একটি পূর্ণিমা রাত রচনা - একটি পূর্ণিমা রাত | Akti Purnima Rat

একটি পূর্ণিমা রাত রচনা - একটি পূর্ণিমা রাত, Akti Purnima Rat, একটি পূর্ণিমা রাতের গুরুত্ব,  একটি পূর্ণিমা রাত অনুচ্ছেদ রচনা, রচনা - একটি পূর্ণিমা রাত

    একটি পূর্ণিমা রাত রচনা

    ভূমিকা : একটি রাতের অদ্ভুত সৌন্দর্যকে যদি বর্ণনা করতে যাই তাহলে প্রথমেই মনে আসে পূর্ণিমা রাতের কথা । পূর্ণিমা রাতে পৃথিবীর জলে - স্থলে নেমে আসে সুন্দরের দেবতা । মানুষের মনকে চন্দ্রগ্রস্ত করে দিয়ে এক মায়াময় মােহ রচনা করে রাতের চাঁদ । না আলাে না আঁধার এমন এক রহস্যের মায়াজালে মানবমনকে বন্দি করতে পারে কেবল চাঁদনি রাত । চাঁদনি রাত এদেশের বিভিন্ন ঋতুতে রচনা করে নানা রূপের মায়াজাল । শরতে , হেমন্তে , শীত - বসন্তে নব নব রূপে জ্যোৎস্না আসে আমাদের প্রকৃতিতে । 

    একটি পূর্ণিমা রাতের বর্ণনা : শরতের মাঝামাঝি । শারদীয় অবকাশে তখন আমি গ্রামের বাড়িতে । বাড়ির পশ্চিমে জোড়া পুকুর । পুকুরের পাড় ধরেই বিস্তীর্ণ ঝিল । পূর্ণিমা রাত । ঘরে মন বেঁধে রাখা দায় । মনের অজান্তেই হাঁটি হাঁটি করে সেই পুকুর পাড়ে চলে আসি । এক অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি আমি । মৃদু হাওয়ায় । কাঁপছে পুকুরের জল আর ওপরে খেলা করছে চাঁদের আলাে । বর্ষার জোয়ারের জল কমতে কমতে গাঙের নিকটবর্তী প্রায় । তবুও চাদের আলােয় চিকচিক করে দূর থেকেই সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে ঝিলের জল । পুকুর পাড়ে সারিবদ্ধ খেজুর গাছ । এক পাশে বাতাবি লেবুর ঝােপ । বাঁশ বনে মৃদু বাতাসে পাতার খসখস শব্দ , দু একটি বকের ডানা ঝাপটানোের আওয়াজ । 

    কাশফুল ফুটে সাদা হয়ে থাকা পুকুরপাড় । সমস্ত কিছুর ওপর আজ চাঁদ যেন ঔদার্যের মহিমা প্রকাশ করতে ব্যস্ত । যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই যেন চাঁদ কোলাকুলি করছে মাটির বসুধায় । চাঁদ তার তাপহীন কোমল আলােয় স্নান করিয়ে দিচ্ছে আমাকে , আমার চারপাশকে । জ্যোৎস্না ছড়িয়ে পড়েছে ঝিলের জলে , কাশফুলে । একটা সুন্দর মায়াপুরীতে যেন আমি দিকভ্রমের শিকার । মনে বেজে উঠছে কবিগুরুর কবিতার চরণ – ‘ চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে উছলে পড়ে আলাে । ও রজনীগন্ধা , তােমার গন্ধসুধা ঢালাে পাগল হাওয়া বুঝতে নারে ডাক পড়েছে কোথায় তারে ফুলের বনে যার পাশে যাই তারেই লাগে ভালাে । ধরা যায় না , ছোঁয়া যায় না অথচ অন্তরে কোন মাধুর্যের ছোঁয়ায় যেন পুলকিত হয়ে আছি । 

    আমি চেয়ে আছি , পুলক শিহরণ ক্ষণে ক্ষণে রােমাঞ্চিত হচ্ছি । এত রূপ , এত বৈচিত্র্য , এমন গম্ভীর মুরতি , ক্লিথ সজল সুহাসিনী রাত আর কখনাে আমি প্রত্যক্ষ করিনি । আমি ডুবে আছি একরাশ জ্যোৎস্নার জলে।এ চাদনি রাত আমার মনে এনে দিল নানা ভাবনা , নানা অনুভূতি । সত্যিই চাঁদনি রাতের মায়াময় কুহকে কে পড়ে ! কত গীতিকার জ্যোস্না রাতের রূপে বিমুগ্ধ হয়ে তার গানে তুলে ধরেছেন জ্যোৎস্নার আবেদনকে । পৃথিবীর কত কত কবিতায় যে পূর্ণিমাকে উপমা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে এর কোনাে সঠিক পরিসংখ্যান নেই । 

    প্রতিবাদী কবি , বিদ্রোহী কবি সকল কবির কাব্য তেজস্বিতাই চাঁদের হাটে অনেক বেশি কোমল । বরং বিদ্রোহী কবির বিদ্রোহ পূর্ণিমা রাতে রূপান্তরিত হয় রােমান্টিকতায় । চিত্রশিল্পীর চিত্রপটে পূর্ণিমা রাত ধরা পড়ে এক অপরূপ সৌন্দর্যে । এ জোৎস্না রাতে চোখে পড়ল গ্রাম ও শহর জীবনের পূর্ণিমা রাতের পার্থক্য । গ্রামীণ জীবনে ও নাগরিক জীবনে পূর্ণিমা রাতের সৌন্দর্য উপভােগে তারতম্য ঘটে । নগর জীবনে মানুষ বড় বেশি ব্যস্ত । এখানে তীব্র বেগে ধেয়ে চলে মানুষের জীবনপ্রবাহ । 

    বৈদ্যুতিক বাতির ঝলকানিতে নানা রং - বেরঙের আলােয় আলােকিত হয়ে থাকে চারপাশ । তাই ব্যস্ত জীবনে এ আলাের ফাক দিয়ে ছাদে গিয়ে কেউ জ্যোৎস্নাযাপন করবে এমন সুযােগও খুব একটা মেলে না । তাই পূর্ণিমা রাত শহুরে জীবনে খুব বেশি আবেদন সৃষ্টি করতে পারে না । অন্যদিকে , উল্টোটি হচ্ছে গ্রামীণ জনপদে । পূর্ণিমা সেখানে সর্বব্যাপী । পূর্ণিমার আলােয় উঠোনে বসে দাদি - নানিরা শিশু কিশােরদের সুয়ােদুয়াে রানির কিচ্ছা শুনাচ্ছে । সত্যিই যেন চাঁদের হাট বসিয়েছেন তারা । পূর্ণিমার আলােয় পালাগান আর পুঁথিপড়া শুনতে শুনতে মন নেচে ওঠে বিপুল আনন্দে । 

    পূর্ণিমা রাতে প্রকৃতি যেন হেসে উঠেছিল চন্দ্রকিরণের নরম স্পর্শে । আলাে আর আঁধারের মিলন মায়ায় চাঁদনি রাতকে করেছিল অপরূপ । জ্যোস্না রাতের এ আলাে যেন পূর্ণ আলাে ছিল না । এ আলাে শুধু প্রকৃতিকে তীব্র অন্ধকার থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল । খুব বেশি দূরের কিছুই দেখা যাচ্ছিল না । তবুও যা স্পষ্ট কিংবা অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল তাতেও মন রােমাঞ্চিত হয়ে উঠেছিল । দূরের কাশবনকে মনে হয়েছিল যেন ঘােমটা টানা বধ । আলােক উদ্ভাসিত জ্যোস্নাশােভিত এ পূর্ণিমা রাতের কথা কখনাে বিস্মৃত হবার নয় । আমার অস্তিত্বে জাগ্রত সে রাত আমার জীবনকে যে আনন্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল সে আনন্দ আমার জীবনে অক্ষয় হয়ে থাক । 

    শরতের রাতের পূর্ণিমা - ছড়িয়ে পড়েছিল মাঠের বুকে , নদীর জলে , বাঁশ বাগানের মাথার ওপর । চাদ আর আমি যেন গ্রাম্য মেঠো পথ ধরে হেটে চলেছিলাম এখানে সেখানে আমার চৈতন্যে সেই পূর্ণিমা রাত এখনও অমলিন । আমার জীবনের কোনাে আনন্দের কাছে যদি ফিরে যেতে চাই তাহলে আমাকে ফিরতে হয় সেই পূর্ণিমা রাতের । কাছে । যে রাতে আমি চন্দ্রগ্রস্ত হয়ে এক অপরূপ রূপের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম । আমার চৈতন্যে এখনও মাঝে । মাঝে নাড়া দিয়ে ওঠে একটি শরৎ রজনী , একটি পূর্ণিমা রাত , একটি অফুরন্ত সুখের অনুভূতি ।

    একটি পূর্ণিমা রাতের গুরুত্ব 


    Akti Purnima Rat 


    Tag: একটি পূর্ণিমা রাত রচনা - একটি পূর্ণিমা রাত, Akti Purnima Rat, একটি পূর্ণিমা রাতের গুরুত্ব,  একটি পূর্ণিমা রাত অনুচ্ছেদ রচনা, রচনা - একটি পূর্ণিমা রাত

                                   
    Previous Post Next Post


    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com



    Any business enquiry contact us

    Email:- Educationblog24.com@gmail.com

    (সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Facebook এবং Telegram পেজ)