের জন্য সংবিধান প্রণয়ন করেছে , বিভিন্ন নামে ফ্রান্সে জাতীয় সংসদ গঠন করেছে , ফ্রান্সকে প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় ক্ষেত্রে বেশ কিছু সংস্কারের মাধ্যমে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে অবদান রেখেছে । এই বিপ্লব ফরাসি জাতির মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার সঞ্চার করেছে । 


    ফ্রান্সে রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটার সুযােগও এ বিপ্লবের ফলে শুরু হয় । জিবভিন , জ্যাকোবিনসহ বিভিন্ন গােষ্ঠী ফ্রান্সে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে । ফরাসি বিপ্লব ফরাসি বিপ্লব শুধু ফ্রান্সের সমাজকেই নয় , গােটা ইউরােপকেও আলােড়িত করেছিল । গণতন্ত্র , যুক্তিবাদ , ব্যক্তি স্বাধীনতা , সাম্য , শােষণমুক্তি , নাগরিক অধিকার ইত্যাদি ধারণা ফরাসি বিপ্লব পরবর্তী ইউরােপের রাষ্ট্রসমূহে বিস্তার লাভ করে । তাই ১৭৮৯ সালের বিপ্লবকে আধুনিক ইউরােপের নতুন পর্ব হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে । 


    ফরাসি বিপ্লব রাতারাতি সব পরিবর্তন নিয়ে আসে নি । অনেক ভুল - ভ্রান্তি ও বিচ্যুতির পরও ফ্রান্সের জনগণ বিপ্লবের আদর্শকে ত্যাগ করেনি । বিপ্লবের পথে ফ্রান্সে অনেক রক্ত ঝরেছে , দুঃখজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে , বিপ্লবকে ধ্বংস করার চেষ্টাও হয়েছে , প্রতিবিপ্লবী শক্তি ফ্রান্সের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে । ফ্রান্সের জনগণ তারপরও বিপ্লবের আদর্শের কাছে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে ১৮৩০ ও ১৮৪৮ সালে পর পর দুটি বিপ্লব সংঘটিত করেছে । 


    ১৮৭১ সালে প্যারি কমিউন গঠিত হয়েছে ফরাসি বিপ্লবের চেতনা থেকে । ফ্রান্স বিপ্লবের আদর্শকে ত্যাগ করেনি , বরং এর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বার বার বিপ্লব সংঘটিত করেছে । ফরাসি সমাজ বিপ্লবের আদর্শকে এখনও ত্যাগ করেনি । ফ্রান্সে । এখনও বিপ্লবের সকল নায়ক , নেতা - কর্মীকে শ্রদ্ধা করা হয় । ফ্রান্সের অনেক রাস্তাঘাট ও প্রতিষ্ঠানের নামকরণ হয়েছে বিপ্লবীদের নামে । ফ্রান্সের তদনা নিত কিনােলগল করাসি বিপ্লবের সৈনিকদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে , তাঁদের ছবি বহন করে । ফচবাসি জাতি প্রতি বছরই ১৪ জুলাইকে তাদের প্রধান জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করে থাকে । এর মাধ্যমে ফরাসি বিপ্লবের চেতনায় তারা উজ্জীবিত হওয়ার শপথ নতুন করে গ্রহণ করে থাকে । 


    ফরাসি বিপ্লব এভাবেই ফরাসি জাতির কাছে মহান এক ঐতিহাসিক কালপর্ব হিসেবে সমাদৃত হয়েছে পৃথিবীর সব দেশেই ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাস অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পঠিত হয় । এই বিপ্লবের ইতিহাস পাঠে ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলিত হয় , নিজ নিজ দেশের বিপ্লব , মুক্তিযুদ্ধ ও সংগ্রামের সাথে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করে । ফরাসি বিপ্লবের দেশীয় ও আন্তজার্তিক তাৎপর্য এখানেই নিহিত রয়েছে ।


    নেপোলিয়ন বোনাপার্টের গণমূখী সংস্কারসমূহ ব্যাখ্যা


    নেপােলিয়ন বােনাপার্টের সংস্কার 

    ফরাসি দেশকে আধুনিক চরিত্র দানের জন্যে নেপােলিয়ন বােনাপার্ট প্রশাসন , আইন , বিচার , ধর্ম , শিক্ষা , অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সংস্কার সাধন করেন । পুরাতন ঘুণেধরা সমাজ ব্যবস্থাকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানাের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে নেপােলিয়ন ফরাসি বিপ্লবের সত্যিকার সাফল্য আনয়ন করেছেন । ফরাসি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি , শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় । নেপােলিয়ন বােনাপার্টের সূচিত উল্লেখযােগ্য সংস্কারসমূহ এখন আলােচিত হচ্ছে । 


    ১। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ 

    ১৭৮৯ সালে বিপ্লবের পর ফরাসি দেশে প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ শুরু করা হয় । এর ফলে জেলা ও প্রদেশের সঙ্গে কেন্দ্রের সম্পর্ক শিথিল হয়ে পড়ে । নেপােলিয়ন বােনাপার্ট কেন্দ্রীয়ভাবে প্রদেশ ও জেলায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রশাসকদের নিয়ােগ প্রদানসহ গােটা প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন । আগে এই শাসনকতাগণ স্থানীয় ভােটে নির্বাচিত হতেন । নেপােলিয়ন নির্বাচনের পরিবর্তে মনােনয়নকে প্রাধান্য দেন । প্রদেশগুলাের যাবতীয় ক্ষমতা প্রিফেক্টদের হাতে রাখেন । তাদের নিয়ােগের ক্ষেত্রে যােগ্যতাই একমাত্র শর্ত ছিল । তাদের অধীন উপ - প্রিফেক্টগণ কাজ করতেন । সকল শ্রেণির প্রশাসক ও সরকারি কর্মকর্তাকে কনস্যাল হিসেবে তিনিই নিয়ােগ দিতেন । এ সব তিনি সম্পন্ন করতেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় পরিষদ তথা Council of State -এর মাধ্যমে । উক্ত পরিষদের সদস্যদের তিনি মনােনীত করতেন । নতুন যে কোনাে আইনের উৎস হিসেবে এবং প্রশাসনিক বিচারালয়রূপে এ পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল । নেপােলিয়ন ফ্রান্সের কৌলিন্য প্রথা উচ্ছেদ করে গুণী ও যােগ্য কর্মচারীদের পুরস্কৃত করার জন্য মর্যাদাসূচক ‘ লিজিয়ন অব অনার ' ( Legion of Honour ) নামে একটি রাষ্ট্রীয় পদকের প্রবর্তন করেন । 


    ২। অর্থনৈতিক সংস্কার 

    ফ্রান্সের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সামন্ততান্ত্রিক ছিল । ফলে ফ্রান্স আর্থিক ও রাজস্ব সংকটে জর্জরিত ছিল । বিপ্লবের পর বিক্ষিপ্ত - বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু সংস্কার আনা হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংকটের কারণে ফ্রান্স আর্থিকভাবে দ্রুত উন্নতি লাভ করতে পারছিল না । নেপােলিয়ন বােনাপার্ট ১৭৯৯ সালে প্রথম কনস্যালের দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্থিক ব্যবস্থাকে একেবারে ঢেলে সাজান । ১৮০০ সালে তিনি Bank of France প্রতিষ্ঠা করেন । সরকারি ঋণ ও কর আদায়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংকটি ফ্রান্সে আধুনিক অর্থ ব্যবস্থার সূচনা করে । ব্যাংকটি ১৮০৩ সালে ব্যাংক নো , প্রবর্তনের অধিকার পায় । ফরাসি মুদ্রা ফ্রাঁর স্থায়িত্ব বিধান করা হয় । নেপােলিয়ন নিজের নামে স্বর্ণের ধাতব । প্রচলন করেন । নেপােলিয়ন অর্থ - দপ্তরকে রাজস্ব ও অডিট বিভাগে বিভক্ত করেন । প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ করের মধ্যে ভারসাম্য বজ রাখার জন্যে নতুন রাজস্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় । একই সঙ্গে জনসাধারণের আর্থিক ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কর ব্যবস্থা চালু করা হয় । নেপােলিয়ন নতুন কর ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে নতুন কর্মচারী নিয়ােগের ব্যবস্থা করেন নেপােলিয়নের প্রবর্তিত অর্থনৈতিক নীতিমালা ফ্রান্সের অর্থনৈতিক গতিবেগ সৃষ্টি করে , কৃষি ও শিল্পে উন্নতি ছ ব্যবসা - বাণিজ্যে স্থবিরতা কাটতে শুরু করে । তবে ব্যাপকভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে ফ্রান্সের অর্থনীতিকে দুর্বল করে ফেলে নেপােলিয়ন বােনাপার্ট নিজেই । ফলে ফ্রান্স সাসী গভীর সংকটে পড়ে । সেই সংকটের তােড়ে তিনিও ক্ষমতড়া হন । 


    ৩। আইন সংস্কার 

    নেপােলিয়ন নিজেই বলেছেন , “ আমার যে কাজটি চিরস্থায়ী হবে তা হলাে আইন সংহিতা ” । ফ্রান্সে আগে তেমন কোনাে বিধিবদ্ধ আইন ছিল না । নেপােলিয়ন অত্যন্ত জটিল এবং দুরূহ এই কাজটি সম্পন্ন করেছেন । বিপ্লয়ে অন্যতম আদর্শ সামাজিক সাম্যের প্রতি দৃষ্টি রেখে আধুনিক ফরাসি সমাজ গঠনের লক্ষ্যে আইন পরিমার্জন ও প্রণয় করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে । নেপােলিয়ন বােনাপার্ট দেশের আইনজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেন । আইনজ্ঞ কমিটি রােমান আইনসহ ফরাসি সমাজের বাস্তবতা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে যে আইনের দলিল রচনা করেন ই পরবর্তী সময়ে ‘ কোড অব নেপােলিয়ন বা নেপােলিয়নীয় সংহিতা নামে পরিচিতি পায় । এতে দেওয়ানি , ফৌজদা । এবং বাণিজ্যিক মিলিয়ে মােট ২,২৮৭ টি আইনের ধারা স্থান পায় । এ আইনকে অনেকে ফরাসি সমাজের নতু বাইবেল তথা দিক নির্দেশনা হিসেবে গণ্য করেন । তবে এই সংহিতায় যেমন আধুনিক আইনের অধিকারের স্বীকৃ মেলে , তেমনি এতে পুরাতন সামন্ত ফরাসি সমাজের অগণতান্ত্রিক নিয়ম - কানুনেরও উপস্থিতি ছিল । 

    গণতান্ত্রিক চরিত্রের কতিপয় ধারা নিম্নরূপ : 

    ক . আইনের চোখে সকল নাগরিকের সমানাধিকার নিশ্চিত করা , 

    খ , সামাজিক সাম্য স্থাপন করা , 

    গ , একমাত্র যােগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে নিয়ােগ দেওয়া , 

    ঘ , সামন্ততন্ত্র বিলােপ করে নতুন ভূমি ব্যবস্থা চালু করা , 

    ঙ . ফৌজদারি আইন , বিধি , যুক্তিবাদ ও প্রাকৃতিক আইনের আলােকে সমন্বয় করা , 

    চ , বিচারের ক্ষেত্রে জুরি প্রথা চালু করা , 

    ছ , রাজনৈতিক অপরাধীদের সাধারণ অপরাধী থেকে আলাদা মর্যাদা দেওয়া । 

    মূলত ব্যক্তি স্বাধীনতা , আইনের দৃষ্টিতে সমতা , রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র , বিবেকের স্বাধীনতা , ধর্মীয় স্বাধীনতা , নেওয়ার অধিকার ইত্যাদি স্বীকৃত হয় । শুধু ফ্রান্সের জন্যই নয় , ইউরােপের দেশ ও জাতিসমূহকেও আন্দোলিত করে । ফ্রান্সের শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্ব অনেক দেশই সে কারণে মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল । পনি আজ শাখা এই সন্ধিতে কান পেয়েগিল । যেমন : 

    ১. পুরুষ ও নারীর সমঅধিকার সংহিতায় মেনে নেওয়া হয় নি , 

    ২. নারীদের সম্পত্তির অধিকার স্বীকার করা হয় নি , 

    ৩. স্ত্রী , সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের ওপর পিতার কর্তৃত্ব ছিল , 

    ৪. মালিক ও শ্রমিকের স্বার্থ সমানভাবে গুরুত্ব না দেওয়া , এ ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে যে কোনাে বিরােধে মালিকের স্বার্থই বিবেচনায় নেওয়ার বিধান রাখা হয় । এসব সীমাবদ্ধতার পরও নেপােলিয়নের সংহিতার প্রতি কৃষক এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির ব্যাপক সমর্থন ছিল । 


    ৪। শিক্ষা সংস্কার 

    নেপােলিয়ন বােনাপার্ট সমগ্র ফরাসি জাতিকে শিক্ষিত করার গুরুত্ব বিশেষভাবে উপলব্ধি করেছিলেন । সে কারণে তিনি জাতীয়ভাবে শিক্ষা সংস্কারে হাত দেন । প্রতিটি প্রিফেক্ট অথবা সাব - প্রিফেক্টের অধীন একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন , মাধ্যমিক ও গ্রামার স্কুলগুলােতে ভাষা শিক্ষা , শহরে লিসে ( Lycee ) তথা সরকারি আদর্শ বিদ্যালয় স্থাপন উল্লেখযােগ্য উদ্যোগ ছিল । লিসেগুলাে আধা সামরিক ছিল । নেপােলিয়নের পৃষ্ঠপােষকতায় ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে ‘ University of France ' প্রতিষ্ঠিত হয় । বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন বিভাগ চালু করা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রায়ােগিক বিদ্যার প্রসারে মনােযােগ দেওয়া হয় । 


    ৫। বাণিজ্য আইন 

    ফ্রান্সে ব্যবসা - বাণিজ্যের প্রসারে বাণিজ্য সংক্রান্ত বিরােধ দূরীকরণের লক্ষ্যে বাণিজ্য আদালত স্থাপন ও বিধিবদ্ধ আইন প্রচলন করা হয় । 


    ৬। ধর্ম সংস্কার 

    ফ্রান্সে বিপ্লবের পর গিজার সঙ্গে রাষ্ট্রের একটি বিরােধ চলে আসছিল । নেপােলিয়ন পােপের দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই বিরােধ নিষ্পন্ন করেন । এটিকে ইহিহাসে মীমাংসা নীতি বলা হয় । ১৮০১ সালে উভয়ের মধ্যে স্থির হয় যে , ফরাসি গিজার যাজকগণ রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ােগ প্রাপ্ত হবেন এবং পােপ তা অনুমোেদন করবেন , ধর্মযাজকগণ রাষ্ট্রের কাছ থেকে বেতন ভাতাদি পাবেন ।


    এইচএসসি এসাইনমেন্ট ২০২১ উত্তর /সমাধান ইতিহাস ২য় পত্র (এসাইনমেন্ট ১)



    Tag: এইচএসসি এসাইনমেন্ট ২০২১ উত্তর /সমাধান ইতিহাস ২য় পত্র (এসাইনমেন্ট ১),  ২০২১ সালের এইচএসসি ইতিহাস এসাইনমেন্ট সমাধান (২য় পত্র)
                                   
    Previous Post Next Post


    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com

     



    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com

    (সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Facebook এবং Telegram পেজ)